খবর বিজ্ঞপ্তি ॥ সুখের স্কুলের আয়োজনে ‘মেন্টার ওয়েলবিং: করছি কি, করবো কি?’ শিরোনামে অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয়া আলোচকরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রভাব এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটানো, শরীরচর্চা-বই পাড়া, মেডিটেশন, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল রূপান্তরসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচকদের কথায় উঠে আসে।
১০ জুলাই অনুষ্ঠিত ওই অনলাইন বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সুখের স্কুলের ফাউন্ডার জোবায়ের রুবেল। আরো উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠান পরামর্শক আহসান হাবিব বাদল। মানুষকে সুখী হতে উৎসাহিত করা, শিক্ষাদান করা এবং একটি সুখী মানুষের কমিউনিটি গড়ে তোলাই সুখের স্কুলে উদ্দেশ্য। ’আনলক ইয়োর ট্রু পোটেনশিয়াল’ (Unlock Your True Potential)-স্লোগানে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে, এটি অলাভজনক সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। আলোচনাকালে বক্তারা যা বলেন:
‘করোনাকালে মানুষের বিষন্নতার হার চার থেকে আটগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে’
প্রফেসর ডাক্তার হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ।
এই করোনাকালীন সময়ে পুরো বিশ্বে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে অনেক বড় অভিঘাত এসেছে। করোনাকে আমরা প্যান্ডেমিক বলছি কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একে সিন্ডেমিক বলছে এবং সিন্ডেমিক হলো প্যান্ডেমিকের চেয়েও ক্ষতিকর। করোনার কারনে মানুষের জীবন যাত্রার মান কমে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং এর প্রভাবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করছে। করোনা যে শুধুমাত্র মানুষের মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলবে তা নয়, করোনার এই বিপর্যস্ত সময় পরবর্তী প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতের তরুণ প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এর একটা দীর্ঘমেয়াদী ইফেক্ট থাকবে। যার কারনে একে বলা হচ্ছে সিন্ডেমিক বা সিনারজেস্টিক ইফেক্ট অফ পেন্ডেমিক।
পেন্ডামিক অতিক্রম করে আমরা সিন্ডেমিকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত অনেক মহামারী এসেছে কিন্তু করোনার মতো এতো বিশাল পরিসরে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ক্ষতির উপর অন্য কোনো মহামারী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এতোবড় পেন্ডামিক কিন্তু আসেনি। তাই একে সিন্ডেমিক বলা হচ্ছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের অঞ্চল থেকে একটি গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, মানুষের বিষন্নতার হার চার থেকে আটগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ গবেষণা করে দেখেছে, করোনাকালে ৭০ শতাংশ মানুষের মধ্যে ঘুমের সমস্যা হয়েছে।
এখান থেকে আমার শেষ কথা এই যে, বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা প্রমাণিত করোনাকালে মানুষের মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতা তথা মানসিক সমস্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই বিষন্নতার হার কিশোর সমাজের মাঝে বেশী, কারন তাদের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে, তারা স্কুলে যেতে পারছে, অগত্যা তাদের বাড়ির ভেতরেই থাকতে হচ্ছে। স্কুল কেবল বাচ্চাদের পড়াশোনার জায়গা নয়। স্কুল মানে বাইরে যাওয়া, স্কুল মানে বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্ল করা, স্কুল মানে মাঠে খেলাধুলা করা, স্কুল মানে সামাজিক রীতিনীতি শেখা। এসব বন্ধু আছে বলেই কিশোরদের মধ্যে বিষন্নতার ভাব বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার দায়িত্ব অভিভাবকদের। তাদের উচিত তাদের সন্তানদের যতটুকু সম্ভব সময় দেয়া। কোয়ালিটিপূর্ণ সময় দেওয়ার মাধ্যমেই পরিবারের সবার মধ্যে বিষন্নতার হার কমে আসবে।
