দেশীয় প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার তহবিলে বিএডিসি বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ২৮ উপজেলায় অতিরিক্ত সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে ৬৬ হাজার টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক-এর সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভের পর তা মন্ত্রনালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি অর্থ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। ‘চলতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী’-আরএডিপি’তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ২৩ কোটি টাকার থোক বরাদ্ব রাখা হলেও কৃষি মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের অভাবে সরেজমিনে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভ’গর্ভস্থ পানির ব্যাবহার হ্রাস করে ভ’ অপরিস্থিত পানির ব্যবহার বাড়বে।
প্রায় ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে সেচেযোগ্য জমির অর্ধেকও এখনো সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিগত রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচাবাদ হলেও তার মধ্যে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি’র অবদান ছিল মাত্র ২০ হাজার হেক্টরেরও কম। উপরন্তু বিগত রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে বিভিন্ন মাপের যে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার সেচ পাম্প মাঠে ব্যবহ্রত হয় তার মাত্র সাড়ে ৯শর মত ছিল বিদ্যুৎ চালিত।
সরকার ২০০২-০৩ সাল থেকে কৃষিসেচ কাজে ব্যবহ্রত বিদ্যুতে ২০% ভতর্’কি প্রদান করলেও অধিক ব্যায়বহুল ডিজেল চালিত পাম্পে কোন ভতর্’কি নেই। আর বরিশাল অঞ্চলে সেচ কাজে ব্যবহৃত ৯৫ভাগ সেচ যন্ত্রই ব্যায়বহুল ডিজেল চালিত। ফলে এ অঞ্চলে অত্যাধিক সেচ ব্যায়ের কারণে ধানের উৎপাদন ব্যায়ও দেশের যেকোন স্থানের চেয়ে বেশী। এতে একদিকে রবি মৌসুমে সেচাবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে না, অপরদিকে অধিক ব্যায়বহুল সেচ ব্যায়ের কারণে তাদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হচ্ছে না। অথচ সেচ যন্ত্রের অর্ধেকও বিদ্যুতায়িত করতে পারলে এ অঞ্চলের খাদ্য উদ্বৃত্ত অনায়াসে ২০ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন কৃষিবীদগন। উপরন্তু এ অঞ্চলে লাগাতর লোকাশানে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোও আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পাড়বে বলেও মনে করছেন জ¦ালানী বিশেষজ্ঞগন।
এসব বিবেচনায় বিএডিসি চলতি অর্থ বছর থেকে বরিশাল অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আড়াইশ বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র সংগ্রহ ছাড়াও ১ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ২০টি সোলার লো-লিফট পাম্প সেট সংগ্রহ করে কৃষকদের সরবারহ করবে।
প্রকল্পটির আওতায় বিএডিসি ২৫০টি এক ও ২ কিউসেক সেচযন্ত্র সংগ্রহ, ৩২৫ কিলোমিটার ছোট সেচ খাল পুনঃ খনন, ৫০টি বড় সেচ খাল পুনঃখনন এবং প্রতি কিলোমিটারে ৪টি করে বিভিন্ন খালের পাড়ে প্রায় দেড় হাজার পানি নির্গমন স্থাপনা নির্মান করবে। প্রকল্পটির আওতায় ৪ হাজার ঘন মিটার করে ৩০টি পুকুর পুণঃখননেরও লক্ষ্য রয়েছে। যেসব পুকুর থেকে বিভিন্ন জমিতে সেচ প্রদানও সম্ভব হবে। একইসাথে প্রকল্পটির আওতায় ৩২৪ কিলোমিটার ভ’গর্ভস্থ সেচনালা এবং ৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মান ছাড়াও ৩০ কিলোমিটার ভ’-গর্ভস্থ সেচনালা দ্বারা ভ’-উপরিস্থিত সেচনালা প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া ২৫০মিটার করে ৪০টি ভ’গর্ভস্থ নিস্কাশন নালা, ৩০টি পানি নিয়ন্ত্রন অবকাঠামো বা রেগুলেটার নির্মান করা হবে এ প্রকল্পটির আওতায়।
বরিশাল অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩শটি ওয়াটার পাস,পাইপ কালভার্ট ও ক্যাটল ক্রসিংও নির্মিত হবে। পাশাপাশি সমাপ্তকৃত প্রকল্পের ১ ও ২ কিউসেক লো লিফট পাম্প-এলএলপি’র ২শটি পাম্প হাউজ নির্মান সহ ফলের বাগান সমুহে সাড়ে ৭শ সেট সোলার ড্রিপ ইরিগেশন সিষ্টেম নির্মান করা হবে। এমনকি প্রকল্পটির আওতায় পুনঃ খননকৃত খালে কৃষিজ পণ্য ওঠানামার সুবিধার্থে ১৫টি আরসিসি ঘাটলাও নির্মিত হবে এ প্রকল্পের আওতায়। একইসাথে কৃষিপণ্য ও কৃষি যন্ত্রপাতি পরিবহনে দেড়শটি অবকাঠামো নির্মিত হবে।
সেচ কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পটির আওতায় ১শটি ব্যাচে বিপুল সংখ্যক কৃষককে প্রশিক্ষনেরও ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সেচনালা নির্মানের লক্ষ্যে প্রায় ৩শ সেট এক কিউসিক ও ২ কিউসেক ইউপিভিসি পাইপ সেট সংগ্রহ করে স্থাপন করা হবে। একইসাথে ২০টি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহ্রত লো লিফট পাম্প সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিতরন করা হবে। পরবর্তিতে সমাপ্তকৃত প্রকল্পটির সোলার এলএলপি গুলোতে বিদ্যুৎ সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে বলে জানা গেছে।
২০২৬-এর ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৬,৫০৪ হেক্টর জমিতে বাড়তি সেচ সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে ৬৬ হাজার ১৪ টন খাদ্য উৎপন্ন হবে বলে আশা করছে বিএডিসি’র দায়িত্বশীল মহল। একইসাথে ফলের বাগানেও সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ফলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়বে বলেও আশাবাদী কৃষিবীদ সহ বিএডিসি।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ মুরাদ জানান, আমরা প্রতিটি বিষয়ে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তাবায়নের চেষ্টা করছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষি প্রধান বরিশাল অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।