বার্তা ডেস্ক ॥ পিরোজপুরের ইন্দুরকানির স্থানীয় ভাষায় ফুট নামে সবাই চিনলেও স্থান ভেদে এর অপর নাম বাঙ্গি, খরমুজ, কাঁকুড় ইত্যাদি। নাম যাই হোক বাঙ্গি একটি স্বাস্থ্যকর ফল। পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং অনেক উপকোরী ফল এটি। ফুট বা বাঙ্গি এক রকমের শশা জাতীয় ফল। তবে বাঙ্গি শশার চেয়ে বেশ বড় হয়। কাঁচা বাঙ্গি সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয়। এর বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মত হালকা ডোরাকাট খাজযুক্ত এবং ভেতরের দিকটা ফাকা।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে এবার ভাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। বাঙ্গি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বাঙ্গি চাষে ঝুকছে। গত বছরের এ উপজেলায় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। উপজেলার বালিপাড়া, ঢেপসাবুনিয়া, মাঝেরচর, পত্তাশী ও চরনী পত্তাশী গ্রামে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ।এই সবুজের মাঝে থরে থরে সাজানো আছে বড় বড় বাঙ্গি।
দেখলে শুধু চোখ নয় মনও জুড়িয়ে যায়। শুক্রবার সকালে উপজেলা ঢেপসাবুনিয়া গ্রামে বাঙ্গি ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকের কর্মব্যস্ততা। কেহ বিক্রীর জন্য ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তুলছে কেহ আবার বাঙ্গি গাছে পানি দিচ্ছে। বাঙ্গি চাষি ছালেক হোসেন জানান, তিনি, বাহার ও নাসির মিলে এবার ২৪ বিঘা (১৮ একর) জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এতে তাদের ৪ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমান জমির বাঙ্গি ৮ লাখ টাকায় বিক্রী করেছেন। এবার তারা ৮ হাজার গর্তে ৩২ হাজার (প্রতি গর্তে ৪টি) চারা লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি গর্তে ৩টি করে বাঙ্গি হলেও ২৪ হাজার বাঙ্গি বিক্রীর আশা করছেন তিনি।
বাহার হোসেন আরও বলেন, রমজানের কারনে বাঙ্গির দাম ভাল থাকায় এবার ১৫ লাখ টাকার বেশি বিক্রীর আশা করছেন। বর্তমানে ক্ষেত থেকে প্রতিটি বাঙ্গি পাইকাররা গড়ে ৭৫ টাকা দরে কিনে নিয়েছেন। চাষী বাহার শেখ জানান, আগে যে বাঙ্গি তারা ৪০ টাকা দরে বেচত এবার তা ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে। এভাবে দাম থাকলে ভাল লাভ হবে বলে জানান তিনি। কৃষক সালেক হোসেন দুঃখ করে বলেন ইন্দুরকানিতে চাষীদের বাঙ্গি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বগুড়া থেকে বাঙ্গি কিনতে আসা বেপারী আব্দুল লতিফ বলেন ইন্দুরকানী অঞ্চলের ভাঙ্গি মানে ভাল। তাই তিনি এখানে ভাঙ্গি কিনতে এসেছেন। লতিফ বেপারী জানান, তিনি কৃষকের ক্ষেত থেকে ৭৫/৮০ টাকা দরে প্রতিটি ভাঙ্গি কিনেছেন। ক্ষেত থেকে এনে গাড়ীতে উঠানো এবং গাড়ী ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আড়ত পর্যন্ত পৌছাতে ভাঙ্গি প্রতি আরো প্রায় ১৩/১৪ টাকা খরচ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুন্নেছা সুমি বলেন, ইন্দুরকানীর উপজেলার মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী। উপজেলায় এ বছর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৬৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। গত বছর এখানে ৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হলেও ফলন ভাল এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা বাঙ্গি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ বছর আমাদেরর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমান জমিতে বাঙ্গি চাষের আশা করছি।
বাঙ্গি অনেক রোগের উপকারী একটি ফল। বাঙ্গিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম প্রচুর পরিমানে আছে। তাই গ্রীষ্মকালে এবং ইফতারিতে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দাসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে। বাঙ্গি দেহের ওজন কমাতে ও ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।