‘অভিভাবকরা সচেতন হলেই শিশুরা সচেতন হবে’
ডক্টর আলমাসুর রহমান, ন্যাশনাল লেকচারার, থিওসফিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশ সেকশন।
এই কথা সত্যি যে, ১০০ বছর বা তারও আগে অনেক মহামারী এসেছে, কিন্তু সেগুলো করোনার মতো শক্তিশালী ছিলোনা। বর্তমানে করোনা এতো দ্রুত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরার প্রধান কারন হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দ্রুত সব খবর ছড়িয়ে পরে কিন্তু এসব মাধ্যমে সব সত্য খবর থাকেনা। থাকে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণ। মিডিয়াতে মৃত্যুহার প্রকাশ করছে, টীকা নেই প্রকাশ করছে, হাসপাতালে বেড নেই প্রকাশ করছে, এসব করে মানুষের মাঝে অনেকটাই আতংক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
এই খবরগুলো যদিও আমাদের জানানোর জন্যেই প্রকাশ হচ্ছে কিন্তু এসব জানার পরে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানসিক সুস্থতায় বিঘ্নিত ঘটাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা করোনাকালীন সময়ের নেগেটিভ ব্যাপারগুলো বাদ দিয়ে পজিটিভ দিকগুলোই তুলে ধরছে। কিন্তু বাংলাদেশ এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে উল্টো চিত্র দেখা যায়। এখানে পজিটিভ- নেগেটিভ দুই দিকই জানানো হচ্ছে, আর স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নেগেটিভ ব্যাপারগুলোকে আঁকড়ে ধরে। যে কারনে মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরো বাড়ছে।
এক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি! আমরা তথ্য জানবো কিন্তু মানসিকভাবে শক্ত থাকবো। কারণ, যে জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কোনো কারন নেই। তাই রোগ প্রতিরোধে আমরা যথাসম্ভব ঘরে থাকবো। মিডিয়াতে অনেক ডাক্তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়াতে হয় সে বিষয়ে উপদেশ দেন, আমরা এসব মেনে চলবো।
অভিভাবক হিসেবে আমাদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে বরং নিজেকে করোনার বিপক্ষে শক্তিশালী অবস্থানে তুলে ধরা, যাতে সন্তানরা আমাদের দেখে মনোবল ফিরে পায়, মানসিকভাবে ভালো থাকে।
অভিভাবকদের বাচ্চাদের উপর খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে। তারা কি করছে, তারা আদৌও ক্লাস করছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। অনেক অভিভাবক নিজেই ফোন এডিক্টেড থাকে, যেকারনে তার বাচ্চারাও তাকে দেখে শিখছে। বাচ্চারা সব সময় অনুকরণ পছন্দ করে বলে বাবা-মাকেও অনুসরণ করে। তাই অভিভাবকদের ফোন এডিক্টেড হওয়া যাবেনা। কারণ, অভিভাবকদের উপর বাচ্চাদের ওয়েলবিং নির্ভর করে। অভিভাবকরা যা শেখাবে। শিশুও সেটাই শিখবে। তার মানসিক স্বাস্থ্য কিংবা মেন্টাল ওয়েলবিং তেমনটিই হবে। তাই অভিভাবকদেরকে এ সময় আরেকটু বেশি সচেতন হতে হবে।
‘সমাজের সাথে মানুষের সংযোগ ঘটাতে হবে’
ডক্টর করেন গ্রেসলি এ্যাডামস, ডিরেক্টার, পিপুল ডিরেক্টর সিআইসি, স্কটল্যান্ড।
আমার প্রতিষ্ঠান মানুষের মেন্টাল ওয়েলবিং নিয়ে যেসব কাজ করছে সেসব নিয়ে আমি আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি। আমি “people’s direct kick” নামক স্কটল্যান্ডের একটি সংস্থার পরিচালক। সাধারণ মানুষের জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করি। এছাড়াও সমাজে মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ ঘটানোও আমাদের আরেকটি লক্ষ্য। মেন্টাল ওয়েলবিং বলতে মূলত আমরা বুঝি, মানুষ কিরকম অনুভব করছে?
তাদের অনুভূতিগুলোকে তারা কিভাবে মোকাবেলা করছে!
