rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল বিশেষায়িত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নানান সংকটকে পুঁজি করে দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে প্রকাশ্যে। রোগনির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর বিকল থাকায় চিকিৎসক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরামর্শে রোগীরা বাইরে থেকে বেশি টাকায় পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিঃস্ব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শেবাচিমে যেটুকু পরীক্ষানিরীক্ষা হয়, তা থেকে প্রাপ্ত আয়ও জমা হয় না সরকারি কোষাগারে।
দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় টাকা জমা দেওয়ার কাউন্টার থেকেই লোপাট হচ্ছে সরকারি রাজস্ব। দীর্ঘদিন ধরে এই লুটপাট চলতে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি ছিল না। সম্প্রতি বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর সদ্য যোগদানকৃত এক জন সহকারী পরিচালক প্যাথলজি ইনচার্জসহ চতুর্থ শ্রেণির বেশ কয়েক জন কর্মচারীকে হাতেনাতে ধরলেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম অভিযুক্তকে ওয়ার্ডে বদলিসহ বিষয়টি তদন্ত হবে বলে জানান। সরকারি রাজস্বের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় হাতেনাতে আটকের পরও দোষীদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হতবাক বরিশালের সচেতন মহল।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন (দুপ্রক) বরিশাল জেলা সভাপতি শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘হাসপাতালটিতে নানা অনিয়মের চিত্র সেখানে গেলেই দেখা যায়। কিন্তু সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কাজে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী ও স্বজনদের। তার ওপর যদি ঊর্ধ্বতনরা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কালক্ষেপণ করে, তাহলে আমাদের আর যাওয়ার জায়গা কোথায়?’ তিনি এ বিষয়ে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য টাকা পরিশোধ করা হলেও অ্যাকাউন্টে তা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। আর এজন্য ব্যবহার করা হয় টাকা পরিশোধের ভুয়া বা জাল রশিদ। সেই রশিদের কপি সংশ্লিষ্ট পরিশোধকারীকেও প্রদান করা হয়। সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটি জাল-জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক জন রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে রশিদ দিলেও তার রিপোর্ট না দেওয়ায় সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে সদ্য যোগদানকৃত সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেজওয়ানুর আলম গত রবিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের মহিলা কাউন্টারের সামনে থেকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির দুই জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে মুলাদী থেকে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে শিশু ইভা (ছয়)। শিশু ইভার পিতা মো. রুবেল জানান, হাসপাতালে আসার পর ইভাকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। এ সময় শিশু ইভাকে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্সরে করতে দেন চিকিৎসক। এতে ঐ রোগীর বিল আসে ১ হাজার ৪৬০ টাকা। তিনি টাকা পরিশোধ করলেও তাকে কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। শুধু শিশু ইভাই নয়, রশিদ পাননি বানরীপাড়ার আব্দুস সাত্তার, গৌরনদীর সুফিয়া বেগম, বরিশাল চরবাড়িয়ার হেনা বেগমসহ অনেকেই। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে টেকনোলজিস্টদের অনেকে সিল নকল করে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছে হাসপাতালের প্যাথোলজির কর্মচারীরা। সম্প্রতি একদিন দুপুরের পর পুরুষ কাউন্টারে শতাধিক রোগী পরীক্ষা করাতে এলে হাতে গোনা ২০/২৫ জনকে রশিদ দেওয়া হয়। বাকিদের রশিদ ছাড়াই পরীক্ষা করায় অসাধু এ চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, এসব টাকার ভাগ যায় ওপর মহল পর্যন্ত, তাই যারা ধরা পড়ে, তাদের সাময়িক সময়ের জন্য শুধু হাসপাতালের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ঘটনার রেশ কেটে গেলে আবারও পুরোনো জায়গায় বহাল তবিয়তে কাজ করে অসাধু এ চক্রটি।