rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ গ্যাস আর বিদ্যুৎ স্টেশন না থাকায় ১২ মাসে ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) বরিশালের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ পলিমার অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নাজমুন নাহার রিনা বলেন, এগুলো থাকলে আমার এক টাকাও লস হত না, বরং উৎপাদন বাড়াতে পারতাম। গ্যাস না থাকায়, বিদ্যুৎ স্টেশন চালু না হওয়ায় উৎপাদনমুখী কারখানাগুলো বড় ব্যাধিতে আক্রান্ত। এগুলো না পারছি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, আর না পারছি বন্ধ করে দিতে।
নাজমুন নাহার রিনা কারখানা চালু করার পর এই সংকট উপলব্ধি করতে পারলেও গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না মুনাফা খাটানো দুটি পোশাক কারখানা। শুধু গ্যাস আর বিদ্যুতের অভাবই নয়, প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পার হলেও উৎপাদনবান্ধব হয়ে ওঠেনি বরিশাল বিসিক। এখানে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন। নিরাপত্তার জন্য কোনো পুলিশ ফাঁড়িও নেই। ফলে সম্ভাবনাময় এই খাত নিয়তই ধুকছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রিফাত ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল বিসিকে ইনভেস্ট বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখানকার কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে চলতে হলে যেসব মৌলিক সাপোর্ট দরকার তা না থাকাটা হতাশার। বিসিক সুন্দরভাবে চলতে হলে গ্যাস দরকার। ভোলাতে গ্যাস আছে। সেই গ্যাস যদি বরিশালে সরবরাহ করা হয় তাহলে উৎপাদন যত বাড়বে পণ্যের দামও কমবে। এর পাশাপাশি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, কর্মস্থল ও আশপাশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্র বন্দর চালুর পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি বিসিকের প্রতি সরকার নজর দেয় তাহলে পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দরের মতো বৃহৎ দুটি প্রকল্পের সুফল এই অঞ্চলের মানুষ পেতে পারে। যার প্রবৃদ্ধি যুক্ত হবে জাতীয় অর্থনীতিতে।
জানা গেছে, ১৯৬১ সালে ১৩০ দশমিক ৬১ একর জমি নিয়ে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে সেখানে ৪৪৬টি প্লট নির্মাণ করা হয়। জমির পরিমাণ অবস্থান ও ধরন ভেদে প্লটগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। ৩৭.৮৮ শতাংশ আয়তনের এ গ্রেডের প্লটের এককালীন দাম ধরা হয়েছিল ১১ লাখ টাকা, ২০.৬৬ শতাংশ আয়তনের বি গ্রেডের প্লটের দাম ৬ লাখ টাকা, ১৩.৭৭ শতাংশের সি গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ৪ লাখ টাকা এবং এফ গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ২ লাখ টাকা। সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে প্লটগুলোতে উন্নত ও অনুন্নত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত প্লট ১৬৫টি ও অনুন্নত ১৩৩টি। প্লটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭৫টি। পরবর্তীতে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২৩০ একরে উন্নীত করে দেশের সবচেয়ে বড় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করা হয়।
পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে বিসিক। বন্ধ ইউনিটগুলো চালু হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা কারখানা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বিসিক অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে বিসিকে ৪৭০টি প্লট রয়েছে। ১৭৭ জন ব্যক্তির অনুকূলে এরমধ্যে ৩৭৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উৎপাদনে আছে ১২৬টি শিল্প ইউনিট।
কারখানার মালিক জামাল হোসেন বলেন, গ্যাস না থাকায় প্রতিটি পণ্য উৎপাদনে বাড়তি খরচ হচ্ছে। আমাদের খরচ কম হলে অনেক কম দামে পণ্য বাজারজাত করা যেত। এখন সীমিত আয়ে টিকে থাকতেই কারখানা চালিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। গ্যাসের দাবিতে এমপি-মন্ত্রীর কাছে অনেকবার গিয়েছি। তাদের প্রচেষ্টা থাকলেও আমরা গ্যাস পাচ্ছি না।
পোশাক কারখানা করার পরিকল্পনায় প্লট নিয়ে রেখেছেন মনির হোসেন। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মুনাফা খাটাতে চান না। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি খারাপ। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে যুদ্ধ চলছে। তার ওপর বিসিকে গ্যাস, আলাদা বিদ্যুৎ স্টেশন নেই। যে কারণে আরও পরে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই।