প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কতটা সচেতন এবং তাদের সমস্যাকে তারা কিভাবে মোকাবেলা করে। এটাও মেন্টাল ওয়েলবিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ সবসময় অন্যান্য মানুষের সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শেয়ার করতে ভালোবাসে। এরকম আচরণ মানুষের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন একটি কোম্পানি হিসেবে মানুষের সুস্থতা অর্জনে মানুষকে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পছন্দ করি। আমি যদি আমার নিজের জীবনের সমস্যা মোকাবেলা করতে পারি। তাহলে অন্যান্য মানুষকেও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিতে পারবো। মানসিক সুস্থতার জন্য পারিবারিক বন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এই বন্ধন এক মানুষকে অন্যান্য মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকতে শেখায় এবং বিভিন্ন সমস্যা একসাথে মোকাবেলা করার শক্তি যোগায়।
আমরা আমাদের চারপাশে এমন সব ঘটনা ঘটতে দেখি যা আমরা অতীতে কখনো দেখিনি। আমাদের মানসিক বৈকল্যের কারনে এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকা খুবই প্রয়োজন। কারণ, আমরা নিজেরা যদি আমাদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বা সুখী বোধ করি তাহলে, আশে পাশে কি ঘটে যাচ্ছে তাতে আমরা ধৈর্য্য হারাবো না। এই অনুভূতি আমাদের অনেকটা স্বস্তি এনে দেয়।
‘দুর্নীতি প্রতিরোধ করে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য পরিকল্পনা মাফিক রূপরেখা তৈরি করতে হবে’
ডক্টর মোহাম্মদ শরীফউদ্দিন প্রামাণিক, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
মেন্টাল ওয়েলবিং এর সাথে ফিনান্সিয়াল ওয়েলবিং এর একটা সংযোগ অবশ্যই আছে। আমরা অনেকেই বলি, পকেটে টাকা থাকলে মন ভালো থাকে। যার অনেক টাকা আছে তার অনেক শান্তি, সে অনেক ভালো আছে। এই ব্যাপারটি সবক্ষেত্রে কিন্তু প্রযোজ্য নয়।
আমরা যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা Who এর কথা বলি, তবে তারা কিন্তু বিশ্বব্যাপীকে বুঝিয়েই যাচ্ছে, কিভাবে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব, কিভাবে ক্ষুধা থেকে বাঁচা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী কিন্তু এ সব কথা শুনছে না।
বিশেষ করে ক্ষমতাধর যারা আছেন, তারা Who এর সব পরামর্শে কর্ণপাত করছেন না। তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী লকডাউন দিচ্ছে, আবার লকডাউন তুলে নিচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সীমিত আকারেও লকডাউন দিচ্ছে। এতে করে তাদের কিন্তু কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা। ক্ষতি হচ্ছে নিম্ন শ্রেণীর। তারা না খেয়ে মরছে।
প্রতি ১০০ বছর পর মহামারী দেখা যায়। এই মহামারী থেকে ঠিক কবে মুক্তি পাওয়া যাবে তা কেউ সেভাবে বলতে পারবেনা। যেমন, করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট চেঞ্জ করে করে আসছে। আর তাই এই মহামারী মোকাবেলায় সরকারের একটি ভালো পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র কি করছে আর আমরা কি করছি এগুলোও চিন্তা করার বিষয়। আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক চলতে হবে। করোনাতে অনেকেই না খেয়ে আছেন, আবার অনেকে নিজেদের চাকুরী হারিয়েছে, এ সবকিছুর সঠিক রিপোর্ট আমার কাছে নেই। করোনাকালে মানুষের কিভাবে ওয়েলবিইং করা যায়, তা নিয়েও কিন্তু সরকারের চিন্তা দেখা যাচ্ছেনা।
