আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশালে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য আর অস্বাভাবিক মূল্যস্ফিতিতে দিশেহারা জনজীবন !


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ বরিশালে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য আর অস্বাভাবিক মূল্যস্ফিতিতে দিশেহারা জনজীবন !
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য সহ অস্বাভাবিক মূল্যস্ফিতিতে বরিশালের সাধারন মানুষের কষ্ট এখন সব বর্ণনার বাইরে। চাল-ডালের সাথে রান্নার গ্যাস, ভোজ্যতেল, চিনি, গোলআলু, পেয়াজ, রসুন,আদা আর মাছ-মাংস সহ কোন নিত্যপণ্য নিয়ে ভাল খবর নেই বরিশালের বাজারে। ডিম, দুধ, গরুর গোসত এবং সব ধরনের মুরগীর মূল্য বৃদ্ধি ইতোমধ্যে এসব প্রটিন সমৃদ্ধ খাবারকে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে। খাশির গোসতের কথা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ভুলে গেছে আরো আগেই।
অথচ আলু পেয়াঁজ, ডিম, দুধ, মাছ ও গোসতে সয়ংসম্পূর্ণ বরিশাল অঞ্চল। চাল সহ দানাদার খাদ্যেপণ্যে প্রায় ১২ লাখ টনেরও বেশী উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চল। দেশে উৎপাদিত মোট সয়াবিনের প্রায় ২৫ ভাগের উৎপাদন এ অঞ্চলে। সরিষা সহ অন্যান্যবীজের উৎপাদনও সন্তোষজরক। দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের ৭০ ভাগেরও বেশী উৎপাদন বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। খেশারী ডালের উৎপাদনও প্রায় ৩০ ভাগ এ অঞ্চলে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র হিসেবে গত বছর রবি মৌসুমে দেশে উৎপাদিত ১১.১৬ লাখ টন পেয়ঁজের সাড়ে ১১ লাখ টনই উৎপাদন হয়েছে এ অঞ্চলে। এমনকি ১ কোটি ৪ লাখ টন গোল আলুর পৌনে ৩ লাখটন উৎপাদন হয়েছে বরিশঅল কৃসি অঞ্চলে।
কিন্তু এতসব অর্জনই ম্লান হয়ে যাচ্ছে মধ্যসত্ব ভোগীদের কারসাজীর কাছে সরকারী প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন ব্যর্থতায়। গত বছর ভরা রবি মৌসুমে মাঠ থেকে এ অঞ্চলের কৃষকগন মাত্র ৫ টাকা কেজি দরে গোল আলু বিক্রী করেছেন। দু-তিন হাত ঘুরে তা ভোক্তাদের কাছে এক মাস আগে ৭০ টাকায়ও বিক্রী হবার পরে এখন মৌসুমের নতুন গোল আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে। চলতি মৌসুমেও বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ টন গোল আলুর উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। তবে অগ্রহায়নের অকাল বর্ষণে এ অঞ্চলে গোল আলু সহ সব রবি ফসলের আবাদ অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। গতবছর দেশে উৎপাদিত প্রায় ২.৫৫ লাখ টন মুগ ডালের ২.৪৭ লাখ টনই পাওয়া গেছে বরিশালে। দেশে উৎপাদিত আড়াই লাখ টন খেশারী ডালের প্রায় ৮০ হাজার টন যোগান দিয়েছে বরিশাল।
ডিএই’র হিসেবে বিগত রবি মৌসুমে দেশে উৎপাদিত ২ কোটি ১৭ লাখ টন বোরো চালের প্রায় ১৭ লাখ টনের যোগান দিয়েছে বরিশাল অঞ্চল। এছাড়াও আরো প্রায় ২২ লাখ টন আমন ও ৩ লাখ টন আউশ চালের যোগান দিয়েছে এ অঞ্চল। অথচ বরিশাল অঞ্চলের জনপ্রিয় ‘ব্রি-২৮’ বা ‘আঠাশ বালাম’ চালের কেজিও এখন ৫৫-৫৮ টাকা। মধ্যম মানের মিনিকেট চালের কেজি ৬৫-৭০ টাকা।
দেশে কৃষি ব্যাবস্থায় অসামান্য অবদানের পরেও বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হলেও উৎপাদন উদ্বৃত্ত এ অঞ্চলে কৃষিপণ্যের মূল্য সাধারনের নাগালের বাইরে। বুধবারেও বরিশালের বাজারে দেশী পেয়াজ বিক্রী হচ্ছিল ৮০-৮৫ টাকা কেজি দরে। মুসুর ডাল এখনো ১৩০ টাকা কেজি, মুগ ডালও ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। সয়াবিন সহ ভোজ্য তেলের দাম আবারো বৃদ্ধির পরে এখন তা ১৮৫ টাকা প্রতি লিটার। গত ৩ মাসে রান্নার গ্যাসের দাম প্রায় সাড়ে ৩শ টাকা বেড়ে এখন সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রী হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকায়। চিনির কেজিও ১৩৫-১৪০টাকা।
ব্রয়লার মুরগীর কেজি গত একমাসে ২৫ টাকা বেড়ে এখন প্রায় ২শ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধির পাশাপাশি মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগেরও বেশী যোগানদার বরিশাল অঞ্চলে এখন ১ কেজি সাইজের একটি ইলিশ বিক্রী হচ্ছে ১৪শ থেকে দেড় হাজার টাকায়। রুই ও চিংড়ি সহ অন্য কোন মাছই এখন ৭-৮শ টাকার নিচে নয়। অথচ মাছ উৎপাদনে বরিশাল অঞ্চল আড়াই লাখ টনেরও বেশী উদ্বৃত্ত। ডিম উৎপাদনে সয়ং সম্পূর্ণ বরিশালে প্রতি হালি ৫৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা নেমে এখন আবার ৪৮-এর ওপরে।
প্রতিটি নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বরিশাল অঞ্চলের সাধারন মানুষের সংসার পরিচালনকে কষ্টসাধ্য করে তুলেছে ইতোমধ্যে। বাজার নিয়ে স্বস্তি নেই কারো মধ্যে। জীবনযাত্রার ব্যায় বৃদ্ধির ফলে গত এক বছরের মূল্যস্ফিতে নভিশ^াস উঠছে সাধারন মানুষের মাঝে। বরিশাল মহানগরীর সবগুলো বাজার ঘুরে ভোক্তাদের হাতাশার পাশপাশি ক্ষোভও লক্ষ করা গেছে। এদের প্রায় কেউই মাছ-ভাতে বা গোসত-ভাতের কথা না বললেও, ‘ডালে-ভাতে বাঙালী’ হবার নিশ্চয়তা’ চেয়েছেন।