নাজমুন নাহার রিনা বলেন, বরিশাল বিসিকে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন থাকলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতো। শ্রমিকরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। শ্রমিক নিরাপত্তায় নেই কোনো পুলিশ ফাঁড়িও।
অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক পান্না লাল রায় বলেন, অর্থনীতি সচল রাখতে হলে উৎপাদনমুখী কারখানাগুলোর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু গুরুত্ব নয় উৎপাদনমুখী কারখানাগুলো সঠিকভাবে যেন সচল থাকতে পারে সেজন্য উপযোগী পরিবেশ, জ্বালানি সরবরাহ না করলে সুষম অর্থনীতি তৈরি হবে না। বরিশাল বিসিকে গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ স্টেশন নেই। আলাদা ফায়ার স্টেশনও নেই। প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস ও বিদ্যুৎ স্টেশন থাকলে উৎপাদনে বিঘ্ন হত না। বাজারেও কমমূল্যে পণ্য যেত। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হত। ফায়ার সার্ভিস থাকলে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হত। কিন্তু বিসিক আছে অথচ কারখানা সচল রাখতে আয়ত্তের মধ্যে জ্বালানি ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় মুনাফা খাটিয়েও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বিসিকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিসিক যেহেতু বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতায় তাই ওখানে চিকিৎসাকেন্দ্র করার প্রধান দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনে যেকোনো সহায়তা করলে আমরা সহায়তা করবো।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইজরাইল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে বরিশাল ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-২ এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিককে গুরুত্ব দিয়ে ওই এলাকার কাছেই আমরা ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপকেন্দ্র স্থাপন করেছি। কিন্তু ওই উপকেন্দ্রে জনবল এখনো নিয়োগ না হওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে উপকেন্দ্রটি চালু করা যাবে।
বিসিকে অগ্নিনির্বাপণ উপকেন্দ্র দরকার রয়েছে কি না জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান অসুস্থ জানিয়ে বক্তব্য দেননি।
বিসিক বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বিসিকের বেঙ্গল বিস্কুট কারখানার উৎপাদনে অনেক জ্বালানির দরকার হয়। গ্যাস থাকলে উৎপাদন খরচ কমে আসত। বেঙ্গল বিস্কুটের বৃহদাকারে উৎপাদন প্লান্ট। এজন্য গ্যাস ছাড়া উৎপাদনে তাদের টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসমস্ত উদ্যোক্তা পোশাক কারখানা করার জন্য মুনাফা খাটিয়েছেন তারা গ্যাস না থাকায় এখনই উৎপাদনে যাচ্ছেন না। আমি বিশ্বাস করি দ্রুতই বরিশালবাসী বিশেষ করে বরিশাল বিসিক গ্যাস পাবে। গ্যাস এলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিস করতে গেলে এক একরের বেশি জায়গা লাগে। সেই জায়গা বিসিকে নেই। যে কারণে বিসিক এলাকার মধ্যে আসলে আলাদা ফায়ার স্টেশন হওয়ার সুযোগ দেখছি না। তবে কোনো ঘটনা ঘটলে নিকটস্থ কাউনিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যে কারণে ফাঁড়ির দরকার আছে বলে মনে হয় না।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিসিকের উন্নয়নে ২০১৮ সালে ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই টাকার বেশির ভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে। চারপাশে দেয়াল ও নিচু জমি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ হয়। এখন শুধু ড্রেন ও কালভার্টের কাজ বাকি। এই কাজ শেষ হলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। উদ্যোক্তাবান্ধব বিসিক গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, আয়তনের দিক থেকে দেশের বড় শিল্পনগরী বরিশালে। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিসিককে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক সহায়তা করা হচ্ছে। বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।