আমাদের মেন্টাল ওয়েলবিং বাড়ানোর জন্য কি করা উচিত তা যদি বলতে যাই তবে বলতে হবে, স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া দরকার, করোনা যদি দীর্ঘসময়ব্যাপী থেকে যায়, সেক্ষেত্রে কি করণীয়, এই নিয়েও পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বেশী বরাদ্দ করা উচিত। যদি বলেন টাকার অভাব। এটা কিন্তু ঠিক নয় কারন, আমাদের দেশে দুর্নীতিবাজদের ব্ল্যাকমানির কিন্তু অভাব নেই। তাই, যদি দুর্নীতি রোধ করা যায় তাহলে, আমাদের টাকা ঠিক বের হয়ে আসবে। স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে বাজেটের টাকা বিতরণের ক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিতরণের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি, আমলাদের দায়িত্ব দিতে হবে। এমন অনেক দেখা যায় যখন সরকার বরাদ্দ করে ১০ হাজার কোটি টাকা কিন্তু জনগনের কাছে পৌঁছে এক হাজার কোটি টাকা, তাই দুর্নীতিকে রোধ করতে হবে।
গরিবের হাতে এখনই নগদ টাকা পৌঁছানোর জন্য ধনীরা তাদের অ্যাডভান্স যাকাত দিতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে অ্যাডভান্স যাকাত শরীয়ত সম্মত।
যাদের কুরবানী দেওয়ার সামর্থ্য আছে তারা যদি তাদের অর্থের টাকায় কোরবানি পশু কেনে আর অর্ধেক টাকার অভাবী মানুষদের মধ্যে পৌঁছে দেয়। ঈদের নতুন পোশাক না কিনে আমরা গরিবের হাতে সে টাকা পৌঁছে দিতে পারি। তাহলে দ্রুত অর্থনীতিতে একটা ভারসাম্য আসবে। এই সব আমি কেবল উদাহরণ হিসাবে বললাম। এরকম আরো হাজারটা কার্যক্রম হতে পারে। এটা বলার কারণ হচ্ছে, যদি দ্রুত সবার হাতে অর্থ চলে আসে তবে আমরা সবাই ফিনান্সিয়াল ওয়েলবিং অর্জন করতে পারবো। ক্ষুধা মুক্ত দেশ হবে সবার মধ্যে হাসি ফুটবে।
‘অপারেশন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’
শাফায়াত আলী চয়ন এমসিআইএম, হেড অফ মার্কেটিং এন্ড কর্পোরেট সেলস, প্রাভা হেলথ।
ব্যবসা সব সময় খুব চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার তাই উদ্যোক্তাদের সব সময় মেন্টালি ওয়েলবিং থাকাটা জরুরী। একজন উদ্যোক্তা যখন পিসফুল থাকতে পারেন তখনই সে ব্যবসায়ের সব বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন। তখন তিনি বুঝতে পারবেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তার ব্যবসায় কি ধরনের ডিজিটালাইজেশনের দরকার।
ব্যবসায়ে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন হতে হবে মানে এই না যে, আমাদের সবাই বিজনেস ই-কমার্স ভিত্তিক হতে হবে! অর্থাৎ আপনার বিজনেসকে সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ই-কমার্স ভিত্তিক যে করে ফেলতে হবে, তা কিন্তু হয়।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের এ ব্যাপারটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জানতে হবে, সর্বোপরি সব কাজগুলো কতটা নিঁখুতভাবে পরিচালনা করা যায়! ওভারাল অপারেশনের সাথে জড়িত যে বিজনেস ইন-সাইটগুলো আছে। সেই বিজনেস ইনসাইটগুলোকে কত সুন্দরভাবে বের করা যায় এবং সেগুলোকে ব্যবসার উন্নতির জন্য কিভাবে ব্যবহার করা যায়!
উদাহরণস্বরূপ, একটি ফার্মেসী অনলাইন সার্ভিস দেয়, যেটি খুব প্রয়োজনীয় একটি সার্ভিস এবং ই-প্লাটফর্ম থাকতেই পারে, যা দিয়ে অডিয়েন্সরা উপকৃত হবে। একারণে আমাদের অনেক ধরনের ই-প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে।
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের প্রকৃত মানে কি? ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মানে এটা নয় যে, নতুন উদ্যোক্তারা একটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসবে, ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার দিবে এবং তারা শুধু অর্ডার নিবেন। এর অর্থ শুধুমাত্র এইটুকুই নয়। এর পাশাপাশি এটা এক্ষেত্রেও সাহায্য করে, কোন কোন ধরনের মেডিসিনের রিকয়ারমেন্ট আসছে এবং কত শতাংশ আমার কাছে থাকছে!
