Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the rocket domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114 রেমাল তাণ্ডবে বিধ্বস্ত বরিশাল, ১৮ জনের মৃত্যু - আজকের বার্তা
বার্তা ডেস্ক ॥ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরিশাল সহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত বরিশাল সহ ৫ জেলায় অন্তত ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রেমালের এ তাণ্ডবে ভোলায় ৩, বরিশালে ৪, পটুয়াখালীতে ৪, পিরোজপুরে ৬ ও বরগুনা জেলায় ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো বরিশালেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। বরিশালে রেমালের তাণ্ডবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নগরের রুপাতলী এলাকায় সোমবার ভোর ৪টার দিকে একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। এ ঘটনায় শাকিব নামে এক হোটেলকর্মী আহত হয়েছেন।
তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ঝোড়ো বাতাসে তিনতলা ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন একটি দেয়াল ধসে পাশের টিনশেড খাবার হোটেলের ওপর পড়ে। ওই হোটেলের মালিকসহ দুই কর্মচারী তখন ঘুমিয়ে ছিল। তারা টিনের চাল ও দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলার চর দাড়িয়ালের বাসিন্দা জালাল সিকদার (৫৫) গাছের ডাল পড়ে মারা গেছেন। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে কীর্তনখোলা নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সদর নৌ-থানার ওসি আব্দুল জলিল। নিহত ২২ বছরের তরুণ মো. জাহাঙ্গীর ঘরামী নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু কলোনীর বাসিন্দা বারেক ঘরামীর ছেলে।
জাহাঙ্গীরের ‘মৃগী রোগ’ ছিল জানিয়ে তার বোন নাজমা বেগম বলেন, জাহাঙ্গীর কীর্তনখোলা নদীতে মাছ ধরত। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সোমবার সকাল ১০টায় সে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ভোলার তিন উপজেলায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম উমেদপুরে ঘর চাপা পড়ে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান পৌরসভার মনির হোসেনের চার বছরের মেয়ে মাইশা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাজড়া ইউনিয়নে গাছের ডাল পড়ে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) মারা গেছেন।
ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ মে) দুপুরের পর কলাপাড়ায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন ও ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। নৌকা না থাকায় সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
এছাড়া দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নলদোয়ানি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা। পটুয়াখালীর বাউফলে রাজনৈতিক অফিসের নিচে চাপা পড়ে করিম খান (৬৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সোমবার টিন সেডের অফিসটি বিধ্বস্ত হলে করিম খান তার নিচে চাপা পড়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধারের পর বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক করিম খানকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার ভোরে ঘুর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে অফিসটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে দশমিনা-বাউফল-ঢাকা সড়কে উপড়ে পড়ে।
তখন ওই পথ ধরে যাচ্ছিলেন ভিক্ষুক করিম খান। এসময় ঘরের নিচে চাপা পড়েন তিনি। দুপুরে এলাকাবাসী অফিসের ভাঙা অংশ অপসারন করতে গিয়ে নীচে করিম খানকে দেখে ডাক চিৎকার শুরু করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, করিম খানের লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এদিকে পটুখালীর গলাচিপায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে রুবেল গোলদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকলে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নলুয়াবাগী গ্রামে এ ঘট্না ঘটে। রুবেল ওই এলাকার নাসির গোলদারের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহিদুল ইসলাম। পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ঘরের উপরে গাছ চাপায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর রাতে উপজেলার বালিপাড়ার উত্তর ঢেপসাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল গফফার এর ছেলে আসাদুজ্জামান বাচ্চু জানান, ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের মৃত আশ্রাব আলী মোল্লার স্ত্রী চানবরু বিবি ওই রাতে ঘরে ছিলেন।
এমন সময় প্রচন্ড বাতাসে বাড়ির উঠানে থাকা চাম্বল গাছ ঘরের উপরে পড়লে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এসময় ঘরে থাকা চানবরু বিবি (৬৫) চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। চারদিক পানিতে তলিয়ে থাকায় সোমবার তাকে দাফন করতে পারে নাই তাঁর স্বজনরা। মঙ্গলবার সকালে পানি একটু কমলে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এছাড়াও পিরোজপুর সদর উপজেলায় একজন এবং ভান্ডারিয়া উপজেলায় পানিতে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে মঠবাড়িয়ায় ২৬ মে সকালে পৌর শহরের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে এক ভবঘুড়ে (৬৫) ব্যাক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকলের ধারণা বৃস্টিতে ভেজায় ও ঠান্ডার কারণে ওই ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে। ভবঘুরে ব্যক্তির কোনো ওয়ারিশ কিংবা স্বজন না থাকার কারণে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মো. সগীর হোসেনকে দাফনের দ্বায়িত্ব দেন বলে এ কাউন্সিলর নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ঘরের উপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের মৃত খুতি বয়াতির ছেলে। প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। গত রোববার বিকেল নাগাদ ঝড়টির প্রভাব শুরু হয়, আর রাতে ঝড়টির কেন্দ্র উপকূলে আঘাত করা শুরু করে।
এরপর গতিপথে রেমাল ঘরবাড়ি-গাছপালা উপড়ে ফেলে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে দিয়েছে জনপদ। অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন কোটি মানুষ। ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে কয়েক লাখ মানুষ। মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।