Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the rocket domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করবেন - আজকের বার্তা
আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করবেন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করবেন
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ তৃষ্ণা লাগলে আমরা পানিপান করি। পানিপান শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু কতটুকু পানিপান করবেন। যার কাছেই যান- তিনি হয়তো বলবেন- নিয়মিত পানিপান করুন। ডায়েটিশিয়ানদের কাছে যান তারাও বলবেন নিয়মিত পানি এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার খান।

পানি নিয়ে বাজারে অনেক কথা আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক মিথ আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক বইগুলোতেও সাদামাটাভাবে এ নিয়ে অনেক মিথ ফলো করা হয়েছে। এরকম একটি কমন মিথ চালু আছে, দৈনিক সবার ২ লিটার বা আট গ্লাস পানিপান করা উচিত।

প্রথমত, এটি পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত নয়। এ মিথটি চালু হয়েছিল ১৯৪০ সালের এক পুরনো গবেষণা থেকে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত আমেরিকান এক ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট উৎ. উধারফ ইবষশ পানির নিউট্রিশনাল ভ্যালু নিয়ে একটি গবেষণা করেন এবং ১৯৪০ সালে তার সেই গবেষণা থেকে এ সিদ্ধান্ত পেশ করেন- দৈনিক সবার মিনিমাম ২ লিটার ৮ গ্লাস পানিপান জরুরি। পরবর্তী সময়ে আশির দশকে এ নিয়ে গবেষণায় বেরিয়ে আসে- এটি আসলে পুরোপুরি সঠিক নয়।

এর প্রধান কারণ হলো পানির এ পরিমাণ অনেক ফ্যাক্টর-এর ওপর নির্ভর করে। সবার জন্য তা সঠিক নয়। তবে সেই গবেষণাকে আবার একেবারে উড়িয়েও দেওয়া হয় না। পরবর্তী সময়ে সেটাকে কারেক্ট করে এখন রিকমেন্ডেড করা হয়- মহিলাদের দৈনিক ২.৭ লিটার এবং পুরুষের ৩.৭ লিটার পানিপান করতে পারলে ভালো। তবে সব পরিস্থিতিতে নয়, সব সময় নয়, এমনকি সব বয়সেও নয়।

আমাদের শরীরের ৬০ শতাংশ পানি জাতীয় কিছু দিয়ে তৈরি। এজন্যই হয়তো পুরনো কথা চালু আছে- পানির অপর নাম জীবন। শরীরের অর্ধেকের চেয়ে বেশি আসলে তরল জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। জন্মের সময় একটি বাচ্চার শরীরের ৭০ শতাংশ কেবল পানি দিয়ে তৈরি। বয়স বাড়লে তা কমে আসে।

মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডে, এ দুটো অঙ্গের ৭৩ শতাংশ জলীয়। সবচেয়ে বেশি পানি থাকে ফুসফুসে। ফুসফুসের ৮৩ শতাংশ পানি। এমনকি শুনতে অবাক হলেও আমাদের চামড়ার ৬৪ শতাংশ জলীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি। রক্তকে অনেকে শরীরের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয় পদার্থ মনে করে। বরং রক্তের মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জলীয়। যে হাড় আমরা এত শক্ত ভাবি, তার ৩১ শতাংশ তরল পদার্থ দিয়ে গঠিত।

৭০ কেজি ওজনের কারও শরীর ৪২ থেকে ৪৫ লিটার পানি দিয়ে তৈরি। এদের ২৮ লিটার থাকে কোষের ভেতর, ১০ লিটার থাকে কোষের বাইরে এবং মাত্র ৮ লিটার থাকে রক্তে। এখানে একটি মজার ব্যতিক্রম আছে। মহিলাদের শরীরে পুরুষের চেয়ে চর্বি জাতীয় টিস্যুর পরিমাণ বেশি।

ফ্যাট টিস্যুতে পানির পরিমাণ কম। তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে মোটা শরীরে ৫৫ শতাংশ পানি। বরং শুকনা লোকদের শরীরে চর্বির পরিমাণ কম বলে সেখানে পানির পরিমাণ আরও বেশি। শরীরের এমন কোনো কাজ নেই- যে কাজে পানির কোনো অবদান নেই।

শরীরের একটা কমন রুলস আছে। এটাকে বলা হয়- রুলস অফ থ্রি। বাতাস ছাড়া একজন মানুষ তিন মিনিটের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। পানি ছাড়া একজন মানুষ তিন দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারে। খাবার ছাড়া একজন মানুষ তিন সপ্তাহের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না।