তো প্রথমত এটা আমাকে সাহায্য করছে, আমার ইমিউনিটি ম্যানেজমেন্টের।
দ্বিতীয়ত, আমি এ থেকে জানতে পারছি, মার্কেটে এখন কোন ধরনের মেডিসিনটা বেশী প্রয়োজনীয় এবং আমাকে সেটা সাপ্লাই করার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষজন কিভাবে তার প্রোডাক্ট অর্ডার করছে এবং কত দ্রুত ডেলিভারি চাচ্ছে। এই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এ নতুন উদ্যোক্তারা জানতে পারছে; আগামী সপ্তাহে কি পরিবর্তন প্রয়োজন, কি করতে হবে, এসব কিছু তারা বুঝতে পারছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে তারা জানতে পারছে, কোন কাজটা করা উচিত এবং কোন কাজটা করা উচিত নয়, কোন কাজে কতটুকু সময় লাগছে, এসবকিছু আমরা জানতে পারছি!
‘নিজের ভেতর পজিটিভ চিন্তা আনতে হবে’
কাজী নাঈম, সিইও এবং লিড কনসালটেন্ট, কোর ফ্যাসিলিটেশন।
আপনার যদি পজিটিভ মনোভাব থাকে তবে আপনি সব নেগেটিভ মনোভাব থেকেই বেরিয়ে আসতে পারবেন। বাংলাদেশীদের ভেতর এই বিষয়টি নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা পজিটিভ ব্যাপারগুলো চর্চা না করে নেগেটিভ ব্যাপারগুলো চর্চা করতে খুব পছন্দ করি।
করোনা পরিস্থিতিতে চাকুরীজীবিরা অর্থনৈতিকভাবে খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২টি কারনে কর্মজীবীদের চাকরিও চলে যাচ্ছে। প্রথমত, তারা কোম্পানিতে টপ পারফর্মার না। কোম্পানিতে যতজন পার্টিসিপেট আছে তাদের সবার চাকুরী কিন্তু একসাথে যাচ্ছেনা। তাই আপনাকে এক্ষেত্রে নিজেকে টপ পজিশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কিল ডেভেলপ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ধরুন, আপনার চাকুরী চলে গিয়েছে এবং আপনি ডিপ্রেশনে পরে গেছেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি শুধুমাত্র স্যাড থাকেন তবে তা থেকে আপনি স্বল্প সময়ের ভেতর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন কিন্তু ডিপ্রেশন আমাদের মধ্যে দীর্ঘসময়ব্যাপী থাকে, আর এটা আপনার মেন্টাল হেলথকে ব্যাহত করে।
ডিপ্রেশনের ভেতর চলে গেলে সবচেয়ে ভয়ংকর যে ব্যাপারটা আমাদের মাঝে দেখা যায়, তা হলো, আমাদের সে সময় কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করেনা। তাই আপনার যদি চাকুরী চলে যায় এবং আপনি নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা না করে বসে থাকেন। তা হলেতো আপনি নতুন চাকুরী পাবেন না। তাই আপনাকে পজিটিভ থেকে নতুন চাকরীর জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। আপনি এক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হলে, দ্বিগুণ শক্তির সাথে আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
কেউ একদিনে পজিটিভ চিন্তাধারী হয় না। তাই আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। ‘না’ বোধক চিন্তাগুলোকে নিজের থেকে দূরে রাখতে হবে। আপনার মেন্টাল এবিলিটি বাড়াতে হবে। তবেই এক্ষেত্রে আপনার মেন্টাল ওয়েলবিং-ই উন্নত হবে।
‘নিজের সমস্যাকে অন্যের সাথে শেয়ার করতে হবে’
মোঃ রেজাউর রহমান রিংকু, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ওয়েলবিং নেস্ট ফর আজ, স্কটল্যান্ড।
