বার্তা ডেস্ক ॥ সারাদিন ব্যস্ত আমরা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দৌড়। খেয়ে দেয়ে দে ছুট। বাস, টেক্সি, রিকশা, সিএনজি আর বাইকে করে অফিস। একবার অফিসে পৌঁছে সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে কাজে বসে পড়া। এরপর দম ফেলার সময় নেই। সব শেষ করে বিকাল, সন্ধ্যা ও রাতের ট্রাফিক জ্যাম, লোকাল বাসের ভিড় সহ্য করে বাসায় ফেরার পর শরীর আর চলে না।
তবে এত ছোটাছুটির পরও প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে বলছে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে আপনি বলতেই পারেন, সারাদিন এত ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে, তাহলে আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন কী? এখানেই তো খেলা। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, দিনের সিংহভাগ সময় আপনি বসে কাটিয়েছেন। শরীরের পরিশ্রম তেমন একটা হয়নি।
তাই একটা সময়ে গিয়ে বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় আপনার। তাই ব্যায়াম করতেই হবে। তবে মাঝেসাঝে ব্যায়াম করে লাভ নেই। বরং প্রতিদিন রুটিন মাফিক ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকতে চাইলে শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করুন। কারণ, ব্যায়ামের মাধ্যমেই অনায়াসে সুস্থ থাকতে পারবেন। কোনো অসুখ ছুঁতে পারবে না। যেমন-
ফ্যাটি লিভার দূর করে
এখন অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে লিভারের ভেতর ট্রাইগ্লিসারাইডস বা সহজ কথায় ফ্যাট জমে। সম্প্রতি একটি মেটা অ্যানালিসিস ও ১৪টি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলেই লিভারের ফ্যাট ঝরে যায়। এক্ষেত্রে একটু জোরে হাঁটলেও চলবে। সব থেকে ভালো এরোবিক এক্সারসাইজ। যেমন সাঁতার ও সাইকেল চালানো।
বশ মানে হাই ব্লাড প্রেশার
রক্তচাপ বেশি থাকলে বহু অসুখের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়ে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। দৈনিক ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করলেই রক্তনালী রিল্যাক্স হতে পারে। ফলে রক্তচাপ কিছুটা হলেও কমে। এমনকি গোটা দেহে ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকমতো হয়। এছাড়া ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরল কমে।
দুশ্চিন্তার ছুটি
সারাদিনে মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই দূরে থাকে স্ট্রেস। এমনকি মনে আসে না সদর্থক চিন্তা। অবসাদ কাটিয়ে ফেলা যায়। আসলে ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে উপকারী কিছু হরমোন বের হয়। এই হরমোন মন ভালো রাখার কাজে মূল ভূমিকা পালন করে। তাই শুধু শরীর নয়, মন ভালো রাখতেও ব্যায়াম করা অবশ্যই কর্তব্য। তবে নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে তেমন উপকার পাবেন না।
অলস জীবন মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ায়
শরীরচর্চার উপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অলস জীবনযাত্রা বহু ভয়ংকর অসুখ ডেকে আনে। এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি করে কয়েকগুণ। অপরদিকে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, নিয়মিত ব্যায়াম করলেই হ্রাস পায় মৃত্যুর আশঙ্কা। বিশেষত, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
কেমন এক্সারসাইজ?
আপনাকে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে মাঝারি ব্যায়াম করতে হবে। সাইকেল চালানো, জোরে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতারের মতো ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিত। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সুস্থ মানুষের ব্যায়ামের সময় কিছুদিন পর থেকে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩০০ মিনিট বা তার বেশি ব্যায়াম করা উচিত। তবে প্রথমে শুরু করাটা ভীষণই জরুরি।