rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই ভাষণ জনগণকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং স্বাধীনতাও এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতই করেনি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২৪’ উপলক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। সংগ্রামের পথ বেয়ে রক্তের অক্ষরে লেখা হয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর পরাধীন থাকা যাবে না। বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে হবে। আর সেই চিন্তা থেকেই তিনি ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার চেতনায়। তিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আর তারই অংশ হচ্ছে ৭ মার্চ।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পর জাতির পিতা সেদিন কি বলেছিলেন বার বার তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এমনকি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা যারা পরবর্তীতে বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে লিখেছেন ‘উনি যে কি বলে গেলেন আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোন অ্যাকশনই নিতে পারলাম না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতে পাকিস্তানিদের সময় চলে যায়। বঙ্গবন্ধু কি বলে গেলেন আর কি হয়ে গেল, বাঙালিরা যুদ্ধে নেমে পড়ল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাধারে যেমন স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেন তেমনি তাঁকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে না হয় এবং জনগণ তৎক্ষণাৎ যেন পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয় সেব্যাপারেও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, ‘একজন নেতার একটি ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধের জন্য শুধু প্রস্তুতই করেনি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়।
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
পরে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাঙালির রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা হয়েছিল তার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে যে ঢেকে রাখা যায় না। আজ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আজকে আমাদের জাতীয় স্লোগান। ৭ মার্চের ভাষণ আজ শুধু বাঙালির নয়, ইতিহাসে যেসব নেতারা ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সেই ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে তাঁর ছায়াসঙ্গী বঙ্গমাতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী সেই ভাষণ দেয়ার আগে অনেক কিছু লিখে নিয়ে আসেন, কেউ কেউ পরামর্শ দেন, নেতারা পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এখনো মনে আছে আমার, সেই সময় আমাদের ছাত্র নেতারা-আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান তারা সবাই এসেছেন। এসে বলছেন লিডার কাল স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে, না দিলে চলবে না। মানুষ সেটাই চায়।
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন ‘আব্বা দুই হাত দুই নেতার কাঁধে রেখে বললেন, সিরাজ লিডার শ্যুড লিড দা ল্যাড, ল্যাড শুড নট লিড দ্যা লিডার’।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, পরের দিন মিটিং। আমাদের বাড়ি ভরা লোকজন, নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন, আসছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন, লিখিত কাগজ বস্তাকে বস্তা হয়ে যাচ্ছে। আমার মা সবগুলো নিয়ে গুছিয়ে রেখে দিলেন। যেকোনো জনসভায় যাবার আগে তিনি একটু আলাদা করে বাবাকে সময় করে দিতেন। তেমনি আলাদা করে তাকে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ করে দেন। আমি, রেহানা ও মা সেখানে ছিলাম। আমি বাবার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বোলাচ্ছিলাম। মা কাছে এসে মোড়া টেনে বসে বললেন, তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই- ‘অনেকে অনেক কথা বলবে। তোমার কারো কথা শোনার দরকার নেই। তাঁর অনেক কথার মধ্যে এটাই মূল কথা ছিল। এদেশের মানুষের জন্য তুমি সারাজীবন সংগ্রাম করেছ, তাই, তুমি জানো তোমাকে কি বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সেই কথা বলবে। আর কোন কথা নয়।’
তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর এসেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তখন হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে তৈরি। এদিকে লাখো জনতা ছুটে এসেছে কি নির্দেশনা দেবেন নেতা তা জানতে। একজন নেতার দায়িত্ব মানুষগুলোর যে আকাঙ্খা তাদেরকে সেই আকাঙ্খার বাণী শোনানো। আবার শত্রুপক্ষকে বিরত রাখা। ৭ মার্চের ভাষণে সেটাই স্পষ্ট ছিল। তিনি কিন্তু সব কথা বলেছিলেন, গেরিলা যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেছিলেন। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে বলেছিলেন। যে কথা বলার তা বলা হয়ে গিয়েছিল। আর তা হচ্ছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।’
ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে মানুষকে উদ্বুদ্ধকারি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে এই ভাষণ অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষক-লেখক ও সাংবাদিক বি.এন. আহুজা বিশ্বের মূল্যবান ১শ’ ভাষণের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেট স্পিচেস’ শিরোনামে যে বই বের করেন সেখানেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি লেখক এবং ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ড আড়াই হাজার বছরের যত ভাষণ তার ওপর গবেষণা করেন যে ভাষণগুলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিভিন্ন সামরিক-অসামরিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে দিয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে একটি রেফারেন্স বই বের করেন ।
যার শিরোনাম ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস : দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’ (খৃস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেরাভাষণ নিয়ে ২২৩ পৃষ্ঠার বই এটি।) সেখানেও জাতির পিতার ৭ মার্চের স্থান করে নিয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। আজকের দিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।