শরীরে পানির অনেক কাজ। পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের কোষের ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো হতে হলে পানির উপস্থিতি প্রয়োজন। আমাদের হাড়গুলোতে যে জয়েন্ট আছে, তাতে সাইনোভিয়াল ফ্লুয়িড নামক কিছু জলীয় পদার্থ থাকে।

জয়েন্টগুলোর মাঝখানে এ পানি জাতীয় পদার্থ কমে গেলে জয়েন্টগুলোতে ব্যথা বেড়ে যায়। পানি শরীর থেকে জলীয় আকারে অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বের করে দেয়। পানির অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যেতে পারে। পানি রক্ত এবং টিস্যু ফ্লুয়িডের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। বলতে গেলে একের পর এক বলা যায়। এক কথায় পুরো শরীরের এমন কোনো অংশ নেই এখানে পানির কোনো প্রয়োজন নেই।

শরীর থেকে বিভিন্নভাবেই পানি চলে গিয়ে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। সহজ ভাষায় ডিহাইড্রেশন বলে। যখনই এমন ডিহাইড্রেশন ঘটবে তখনই দরকার পড়বে রিহাইড্রেশন। প্রস্রাব, পায়খানা, ঘাম, এমনকি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমরা শরীর থেকে পানি বের করে দেই।

শরীর থেকে পানি চলে যায় সবচেয়ে বেশি প্রস্রাব দিয়ে। গড়ে দুই থেকে আট লিটার পানি যায় এ পথে। চামড়ার মাধ্যমে ঘামের মধ্যে দিয়ে আমরা আধা লিটারের মতো পানি বের করে দেই দৈনিক। শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়েও আধা লিটারের মতো পানি বেরিয়ে যায় নিত্য। এর বাইরে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হলে শরীরে জলের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। যেমন- কলেরা, ডায়রিয়া এসবে।

শরীরে পানি পানের চেয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক মারাত্মক কোনো ক্ষতি না হলেও শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে মাথাধরা একটি কমন সমস্যা। পর্যাপ্ত পানিপান না করলে ঘনঘন কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হবেন, পেটে ব্যথা-বেদনা বেড়ে যাবে, খাবার পরিপাকে গোলযোগ লেগেই থাকবে।

কোনো ধরনের রোগ ছাড়া যাদের শরীরের চামড়া অযথাই খসখসে, অন্যতম প্রধান কারণ পানিশূন্যতা। চামড়াকে উজ্জ্বল এবং সতেজ রাখতে প্রয়োজনীয় পানিপান করবেন নিয়মিত। কোনো কারণ ছাড়াই অযথা দুর্বল লাগছে, ক্লান্ত লাগছে। বুঝবেন- শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেছে। অযথা মুখ, ঠোঁট শুকনো থাকলে বুঝবেন নিয়মিত পানিপান করছেন না। কোনো রোগ বা ওষুধ ছাড়া কোনো কারণে প্রস্রাবের রং গাঢ় হলে বুঝবেন পানিপান জরুরি।

ব্যায়ামের পর ভুল করে অনেকে একসঙ্গে অনেক বেশি পানিপান করেন। এটা করবেন না। উল্টো ফল হবে। এক কাপ বা দু কাপ পানি একটু পর পর আস্তে আস্তে পান করবেন। সঙ্গে গ্লুকোজ বা ইলেক্ট্রোলাইটস মিশিয়ে খেলে আরও ভালো। ব্যায়ামে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটস কমে যায়। তখন হুট করে অল্প সময়ে একসঙ্গে অধিক পরিমাণ পানি শরীরে একটি ওভার হাইড্রেশন সমস্যা তৈরি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলে hyponatremia। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে এমন হয়। তাই দেখবেন- ম্যারাথন কিংবা ফিল্ড অ্যান্ড ট্রাক স্পোর্টসে অথবা ফুটবল চলাকালীন প্লেয়ারদের এক চুমুক বা দুই চুমুক পানিপান করতে দেখা যায়। একসঙ্গে ঢক ঢক করে পানি খেতে বারণ করা হয়।

বেশি পানি পানে শরীরে তেমন কোনো বড় সমস্যা না হলেও কম পানি পানে শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পানিপান, জীবনের অপর নাম।

লেখক : চিকিৎসক, ইংল্যান্ড