বার্তা ডেস্ক ॥ বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে
মধুর অমৃত বাণী, বেলা গেল সহজেই
মরমে উঠিল বাজি; বসন্ত এসে গেছে
গীতিকার অনুপম রায়ের লেখা ও লগ্নজিতা চক্রবর্তী কণ্ঠে এ গানের সুর এখন বাজছে যেন প্রকৃতিতে। সেই সুর আবার বুঝি ঢেউ তুলেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আসেপাশের এলাকায়। একদিকে বাসন্তী রঙ, অন্যদিকে ভালোবাসার রঙের জোয়ার বইছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সকাল থেকেই ববির টিএসসি, মুক্তমঞ্চ ও আশপাশের এলাকা নারী, পুরুষ ও শিশুদের পদচারণায় উৎসবের আমেজে মুখর হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, মুক্তমঞ্চ, ঝাঁউতলা, প্রতিলতা চত্বর, হতাশা চত্বর, এগারো চত্বর, সুফিয়া কামাল চত্বর সবই যেন পরিণত হয়েছে প্রেমিক যুগল ও সিনিয়র-জুনিয়রদের মিলনমেলায়।
নারীরা বাসন্তি রঙের শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে চুড়ি, লিপস্টিক ও মাথায় পরেছেন ফুলের ক্রাউন। ছেলেরাও কম যাননি, প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিয়ে তারাও পরেছেন পাঞ্জাবি। প্রিয় মানুষটিকে আজ ভালোবাসার কথা জানাবেন কিংবা আবারও বলবেন ‘ভালোবাসি’— তারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের দশম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী যুগল বলেন নিজ ক্যাম্পাসে এই দ্বিতীয় বারের মতো ভালোবাসা দিবস উদযাপন করছি। আজকের দিনটি প্রাণভরে উপভোগ করতে চাই। আজকের দিনটি আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ভালোবাসা দিবসে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস বলেন, ভালোবাসা দিবস বলতে এখন শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক মনে করা হয়। আসলে ভালোবাসা প্রকাশ হতে পারে বন্ধু, বাবা-মা, পরিবার-পরিজন সবার প্রতিই। তাই আমরা বন্ধুরা এবং সিনিয়র-জুনিয়র মিলেই আজ দিনটিকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি।
দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসের মূল গেইট ও হতাশা চত্বরে ফুল বিক্রি করতে দেখা গেছে ফুল বিক্রেতাদের। ফুল বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। লাল গোলাপের চাহিদা সবার তুঙ্গে ছিল।
একজন ফুল বিক্রেতা শিক্ষার্থী সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান সম্পূর্ণ ভালো লাগা থেকে এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে ফুল বিক্রি করছি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখানে যারা ফুল বিক্রি করে বিশেষ দিনে তারা দাম বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক দর-কষাকষি করতে হয়।শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা এখানে স্টলগুলো দিয়েছি। আমরা নামমাত্র মূল্যে হাসিমুখের জন্য ফুল বিক্রি করছি। আমরা লাভের চিন্তা করছি না একটুও।
অন্যদিকে সিঙ্গেল থাকি সুস্থ থাকি ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে না বলি- এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সিঙ্গেল কমিটির সদস্যরা।
এতে অংশ নেন সংগঠনের অর্ধ শতাধিক সদস্য। এসময় ‘ ববির মাটি সিঙ্গেলদের ঘাটি, প্রেমের নামে বেহায়াপনা, মানি না মানবো না, কেউ পাবে না কেউ পাবে না, তা হবে না, বেহায়াপনার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, এমনসব স্লোগান দেন অংশগ্রহণকারীরা।
এছাড়াও বসন্ত ও ভালোবাসার দিনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সরস্বতী পূজার আয়োজন। এ বছর একই দিনে সরস্বতী পুজা হওয়ায় প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৫ টি বিভাগ স্ব স্ব আমেজে আয়োজন করেছে সরস্বতী পুজা।
বাহারি সব সজ্জা ও আলোকবাতিতে পূজোর মঞ্চগুলো সেজে উঠেছে। এইদিনে দুপুর ১২ টায় মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রু দা) জনাব বদরুজ্জামান ভূঁইয়া । সব শেষে তিনি আগত অতিথিবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের পূজা মন্ডপ গুলো পরিদর্শন করেন।
ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ দেখা গেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পুজা মন্ডপে৷ গ্রামীণ বাংলার সাজসজ্জা পূজার মন্ডপটা যেন অন্যরকম বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।