বার্তা ডেস্ক ॥ চরমোনাই পির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়। পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই এ মাহফিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই মাদ্রাসার মূল মাঠসহ ৬টি মাঠে বুধবার জোহরের নামাজের পর তিন দিনব্যাপী চরমোনাই মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে তিরি এসব কথা বলেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ মাহফিল শেষ হবে।
চরমোনাই পির রেজাউল করীম বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলি হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
চরমোনাই পির ছাড়াও এ মাহফিলে অংশ নিয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী। এছাড়া এ বছর সৌদি আরব ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামরা অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন বলে জানা গেছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে মাহফিলে আগত মুসল্লিদের ১০ হাজার হালকায়ে বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাহফিলে আগত মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হচ্ছে। ৬টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১টি স্পিডবোট মাহফিল হাসপাতালের কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
ছয়টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।
সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের খাবারের জন্য প্রত্যেকটি মাঠের চারিদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, ওজু এবং গোসলের ব্যবস্থাপনা। তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় দিন সারা দেশ থেকে আগত ওলামায়ে কেরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারা দেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজন করে বিশেষ আয়োজন।
এদিকে বুধবার মাহফিলে আসা মুসল্লিদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার বাসিন্দা আজমত শেখ এবং পাবনার মো. নওশের আলীর মৃত্যু হয়েছে।