আমি যে প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করছি, এই প্রজেক্ট এ আমরা আসলে মেন্টাল ওয়েলবিং নিয়ে কাজ করছি। আমরা এমন একটি ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করছি, যাতে যারা প্রবাসী হিসেবে বিভিন্ন দেশে রয়েছে এবং তারা যেনো তাদের সমস্ত কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারে। আমরা যারা দক্ষিণ এশিয়ায় বড় হয়েছি তাদের মানসিক সুস্থতা কিংবা মেন্টাল ওয়েলবিং অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। যেমন, আমাদের সমাজে এমন দেখা যায়, আমাকে ছেলে হলে এই কাজটা করতে হবে, মেয়ে হলে একাজটা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটি মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
যেমন, ছেলেদের কথা যদি বলি, তারা অনেক ধরনের মানসিক চাপের উপর দিয়ে যায় কিন্তু তারা এটা কাউকে বলতে পারেনা। কারন, তারা মনে করে এটা কাউকে বললে, সমাজে তার অবস্থান কমে যেতে পারে। আমাদের সমাজ বলে, যারা পুরুষ তাদের কঠিন, সহনশীল হতে হবে আর যদি তারা তাদের সমস্যার কথা বলে তবে তাদের মানসিকভাবে হেয় হতে হবে। তাই, তাদের মধ্যে মানসিক সুস্থতার ব্যাপারটি আর থাকেনা। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করে আমরা জানতে পেরেছি তারা সমাজে হেয় হওয়ার ভয়ে নিজের সমস্যাগুলোর কথা কারো সাথে শেয়ার করেনা।
তাই মানসিক সুস্থতার পেছনে সমাজের রীতিনীতি নিয়মকানুন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থাও আমাদের মেন্টাল ওয়েলবিং এর ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদান করে।
প্রবাসীরা বেশীরভাগই পরিবার ছাড়া থাকে। তারা পরিবার ছাড়া থাকার ফলেও মানসিক চাপের উপর দিয়ে যায়। আমিও এরকম সমস্যার মুখে পরেছি কিন্তু যখন আমার ফ্রেন্ড-সার্কেল তৈরি হলো তখন আমি তাদের সাথে আমার সব সমস্যার কথা শেয়ার করতে পেরেছি। তখন আমি মেন্টাল ওয়েলবিং বাড়াতে পারলাম। আমরা যদি চ্যালেঞ্জময় সময়গুলোতে নিজের সমস্যা কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করি তাহলে আমরা আরো মেন্টালি ওলবিং থাকতে পারবো।
‘পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের ভালো থাকতে হবে’
তাজবির সজিব, সম্পাদক, দৈনিক অধিকার
আমি করোনা পরিস্থিতিতে পরোক্ষভাবে মাঠে ছিলাম। দৈনিক অধিকারের যেসব প্রতিনিধি থানা পর্যায়ে, কিংবা জেলা পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষদের প্রত্যেক্ষ ভাবে দেখেছে তাদের হয়ে আমি বলতে চাই, ওয়েলবিং হল; আমি কতটা ভালো আছি, মেন্টালি কতটা হেলদি আছি!
এই করোনা মহামারীতে সকল সাংবাদিককে করোনা ভ্যাক্সিন দেয়া হয়নি। যদি সকল সাংবাদিককে ভ্যাক্সিন দেয়া হতো, তাহলে তারা মানসিক শান্তি নিয়ে কাজ করতে পারতো। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে প্রতিদিন অফিস করতে হচ্ছে এবং আমি মাঝে মধ্যে মাঠ পর্যায়েও কাজ করতে যাই। আমাদের ২৫০ জনের টীম মেম্বারদের মেন্টাল ওয়েলবিং এর কথা যদি বলতে যাই, তবে বলবো, আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো নয়।
কারন, আমাদের মত গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মুখসারীর যোদ্ধা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা সাংবাদিকরা সুরক্ষা এ্যাপে বয়স ৩৫ না হওয়ায় রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছি না। তাই আমরা ভ্যাক্সিনও পাচ্ছি না। এ কারনে আমাদের মেন্টাল ওয়েলবিং এর কথা বললে, বলতে হচ্ছে যে আমরা সেভাবে ভালো নেই। আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে আমাদের পরিবারের কাছে। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
এ বারের লকডাউনে আমরা দেখছি। একধরনের মানুষ ঘরে থাকতে চাচ্ছে আবার একধরনের মানুষ ঘরে থাকতে চাচ্ছে না। আন্দোলন হচ্ছে দোকানপাট খুলে দেয়ার জন্য।
