আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশালে স্বাস্থ্যসেবায় বড় সহায়ক বেসরকারি না‌র্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: মার্চ ০৩, ২০২৪ ৭:১৪ অপরাহ্ণ বরিশালে স্বাস্থ্যসেবায় বড় সহায়ক বেসরকারি না‌র্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥  স্বাস্থ্যসেবায় বরিশালের বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা নীরবে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হ‌য়ে উঠছে এই জেলার ৮টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলোর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লি‌নিক‌্যাল ট্রেনিং কর‌তে এসে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন অকাতরে। এসব নার্সিং কলেজ থেকে কেবল দেশে নয়, বিদেশেও উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ম‌নে ক‌রছেন, নার্সিং শিক্ষা ক্রমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাময় সেক্টর হি‌সে‌বে গ‌ড়ে উঠছে।

বেসরকারিভাবে না‌র্সিং শিক্ষা যেভা‌বে শুরু
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স দরকার। কিন্তু সে অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্স খুবই কম। ২০১২ সাল থেকে বরিশালে বেসরকারি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে। বর্তমানে জেলাটিতে ৮টি নার্সিং কলেজ রয়েছে।

ক‌লে‌জে ক‌লে‌জে না‌র্সিং শিক্ষার অবদান
বরিশাল শহরের রাজধানী নার্সিং কলেজে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর ম‌ধ্যে ২০০ জন প্রতিদিন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহায়ক সেবা দি‌য়ে আস‌ছেন। এখানকার উপাধ্যক্ষ গীতা রানি কুণ্ড জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ নার্স গড়ে তুলছে। এই শিক্ষা‌কে আন্তর্জাতিক মা‌নের কর‌তে সরকারিভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও সহায়তা দরকার।

নারী উদ্যোক্তা মেহেরুন নেছা বরিশাল ইস্টার্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান। তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১১০ জন। এর মধ্যে ৫৫ জন পালাক্রমে দিন ও রাতে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি না‌র্সিং শিক্ষার্থীরা সহায়তা না দি‌লে স্বাস্থ্যসেবা ব‌্যাহত হ‌তো। বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসেবায় বড় ভূমিকা রাখছেন। তি‌নি জানান, সরকারি কলেজগুলোর নার্সিং শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছেন। সরকারের উচিত বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বৃত্তি দেওয়া। এ কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা ইসলাম, বিধান বৈদ্য জানান, তাঁদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ মানসম্পন্ন। ৬ ঘণ্টা তাঁরা শেবা‌চিম হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের মাধ‌্যমে রোগীদের সেবা দি‌চ্ছেন।

বরিশাল ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। এখানকার ৬০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দৈনিক ৩০০ জন শেবাচিম হাসপাতালে সহায়ক সেবা দিচ্ছেন। এ কলেজের অধ্যক্ষ বাসন্তী রানী জানান, তাঁদের উন্নত ল্যাব, লাইব্রেরি ও দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা সরকারি হাসপাতালে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নেন। ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স শেষে প্রতিষ্ঠানটির ১২ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে সৌদি আরব, দুবাই ও লিবিয়াতে কর্মরত। ৫ জন বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন।

আনার কলি নামে ডিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, এই পেশায় ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প চাকরি করছেন। তবে শিগগির অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছেন চাকরি নিয়ে। এ ক‌লে‌জেরই বিএসসি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজেদা আক্তার ফাইনাল পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তি‌নি জানান, এখানে পড়ালেখা সেরা মা‌নের বিধায় তি‌নি প্রথম স্থান অধিকার ক‌রে‌ছেন।

বরিশাল আনোয়ারা বেগম নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার জানান, তাঁর কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২০০ জন। তাঁরা শেবাচিম হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস করেন সপ্তাহে ৩ দিন। ৪ বছর মেয়াদি এই ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্স শেষে দেশে ও দেশের বাইরে চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া বরিশাল জমজম না‌র্সিং ক‌লেজ, ইসলামী ব‌্যাংক না‌র্সিং ইনস্টিটিউট, আইএসিআইবি নার্সিং ইনস্টিটিউটেও রয়েছেন প্রচুর শিক্ষার্থী।

শেবা‌চিম হাসপাতালে যেভা‌বে সহায়ক সেবা গত বৃহস্পতিবার সকালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গি‌য়ে দেখা গেল, সি‌নিয়র নার্সদের স‌ঙ্গে সহায়ক হি‌সে‌বে কাজ ক‌রে যা‌চ্ছেন বেসরকারি বি‌ভিন্ন না‌র্সিং ক‌লে‌জের শিক্ষার্থীরা।

শেবা‌চিম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার সহায়ক সেবা দি‌য়ে‌ছেন ডিড‌ব্লিউএফের শিক্ষার্থী জয় বিশ্বাস ও শাওন সরকার। তাঁরা জানান, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা সেবা দি‌চ্ছেন হাসপাতালে। নুসরাত জাহান আন্নী না‌মে আর এক শিক্ষার্থী জানান, তি‌নি পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে হাতেকলমে শিক্ষার পাশাপা‌শি রোগীদেরও সেবা দেন।‌

ডিড‌ব্লিউএফ নার্সিং ক‌লে‌জের শিক্ষক কৌ‌শিক রায় জানান, প্রতি মা‌সে শেবা‌চি‌মে গি‌য়ে শিক্ষার্থীদের তদারক কর‌ছেন তি‌নি। নার্স হি‌সে‌বে একজন রোগীর ক‌্যানুলা করা, ঠিক সময় ওষুধ দেওয়া, মানসিক সহায়তা দেওয়া, অপা‌রেশ‌নের জন‌্য প্রস্তুত করা, হাস‌পাতাল ইনফেকশন প্রিভেনশন করা, ড্রেসিংয়ের মতো কাজ ক‌রেন শিক্ষার্থীরা।

এসব প্রসঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ট্রেনিং পিরিয়ড রয়েছে। সে অনুযায়ী এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা শেবাচিম হাসপাতালের নার্সদের সাপোর্ট দেয়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের রোগীরাও সেবা পাচ্ছেন।