আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

লাঙ্গল হটাতে নৌকার প্রার্থী চায় আ’লীগ


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৩ ১:৩৬ অপরাহ্ণ লাঙ্গল হটাতে নৌকার প্রার্থী চায় আ’লীগ
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ছিলেন এইচএম এরশাদের শাসনমালে মন্ত্রী। তখন নির্বাচনী এলাকা বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নব্বইর গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ক্ষমতার আধিপত্যের সঙ্গে ভোটারদের আস্থাও হারিয়েছেন।

এরশাদের পতনের পর বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে এককভাবে তিনবার নির্বাচন করে একবারও জয় পাননি রুহুল আমিন হাওলাদার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই আসনটির হাতবদল হয়। এর পর মহাজোটের ওপর ভর করে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার পালাক্রমে তিনি ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না আমিন এমপি হয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এবার লাঙ্গল হটাতে নৌকার প্রার্থী চান তারা।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর দাবি, স্বাধীনতা-পরবর্তী গ্রহণযোগ্য সব সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে বরিশাল-৬ আওয়ামী লীগের নিরাপদ আসন। এখানে লাঙ্গলের ভোট তলানিতে। শুধু দলের হেভিওয়েট নেতার তকমা নিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছেন রুহুল আমিন। এবার ছাড় দেওয়া হবে না।

বাকেরগঞ্জ পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটি জেলায় সর্ববৃহৎ সংসদীয় আসন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে রুহুল আমিন এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন তাঁর স্ত্রী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না। মহাজোটের হয়ে ২০১৪ সালে রুহুল আমিন পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকী-মীর্জাগঞ্জ) আসনের এমপি হয়েছিলেন। একই আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এর আগেই তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকেরগঞ্জ-৬ আসনে দু’জনের মধ্যে কে প্রার্থী হবেন– জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার সমকালকে বলেন, দল থেকেই এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। মহাজোট নাকি এককভাবে নির্বাচন করবেন– সে প্রসঙ্গেও দল সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিনটি নির্বাচনে হাওলাদার পরিবারকে ছাড় দেওয়া হলেও এবার দলের কাছে নৌকার প্রার্থী চাইবেন তারা। তাদের অভিযোগ, রুহুল আমিন জিয়াউর রহমান ও এরশাদ শাসনমলে এমপি ছিলেন। এর পর ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর এমপি। সব মিলিয়ে হাওলাদার পরিবার থেকে ২৭ বছর বাকেরগঞ্জে এমপি থাকলেও এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এলাকায় লাঙ্গলের ভোট ব্যাংকও নেই।

ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এবং ২০০১-এর নির্বাচনে রুহুল আমিন বরিশাল-৬ আসনে জাপার একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিবার তৃতীয় হন। তিনটি নির্বাচনে তিনি মোট ভোট পেয়েছিলেন ৫৫ হাজার ২৬৭। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে ২০০৮-এর নির্বাচনে তিনি ৮৯ হাজার ৩৩৮ ভোট পেয়ে এমপি হন।

আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরের আসন বলে জানান বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি ফারুক মল্লিক। তিনি সমকালকে বলেন, ’৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছে। ২০০১-এ নৌকা হেরেছে ১৩ হাজার ১৪৬ ভোটে। তখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৬৬৪ ভোট। এ হিসেবে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আগামী নির্বাচনে নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থী চান। যদি শরিকদের ছাড় দিতেই হয়, তাহলে ১৪ দলের জাসদ নেতা মো. মহসীনকে নৌকার প্রার্থী করা হলে তারা মেনে নেবেন।

ফারুক মল্লিকের এ বক্তব্য সমর্থন করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিরুজ্জামান রিপন বলেন, বাকেরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আর লাঙ্গলের পক্ষে ভাড়ায় খাটবেন না।

দুধল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মোর্শেদ বলেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল। জাপার ১০ ভাগ ভোটও নেই। সেই দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে ফল শুভ হবে না।

কবাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাদল বলেন, নৌকার সমর্থন পেয়ে রুহুল আমিন ২০০৮ সালে জীবনের সর্বোচ্চ ভোট পান। এর পর দুইবার তাঁর স্ত্রী এমপি হয়েছেন। কিন্তু দেশে উন্নয়ন হলেও বাকেরগঞ্জবাসী বঞ্চিত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হইছে ৫২ বছর। জিয়া, এরশাদ ও আওয়ামী লীগ শাসনমল মিলিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার ৩০ বছরই এমপি। উন্নয়ন নিয়ে তার ওপর মানুষের প্রচণ্ড ক্ষোভ। তাঁকে আবারও আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়া হলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা যা করবেন তা নিয়ে অজানা আশঙ্কায় আছি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা যা বলেন, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না।’