আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

নেছারাবাদে ভিজিডির তালিকায় নাম একজনের চাল তুলছেন আরেকজন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪ ৭:৫৭ অপরাহ্ণ নেছারাবাদে ভিজিডির তালিকায় নাম একজনের চাল তুলছেন আরেকজন
Spread the love

পিরোজপুরের নেছারাবাদে দুস্থদের জন্য সহায়তা ভিজিডি কার্ডের তালিকায় যার নাম আছে তিনি চাল না তুললেও ১৩ মাস পর্যন্ত চাল তুলছেন আরেকজন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী নারী ডিজিডি কর্মসূচির বর্তমান অর্থ বছরে ভিজিডির অনলাইনে নামের তালিকায় থাকার পরেও গত ১৩ মাসের ৩৯০ কেজি পুষ্টি চাল তুলতে না পারায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারটি। ওই নারীর বরাদ্দকৃত চাল আরেকজন কীভাবে তুলছেন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে জানার পরেও সমাধান পায়নি ফাতেমা বেগম নামের এক হতদরিদ্র পরিবার।

ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগমের বাড়ি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাটাখালি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ঝাল মুড়ি বিক্রেতা জসিম উদ্দিনের স্ত্রী।

ফাতেমা বেগমের স্বামী ঝাল মুড়ি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো ধরণের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর জন্য একটি ভিজিটি কার্ডের আবেদন করি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে একটি ভিজিটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ভিজিটির প্রথম চাল বিতরণের দিন গেলে আমার স্ত্রীর নামে কোনো কার্ড হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম। পরে বিষয়টি সচিব, ওয়ার্ড মেম্বার রফিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সাঈদকে জানালে তিনি জানান, তোমার নামে কোন কার্ড হয়নি।

পরে তেরো মাস অতিবাহিত হবার পরে ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কর্তৃক জানতে পারলাম আমার স্ত্রীর ভিজিটির কার্ড হয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করলে তার সত্যতা পাই। এবং সেই মাসে আমাকে এক মাসের বরাদ্দ ভিজিডির ৩০ কেজি চাল দেয়। পরবর্তী মাসে চাল আনতে গেলে আমাকে দিবে না বলে জানিয়ে দেয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, আমি ১৩ মাস পর্যন্ত আমার নামের কার্ড পাইনি, তাহলে এই কার্ডের টাকা কে তুলে নিচ্ছে আমি জানিনা। কার্ড করার সময় অনলাইন খরচ বলে রফিকুল মেম্বার আমার কাছ থেকে ১৯৯০ টাকা ঘুষ নিয়েছে। এতদিন আমিকার্ডে চাল পাইনি যখন জানতে পারি শুধুমাত্র ৩০ কেজি চাল পেয়েছি। তাহলে আমার প্রাপ্য চাল কে নিচ্ছে? ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আর চাল পাবো না বলে তিরস্কার করে।

গ্রামবাসীরা জানান, ভিজিডি কার্ডটি বর্তমানে যার কাছে আছে সেই কার্ডটি উদ্ধার করে তাকে (ফাতেমা, জসিম) দিলে সমস্যার সমাধান হবে এবং ভিজিডি কার্ডের ১৩ মাসের পুষ্টি চালসহ ভিজিডি কার্ডটি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, তার নামে কার্ড হয়েছে এটা সত্য তবে এই বিষয়ে মহিলা ওয়ার্ড মেম্বার জেসমিন আক্তার ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিস্তারিত বলতে পারবে। শুনেছি ওই কার্ডের চাল অন্য আরেক ফাতেমা নিয়ে যাচ্ছে। যে ফাতেমা নিচ্ছে তার স্বামীর নাম হাসান, কয়েকদিন আগে এই ফাতেমার স্বামী মারা গেছে তাই মানবিক চিন্তা করে মহিলা মেম্বার জেসমিন ও চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মহিলা মেম্বার জেসমিন আক্তার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে বর্তমানে এই চাল পাচ্ছে সেও অসহায় এবং যার নামে কার্ড সেও অসহায়। তবে দুজনকে যদি সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্ধেক ভাগ করে দেয়া হতো তাহলে হয়তো ভুক্তভোগী পরিবারটি অভিযোগ করত না।

বলদিয়া ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সাঈদ এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়া বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক! আমি বিষয়টি সম্পূর্ণ জেনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেছি! সেইসঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে ফাতেমা বেগমের বিজিডির কার্ডটি উদ্ধার করে ১৩ মাসের পুষ্টির চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে অবগত করে সেই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে ভিজিডির কার্ড উদ্ধারসহ ১৩ মাসের চাল সুবিধা ভোগীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং ভিজিডি কার্ডের অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।