আমি আমাদের পত্রিকার দুটো রিপোর্টের ব্যাপারে বলতে চাই। প্রথম রিপোর্টটি হচ্ছে, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বলা হয়েছে-
‘বিশ্বব্যাপী প্রতি মিনিটে ক্ষুধায় ১১ জন মানুষ মারা যাচ্ছে, করোনায় মারা যাচ্ছে ৭ জন’। অর্থাৎ ক্ষুধায় যে ১১ জন মারা যাচ্ছে, এরজন্য দায়ীও করোনা। আমাদের দেশের মানুষ হয়তো ক্ষুধায় মারা যাচ্ছেনা। কারণ তারা শাক-পাতা খেয়েও বেঁচে থাকতে পারছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো আছে সরকারি কর্মচারী। মাস শেষে তাদের একাউন্টে টাকা চলে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে কষ্টে আছে তারা যারা দিন আনে দিন খায় আর এরচেয়েও কষ্টে আছে মধ্যবিত্তরা। যারা সরকারের কাছে কিংবা অন্য কোথাও সাহায্যে চাইতে পারছেনা। তাদের সংসার ভালোভাবে চলছেনা। অনেকে না খেয়েও দিন কাটাচ্ছে! শ্রমিকদের দুর্দশাটা কোথায় দেখুন ফ্যাক্টরি খোলা কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ৷ তাহলে তারা কিভাবে কাজে যাবে! এই নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও এখনো খোলা।
বলা হচ্ছে, চলুন আমরা সকলে মাস্ক ব্যবহার করি। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারেও ডেল্টা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছেনা। আর ল্যামডাতো আরো আটগুণ বেশী শক্তিশালী। তারপরেও আমরা সকলে মাস্ক ব্যবহার করবো, হাত স্যানিটাইজ করবো ও পুরো পরিবারসহ সচেতনতা অবলম্বন করে চলবো।
যদিও আমরা সকলে এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভালো নেই। তারপরেও আশার আলো যে, দেশে দেড় আরো কোটি টিকা আসছে। অন্য একটি দেশ ৬০ লাখ টিকা আমাদের উপহার দিচ্ছে। তাই সব মিলিয়েই আমরা ভালো থাকার চেষ্টা করবো। সকলে মিলে সচেতন থাকবো! ইনশাআল্লাহ একদিন আমরা আশার আলো দেখতে পারবো। এই আশাটাই এখন আমাকে মেন্টালি ওয়েলবিং রাখছে।
‘আমাদেরকে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপনের মাধ্যমে বাঁচতে হবে’
সাজু আহমেদ, সাংবাদিক, লেখক ও পরিচালক, সাপ্তাহিক বারাকহ কমিউনিটি, সুখের স্কুল।
আমি মনে করি, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কোরআন দিয়েছেন একটি শৃঙখলাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য। আপনি যদি মনে করেন, আপনি নিজে নিজের মতো কিছু সৃষ্টি করে আপনার মত করে ভালো থাকবেন, সেটা কিন্তু সম্ভব নয়। কোভিড পরিস্থিতির আগেও মানুষ ২৪ ঘন্টার ভেতরে ২২ ঘন্টাই বাইরে কাটাতো, পরিবার পরিজনদের সাথে সেভাবে সময় কাটাতোনা। করোনাকালীন পরিস্থিতি ভিন্ন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে, সবাইকে নিয়েই আমাদের বাঁচাতে হবে। সমাজে একা কখনো বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের সমাজে অনেকেই রয়েছেন, যারা অনেক সম্পদশালী, অনেক বিত্তশালী, যারা অনেক কিছুই জানেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তার সুখ-শান্তি নেই। তাই চলুন আমরা সবাই মিলে বাঁচি। আশেপাশের মানুষগুলোর খোঁজ খবর নেই, নিজে ভালোভাবে বাঁচার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে বেঁচে থাকি। তাই আমাদের সকলকে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরি হতে হবে। বেঁচে থাকাকালীনই মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। তবেই আমরা প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসেবে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবো।