rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ নেছারাবাদ উপজেলার ভাসমান চরগুলোতে ঐতিহ্যবাহী কাঠ ব্যবসা সুনামের সাথে করে যাচ্ছেন স্হানীয় ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভাবে কয়েক লক্ষ লোক জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন।
উপজেলার প্রায় প্রতিটি প্রধান প্রধান ভাসমান চরে কয়েক স্তরে সুন্দরভাবে গাছগুলো সাজানো থাকে । এ অঞ্চলে ঘুরতে আসা অতিথিদের নজর কাড়ে ওই ভাসমান কাঠের বাজার। ছবি বা সেলফি তুলে তারা ঐ স্মৃতি ধারণ করে রাখে। এক সময়ে সুন্দরী কাঠ ও গোলপাতার সর্ববৃহৎ ভাসমান বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল উপজেলাটি। বিশ্লেষকরা ধারণা করেন আনুমানিক ১৯১৭ সালের প্রথম দিকে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার আওতাধীন বর্তমান নেছারাবাদ উপজেলায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছকে কেন্দ্র করে কাঠ ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। ১৯১৮ সালের শেষদিকে নেছারাবাদের সন্ধ্যা নদীর তীরঘেঁষে একাধিক শাখা খালে গাছ বেচাকেনার জন্য ভাসমান কাঠের হাট গড়ে ওঠে।
বর্তমানে নেছারাবাদ থানাসংলগ্ন সন্ধ্যা নদী, শীতলা খাল, সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের খালের চর, মিয়ারহাট ও ইন্দুরহাটের বিভিন্ন খালের চর, বয়ার উলা, ডুবি বাজার, চামী বাজার, বিন্না বাজার, একতা বাজার, নাওয়ারা,পঞ্চায়েত বাড়ি, মাহমুদকাঠী সহ নানা স্থানে গড়ে ওঠা ভাসমান বাজারটি এখন নেছারাবাদের সব থেকে বড় কাঠ বাজার হিসেবে পরিচিত। এ ব্যবসার মাধ্যমে এখানে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ১০ সহস্রাধিক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
এটি দক্ষিণ অঞ্চলের তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে সর্ববৃহৎ কাঠের বাজার। সর্ববৃহৎ কাঠের বাজার হওয়া সত্ত্বেও এখানে রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঠের চরের হাটে রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণ সুবিধা না পাওয়া, দালালচক্রের উৎপাত, নদীপথে জলদস্যুদের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিকল্পিত বনায়ন তৈরি না হওয়া সহ নানান কারণে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাটি হুমকির মুখে ।
সুন্দরী কাঠ কাটা এরশাদ সরকারের সময় নিষিদ্ধ করায় নেছারাবাদে গড়ে ওঠে মেহগনি, চাম্বল ও রেইনট্রিসহ নানা দেশীয় কাঠের বৃহত্তর বাজার। বিশেষ করে সোম ও বৃহস্পতিবার হাটের দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কাঠ বিক্রির জন্য এই উপজেলার ভাসমান হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার কাঠ কেনাবেচা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রান্সপোর্ট যোগে যেমন- ছোট-বড় ট্রাক, লঞ্চ, ট্রলার ও কার্গোযোগে এসব কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিবহন সংকট ও পাইকারি ক্রেতার অভাবে সরবরাহ করা কাঠ নিয়ে প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়েন নেছারাবাদের কাঠ ব্যবসায়ীরা। তারা আরো বলেন পরিবহন সংকটের কারনে গাছ সরবরাহ যথাসময়ে না করতে পারায় ঋণের বোঝা দিন দিন ভারী হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও বরিশাল,খুলনা,বাগেরহাট যশোর, ঝিনাইদহ,গোপালগঞ্জ,নোয়াখালী,মাদারীপুর ফরিদপুর,চাঁদপুর,মুলাদী,মুন্সিগঞ্জ,ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখনো স্বরূপকাঠির এই ভাসমান কাঠের ব্যবসায় জড়িত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঠের মোকাম গড়ে তুলছেন। অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অনেকে করেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। অনেক ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি পূর্বপুরুষদের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন।
নদীপথে দূর থেকে আসা কাঠ ব্যবসায়ীরা জলদস্যুদের ভয়ে ২৫-৩০টি নৌকার বহরে একই সঙ্গে স্বরূপকাঠির মোকামে আসে। কাঠ বেচাকেনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা একই সঙ্গে চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া আবার গল্প-গুজব করেন। যে যার মতো বেচাকেনা শেষে, আবার সারিবদ্ধ নৌকাগুলো নদীপথে চলে যায়। উপজেলার ব্যাংকগুলো অধিকাংশ লেনদেন কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে বলে জানান ব্যাংক ম্যানেজাররা। নেছারাবাদের কাঠ ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মৃধা বলেন, একটি গাছ চূড়ান্তভাবে ব্যবহারের আগে ৫-৬ বার বেচাকেনা হয়। দাঁড়ানো গাছ কাটা থেকে ব্যবহারের পর্যায় পর্যন্ত ৮ ধরনের শ্রমিক রয়েছে। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা যথা সময়ে গাছ না কাটতে পারায় ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে অনভিজ্ঞ লোকদেরকে কাজে এনে উচ্চ পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। এ কারণে অনেককে পূর্ব পুরুষদের থেকে চলে আসা এই ব্যবসাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে । তিনি আরও বলেন এ ব্যবসাটির কারণে অসংখ্য স্ব-মিল ও ফার্নিচার সহ অনেক কুটির শিল্প গড়ে উঠেছে বিধায় লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সরকারকে কাঠ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার আহবান জানান।
বাজারের নিরাপত্তার বিষয়ে ইজারাদার আঃ রহিম বলেন, যেহেতু ভাসমান কাঠের বাজার নেছারাবাদ থানা সংলগ্ন তাই এখানে ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি সহ এ ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।