আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশালে সরকারী হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগী


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪ ৬:৪৭ অপরাহ্ণ বরিশালে সরকারী হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগী
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥  বছরের প্রথম মাসে বরিশালের সরকারী হাসপাতাল গুলোতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া, ৫ সহস্রাধিক নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও গত মাসেও আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে সরকারী হাসপাতালেই। এ পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালে ভর্তিকৃত ৩৮ হাজারেরও বেশী ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ২১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত মাসে সরকারী হাসপাতালে ভর্তিকৃত নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে করোনা সংক্রমন ক্রমশ বাড়লেও বরিশালে টেষ্ট কীটের অভাবে কোভিড শনান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি এখনো।

সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। শিশু ও বয়স্কদের যথাসম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে পরামর্শ নিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। গত বছর এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কোন মৃত্যু ছিলনা। গত মাসে আরো প্রয় ৪ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসে।

তবে সরকারী হাসপাতালের বাইরে আরো অন্তত ৩গুন রোগী এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।
চলতি শীত মৌসুমে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমে যাবার সাথে ইতোমধ্যে দু দফার মাঘের অকাল বর্ষণে জনজীবনে নানা দূর্ভোগের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যেও ব্যপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। শীতের তীব্রতা সহ ঘন কুয়াশায় নিউমোনিয়া ছাড়াও ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিনই এ অঞ্চলে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা সদরের সরকারী হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া রোগীর অঅগমন ক্রমশ বাড়ছে। এর সাথে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ ডায়রিয়া রোগী ভর্তিও হচ্ছেন।

বরিশাল সহ এ অঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালগুলোতে বিপুল সংখ্যক নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগ সহ ডায়রিয়া আক্রান্তদের নিয়ে চরম বিরূপ পরিস্থিতির শিকার চিকৎসকগন। অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী নিয়ে ধুকতে থাকা এ অঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালগুলোতে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থাও এখন বিপর্যস্ত। তবে সব সরকারী হাসপাতালেই পর্যাপ্ত ওষুধ সহ চিকিৎসা সামগ্রী মজুদের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যমল কৃষ্ঞ মন্ডল। সব চিকিৎসকই তাদের ডিউটি আওয়ারের বাইরেও হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালে ডায়রিয়া মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ভীতি ছড়ালেও এখন সরকারী হাসপাতালগুলোতে বছর ব্যাপী এ ধরনের রোগীদের আগমন অব্যাহত থাকছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্তত প্রায় ৭২ হাজার, ২০২২ সালে ৭৭ হাজার ও ২০২১ সালে করোনা মহামারীর সর্বোচ্চ সংক্রমনের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসেন বলে জানা গেছে।

এদিকে করোনার নতুন প্রজাতি উদ্বেগ তৈরী করলেও টেষ্ট কিটের অভাবে এ অঞ্চলের কোথাও কোভিড পরিক্ষার কোন ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেনারেল হাসপাতালে দুটি পূর্ণাঙ্গ ‘করোনা টেষ্ট ল্যাব’ সহ প্রতিটি উপজেলা সদরেও কোভিড-১৯’এর প্রাথমিক শনাক্তের সুবিধা থাকলেও কীটের অভাবে কোথাও এখন আর তা শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। তবে খুব দ্রæত টেষ্টকীট সরবারহ সহ জনবল নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জরুরী বার্তা পাঠাবার পরে পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষনের নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর। কোথাও করোনা উপসর্গ নিয়ে বেশী রোগী দেখা দিলে তা অধিদপ্তরকে জানানোর পরে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহনের কথাও বলেছে অধিদপ্তর। ফলে খুব সহসা বরিশাল অঞ্চলে করেনা শনাক্ত কার্যক্রম শুরু সম্পকে কিছু বলতে পারেন নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভভাগীয় পরিচালক সহ দায়িত্বশীল মহল।
এমনকি এ অঞ্চলে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন-এর ৩ ডোজ গ্রহনের হার এখনো ৬০ ভাগেরও নিচে। ৫ ভাগের বেশী মানুষ ৪র্থ ডোজ গ্রহন না করলেও গত প্রায় ৬মাস ভ্যাকসিন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষনে বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সব জেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বিভাগীয় পরিচালকের মতে ‘টেষ্ট কীট পাওয়া গেলে আমরা প্রতিটি উপজেলা পর্যায়েও কোভিড রোগী শনাক্তে পরিক্ষা কার্যক্রম দ্রæত শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি’। কতৃপক্ষ সময়মত সব কিছু জানাবেন বলেও জানান তিনি।