rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার খবরে যখন তোলপাড় ঠিক তখনই বন্দরের শত কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজে ঘাপলার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষ ও সাব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বন্দর নির্মাণে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের কাজ দেওয়াসহ তাদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করা নিয়ে বিরোধে বেরিয়ে আসতে শুর করেছে ঘাপলার এসব তথ্য। এ নিয়ে শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে বিভিন্ন সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ লোপাটের সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরেন নেতারা। প্রধান প্রকৌশলীর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ করেন তারা। বন্দর কর্মকর্তারা অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি। চাঁদাবাজির অভিযোগ ঢাকতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
চাঁদার দাবিতে হামলা ও ভাঙচুরের মুখে ১ম টার্মিনাল নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে বলে ৩ মার্চ বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে পৃথক দুটি অভিযোগ করে এবিএম ওয়াটার কোম্পানি এবং ওয়াটার বার্ডস্ লিমিটেড নামে দুই প্রতিষ্ঠান। মূল ঠিকাদার চায়না প্রতিষ্ঠান এসএসআইসি এবং সিআরসির উপঠিকাদার হিসাবে কাজ করে এরা। অভিযোগে ১ মার্চ শুক্রবার ৩০টি মোটরসাইকেলে আসা ৭০-৮০ জন হামলা করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ওই দুটি অভিযোগ করেন চেয়ারম্যানের কাছে। অনৈতিক আর্থিক সুবিধার দাবিতে লোকজনকে মারধর করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে দাবি তার। অভিযোগে জাহিদুল হামলাকারীদের পরিচয় না দিলেও তারা কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানের মালিক হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে ওই হামলা হয়েছে। ছাত্রলীগ এখান থেকে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চাইছে। যদিও এ অভিযোগ স্বীকার করেননি আশিক। নির্মাণে তাদের বিপুল আয়তনের পৈতৃক সম্পত্তি অধিগ্রহণ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের চাকরি ও কাজ দেওয়াসহ সহায়তার। কিন্তু এখানের কর্মকর্তারা তা না করে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে চাকরি ও কাজ দিচ্ছেন। সে ব্যাপারে কথা বলার জন্য গেলে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। নিজেদের অন্যায় ঢাকার জন্য ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিষয়টিকে ঘোলাটে করা হচ্ছে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি পুলিশ সুপার, স্থানীয় থানা ও নেতাদের তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছি। তবে বন্দরের উন্নয়ন কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি।
এদিকে শুক্রবার কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নানা অনিয়ম-ঘাপলার লিখিত অভিযোগ পড়ে শোনান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার। ঠিকাদারি কাজ বণ্টনসহ বন্দরের বিভিন্ন পদে শতাধিক জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন তিনি। একইসঙ্গে বন্দরের প্রকৌশল বিভাগ ও সাব ঠিকাদারের যোগসাজশে শত কোটি টাকা লোপাটেরও অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাব ঠিকাদার হিসাবে যে দুটি প্রতিষ্ঠান বন্দরের শত শত কোটি টাকার কাজ করছে তার মালিক হাসান মাহমুদ পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনের বড় ভাই। দুই নামে ভিন্ন দুটি প্রতিষ্ঠান খুলে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। মূল ঠিকাদার চায়নার দুই প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নাসির উদ্দিনই তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানকে সাব ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেয়। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত মোস্তফা আশিক আলী বন্দরসংলগ্ন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় তাকে সঙ্গে নিয়ে নাসির উদ্দিন ও তার ভাই হাসান মাহমুদ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এ সিন্ডিকেটের প্রায় সবাই স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের লোক। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন এক সময় পায়রা বন্দরের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭-১৮ সালের দিকে অনৈতিক উপায়ে সরাসরি পায়রা পোর্টের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পান। প্রধান ও নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটে হাসান মাহমুদের সংযুক্তির পাশাপাশি বন্দর এলাকায় সবচেয়ে বেশি সাব ঠিকাদারিসহ নানা কাজ পেতে থাকেন স্থানীয় বিএনপি-ছাত্রদলের সাবেক নেতা লিটন গাজীর মালিকানাধীন নূরজাহান এন্টারপ্রাইজ ও সেখানকার বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। এ সিন্ডিকেটে আরও রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক আলীর ভাইয়ের ছেলে নিজাম বিশ্বাস, রনি বিশ্বাসসহ তাদের সহযোগী রিয়াজ তালুকদার, তুহিন মৃধা, তপন বিশ্বাসসহ অনেকে। নোয়াখালীর বাসিন্দা নাসির উদ্দিন এখানে দায়িত্ব পাওয়ার পর বন্দরে একশর বেশি লোক নিয়োগ হলেও তারা স্থানীয় নন।
এক প্রশ্নের উত্তরে মোতালেব তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও চাকরি তো হয়ইনি বরঞ্চ স্থানীরা কাজের সন্ধানে বন্দর এলাকায় গেলে খারাপ আচরণ করে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। সরকারের বিশেষ সংরক্ষিত স্থানের (কেপিআই) কথা বলে পুলিশে দেওয়ার ভয়ও দেখাতেন তারা। অথচ সেখানে যেসব উন্নয়ন কাজ চলছে তার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ কিংবা ছোট ছোট সাব ঠিকাদারি পেলেও এলাকার কোনো মানুষ বেকার থাকতেন না।
সরবরাহ বা ঠিকাদারি যাদের দেওয়া হয়েছে তারা প্রায় সবাই যেমন বিত্তশালী তেমনি স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এসব নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটে ১ মার্চ। তবে সেখানে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেনি। তারা কাজ বা সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়ার দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা আশিক আলীর মোবাইল বারবার ফোন এবং ভয়েস মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর মেলেনি। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি জেনেছি। আমার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সব জানিয়েছি। আজ (শুক্রবার) দুপুরে স্থানীয় সংসদ-সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।