অন্য চিকিৎসকের নাম ও সনদ ব্যবহার করে প্রায় তিন বছর ধরে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের নামে প্রতারণা করলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে রহস্য।
আর ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়।
জানা গেছে, অন্য এক চিকিৎসকের সনদ ও নাম ব্যবহার করে তিন বছর যাবৎ বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ৬টি ক্লিনিকে ডাক্তারি করে আসছিলেন আরিফুল ইসলাম আরিফ। নাম আরিফুল ইসলাম আরিফ হলেও ডাক্তার জাকির হোসেন নামে তিনি পরিচয় দিতেন।
রোগী দেখার পাশাপাশি নারী চিকিৎসকদের ফেলতেন প্রেমের ফাঁদে। সম্প্রতি একটি ক্লিনিকের এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়ে থাকতেন একটি বাসায়।
সদ্য বিবাহিত স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রতারকের প্রেমের ফাঁদে পড়া ভুক্তভোগী ওই নারী চিকিৎসক জানান, তিনি যে ক্লিনিকে চাকরি করতেন সেখানে আসতেন জাকির হোসেন নামে ওই সিনিয়র চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে ওই নারীকে খাবার পাঠাতেন। পরে কল করতে শুরু করেন, এভাবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়।
এর কিছুদিন পর ক্লিনিকের স্টাফদের কাছে স্বামী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্য ওই নারীকে চাপ দেন জাকির হোসেন। তবে এভাবে পরিচয় দিলেও তাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ের প্রলোভন দিলেও বিয়ে করেননি জাকির।
তবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকতেন জানিয়ে ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক বলেন, বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করি। প্রথমে জানতে পারি জাকির নামধারী ওই ব্যক্তির সঙ্গে অন্য এক মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। যে ঘটনায় গ্রামের লোকজন তাকে আটকও করে, তবে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সে ছাড়া পায়। তবে এসব ঘটনা জানার পর কিছুটা চেপে রেখে আরও খোঁজ-খবর নিতে থাকি। সে সব সময় তার বাসার ঠিকানা বলতো ঢাকার বিজয়নগরে। পরে ওর ছবি ও ঠিকানার জন্য অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখি সে বিএমডিসির যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করেছে, সেই রেজিস্ট্রেশনে থাকা লোকের ছবি আর তার ছবি এক নয়।
ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক জাকির হোসেনের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়ে আসছিল টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম আরিফ নামের এই প্রতারক।
ভুক্তভোগী এই নারী চিকিৎসক অভিযোগ করেন, ডাক্তার সেজে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন আরিফ। স্থানীয় অগণিত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চিকিৎসার নামে। তাই সবাইকে সতর্ক হবার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার পরিচয় দেওয়া আরিফ ইউটিউব দেখে আলট্রাসনোগ্রাফি করতেন। এ সময় তিনি বেশ কিছু রোগীর নরমাল ডেলিভারিও করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
এদিকে ভুয়া চিকিৎসকের খবরে নড়েচড়ে বসেছে দুই উপজেলার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। অভিযোগ আছে স্থানীয় সুইস হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতেন আরিফ। তবে ওই হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না। বিভিন্ন জায়গায় চেম্বার করার সুবাদে শুক্রবার ও বুধবার তাদের ওখানে চেম্বার করতেন। আর জাকির হোসেন নামের ওই ব্যক্তির কাছে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডের কাগজ চাওয়া হলেও তা তিনি দেবেন দেবেন বলে দেননি।
ডাক্তারের সনদ যাচাই না করেই চিকিৎসা করতে দেওয়াটা ভুল হয়েছে স্বীকার করে ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
তবে চিকিৎসক সেজে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে গৌরনদী থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন জাকির ওরফে আরিফ।