আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ব্যাহত বরিশালের স্বাস্থ্য সেবা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ ৫:১০ অপরাহ্ণ চিকিৎসক ও কর্মী সংকটে ব্যাহত বরিশালের স্বাস্থ্য সেবা
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীর অভাবে বরিশাল বিভাগে সরকারী চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম এক কোটি জনগোষ্ঠীকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছেনা। এ অঞ্চলে ১ হাজার ২৮১টি চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদের ৫৯৩টি শূণ্য। এর বাইরে ১ হাজার শয্যার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ৫শ’ শয্যার বিপরিতে মঞ্জুরীকৃত জনবলের প্রায় ৪০ ভাগ চিকিৎসক নেই। হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে আদলে জনবল কাঠামো মঞ্জুরি এখনো মেলেনি। বরিশালের ১শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত ৩৩ চিকিৎসকের ১১টিতে কোন জনবল নেই।
পাশাপাশি বরিশাল বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩য় শ্রেণীর ৩,৭০২টি পদের ১,৩৬০টিতে কোন জনবল নেই। ৪র্থ শ্রেণীর ১ হাজার ৫৮টি পদেরও ৫২৯টি শূণ্য। এ ছাড়া ১,৩২৫টি স্টাফ নার্সের ১২৭টিতে কোন জনবল নেই। পাশপাশি জেলা ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য কর্মীর মঞ্জুরি পূর্বের আদলেই রয়ে গেছেভ। তবে তারও প্রায় অর্ধেক পদে চিকিৎসক সহ অন্যান্য চিকৎসা কর্র্মী নেই। তবে অতি সম্প্রতি এ অঞ্চলে তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণীর শূণ্য পদগুলোর বিপরিতে জনবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রনালয়।
কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা। এমনকি আজ পর্যন্ত এ অঞ্চলের তালতলী ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় কোন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে করোনা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমও পাশ^বর্তি উপজেলা থেকে পরিচালিত হয় এ দুটি উপজেলাতে।
তবে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরে বিশাল ঘাটতির মধ্যেও গত কয়েক বছরধরে করোনা মহামারি এবং ডায়রিয়ার সাথে গত বছর ডেঙ্গু’র বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী সহ জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন লড়াই করে যাচ্ছেন। এমনকি সীমিত জনবল সহ সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও করোনা মহামারী মোকাবেলায় চিকিৎসা সেবা সহ ভ্যাকসিন প্রদানে এ অঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগ যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলেও মনে করছেন ওয়কিবহাল মহল। শুধু গত বছরই বরিশাল বিভাগে প্রায় ৭৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতারে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়েও প্রায় ৭৮ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা লাভ করেছেন। এমনকি গত বছরই এ অঞ্চলে ৩৮ হাজারেরও বেশী মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টির মধ্যে ৪০টি উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকের অনুমোদিত ১ হাজার ২৮১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৬৮৮ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৫৯৩। জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের এ করুণ হালের বাইরে উপজেলা পর্যায়েও পরিস্থিতিও ভাল নয়। বরিশাল জেলা সদরের বাইরে ৯টি উপজেলা ও চাখারের ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে ২৫৪ চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬৭ জন। ৬৭টি পদেই কোন চিকিৎসক নেই। তবে তুলনামূলকভাবে বরিশালের অবস্থাই এখনো ভাল।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসকের মাত্র ৫৮টি পদ মঞ্জুর করা হলেও কর্মরত অছেন মাত্র ২০ জন। ফলে সরকারি এ সেবা প্রতিষ্ঠানে মঞ্জুরিকৃত ৩৮টি চিকিৎসকের পদ শূন্য পড়ে থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। তবে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে আরো কয়েকজন চিকিৎসককে সেখানে প্রেসনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পটুয়াখালী সদরের বাইরে ৬টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং কুয়াকাটা ও কাঠালতলীতে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত ২০১ জন চিকিৎসক পদে বিপরীতে কর্মরত ৯৮ জন। ১০৩টি পদেই কোন চিকিৎসক নেই।
অনুরূপভবে ভোলা জেলা সদরের আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি এখনো ১শ শয্যার জনবল নিয়ে চললেও মঞ্জুরিকৃত ৫৯ চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ২৪ জন। অতি সম্প্রতি আড়াইশ শয্যার জনবল মঞ্জুরি প্রদান করেছে সরকার। ভোলা সদরের বাইরের চর আইচা’র ২০ শয্যার হাসপাতালটি সহ অপর ৬ উপজেলা হাসপাতালের জন্য মঞ্জুরিকৃত ১৮৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১০৫ জন, ৮৩টি পদে কোন চিকিৎসক নেই।
পিরোজপুর জেনারেল হাসপাতালটিও ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত ৩৪ চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১৯ জন। ১৫টি পদে কোন চিকিৎসক নেই। জেলা সদরের বাইরের ৬টি উপজেলায় ১৫৮টি মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯৬ জন। ৬২টি পদ শূন্য।
বরগুনা জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালটির অবস্থা সব বর্ণনার বইরে। এ অঞ্চলের অবহেলিত এ জেলা সদরের হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখানে চিকিৎসকের ৫৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১৩ জন। ৪২ টি চিকিৎসকের পদই শূণ্য। জেলা সদরের বাইরের চিত্রও প্রায় একই। এ জেলার তালতলী ও রাংগাবালী উপজেলায় আজ পর্যন্ত কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলা হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। জেলা সদরের বাইরের অপর ৫টি উপজেলায় মঞ্জুরিকৃত ১৩১ জন চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত আছেন ৭২ জন। ৫৯ চিকিৎসকের পদই শূণ্য।
ঝালকাঠীর ৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৪০ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ১৩ জন কর্মরত আছেন। ২৭ চিকিৎসকের পদেই কোন জনবল নেই। ৪ উপজেলার ঝালকাঠী সদরের বাইরের অপর ৩টিতে মঞ্জুরিকৃত ১০৩টি পদে কর্মরত আছেন ৬১ জন চিকিৎসক। ৪২টি চিকিৎসকের পদই শূণ্য।
এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে ১৪৫টি হেলথ টেকনিশিয়ান ও ডেন্টাল টেকনিশিয়ানের ৪৮টি পদেরও বেশীরভাগই শূণ্য পড়ে আছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৩৬৪টি ইউনিয়নের ৭০টিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে কোন চিকিৎসকের পদ নেই। উপজেলা হাসপাতাল থেকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকগণ সপ্তাহে একদিন ইউনিয়ন পর্যয়ে যাবার কথা। এছাড়া এ অঞ্চলে ২৬৬টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও চিকিৎসকের কোন পদ নেই। এর বাইরে সহশ্রাধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে সার্ভিস প্রভাইডারগণ কাজ করছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আরো কিছু ক্লিনিক স্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যমল কৃষ্ঞ মন্ডলের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় অবহিত আছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষও সব সময়ই এ অঞ্চলে চিকিৎসক নিয়োগে আন্তরিক । তবে তার পরেও নানা প্রতিবন্ধকতায় সব পদ পুরন সম্ভব হচ্ছে না। সরকার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিলে সেখান থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক আবার বরিশাল অঞ্চলে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।