rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114রুপন কর অজিত: রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দলনে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ আরো অনেক ভাষা সৈনিক। বাঙালি ছাড়া ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে পৃথিবীতে এমন জাতি আর কোথাও নেই। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাঙালির প্রাণের এই বাংলাভাষা বিশ্বব্যাপী আজ সমাদৃত।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এলেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুর বেজে ওঠে সকলের মনে। ঐতিহাসিক এ গানের করুণ সুরে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে বাঙালির হৃদয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রসহ বাংলাদেশেও বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে প্রভাতফেরি, র্যালি, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণ করা অন্যতম।
কিন্তু ভাষা আন্দোলন ৭২ বছরে পা রাখলেও বরিশালে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতির প্রতি দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভাষা সৈনিকদের অবদান সম্পর্কে জানার আগ্রহও সৃষ্টি হচ্ছে না।
বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারে না। এমনকি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ দিবসটিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষকরা ছুটি ভোগ করেন।
ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নেই বরিশালের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেক প্রতিষ্ঠানে থাকলেও তা জরাজীর্ণ। ফলে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও বায়ান্নর শহীদদের বিষয়ে জানতে ও শিখতে পারছে না কিছুই। এছাড়া যেগুলো রয়েছে সেগুলোও সংস্কারের অভাবে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে। প্রতি বছর শহীদ দিবসের দু’এক দিন পূর্বে শহীদ মিনার ঘষা মাজা করা হয়। দিবস শেষ হয়ে গেলে ওই মিনারের আর খবর রাখে না।
তথ্য মতে বরিশালের দশ উপজেলায় মোট ৭৭৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। তবে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পেরিয়ে গেলেও ৩১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও দেখা পাওয়া যায়নি ভাষা শহীদের প্রতিক।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল সদরে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে মোট ১৫২টি।যার মধ্যে ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার থাকলে ও ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। তবে তথ্য মতে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছ মাদ্রাসা গুলো।
এদিকে মুলাদী উপজেলায় কলেজ রয়েছে ৭ টি যেখানে শহীদ মিনার রয়েছে ৬ টিতে এবং নেই ১ টিতে, ৩৯ টি স্কুলের মধ্যে ৩৪ টিতে থাকলেও ৫ টিতে দেখা মেলেনি শহীদ মিনারের, অন্যদিকে এই উপজেলায় ২০টি মাদ্রাসা থাকলেও একটিতে ও নেই শহিদ মিনার।
উজিরপুরে ১২ টি কলেজের ৮ টি তে থাকলেও ৪টিতে নেই শহীদ মিনার। ৫১ টি স্কুলে ৪৭টিতে রয়েছে ৪টিতে নেই।এই উপজেলায় ২১টি মাদ্রাসায়র মধ্যে ১৪টি তে থাকলেও ৭টিতে শহীদ মিনার।
বানারীপাড়ায় ৭টি কলেজের মধ্যে ৫টিতে রয়েছে ২টিতে নেই। স্কুল ৩৫ টির মধ্য ২টিতে নেই ৩৩ টিতে রয়েছে।তবে এই উপজেলায় ও ১৮টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও শহীদ মিনার নেই।
জেলার গৌরনদীতে ৬টি কলেজের ৬ টি রয়েছে শহীদ মিনার , স্কুলে ২৭ টি তার মধ্যে ২৭ টিতেই এবং মাদ্রাসা ১৫ টি তার মধ্যে ৫ টিতে শহীদ মিনার আছে বাকি ১০ টিতে শহিদ মিনার নেই।
আগৈলঝাড়ায় ০২ টি কলেজের ১টিতে রয়েছে এবং ১ টিতে নেই, ৩৪ টি স্কুলের ২৮ টিতে থাকলেও ৬টিতে নেই এবং মাদ্রাসা ৬ টি তার মধ্যে একটি টিতেও শহিদ মিনার নেই।
বাকেরগঞ্জে কলেজ রয়েছে ২৪ টি তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৪ টিতে এবং নেই ১০ টিতে, স্কুল রয়েছে ৮৪ টি তার মধ্যে ৬৯ টিতে শহীদ মিনার থাকলেও ১৫ টিতে নেই, মাদ্রাসা রয়েছে ৬৩ টি তার মধ্যে একটিতেও শহিদ মিনার নেই।
বাবুগঞ্জে কলেজ রয়েছে ০৪ টি তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ০৩ টিতে এবং নেই ০২ টিতে, স্কুল ৬৩ টি মধ্যে ২২ টিতে থাকলেও ১৪টি শহীদ মিনার নেই তাছাড়া ১৮ টি মাদ্রাসার একটিতেও টিতে শহিদ মিনার নেই।
মেহেন্দিগঞ্জে ০৬ টি কলেজের মধ্যে ০৫ টিতে রয়েছে এবং ০১ টিতে নেই, স্কুল ৬৩ টির মধ্যে ২৬ টিতে রয়েছে এবং ১০ টিতে নেই, এখানে ২৭ টি মাদ্রাসার মধ্যে ২৫ টিতেই শহীদ মিনার নেই শুধু ০২ টিতে রয়েছে।
হিজলায় ২ টি কলেজর ১ টিতে রয়েছে ১ টিতে নেই টি তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ০১ টিতে এবং নেই ০১ টিতে, স্কুল রয়েছে ১৭ টি তার মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৪ টিতে এবং নেই ০৩ টিতে, মাদ্রাসার সংখ্যা ০৯ টি হলেও একটিতেও শহিদ মিনার এই উপজেলায়।
২১ ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। তবে প্রতিবারের মতো এবারও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বরিশালের অনেক শিক্ষার্থীরা। আর এই সকল কারনে শিক্ষার্থীরা ৫২-র ভাষা আন্দোলন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নিতে পারছে না।
সরেজমিনে গেলে দেখাযায়, কাউনিয়া হাউজিং অবস্থিত শহীদ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে কোন শহীদ মিনার নেই। ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে।বরিশাল সদরে সরকারি একটি নামিদামি স্কুলে শহীদ মিনার নেই কেন এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক একে এম কামরুল আলম চৌধুরী নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ২০১৩ সনে ভবনটি নির্মানের কাজ শুরু হয় এবং সাম্প্রতি তা শেষ হয়। শহীদ মিনারের টেন্ডার হয়েছে প্রধান প্রোকৌশলি বলেছেন অতিশিঘ্র কাজটি সম্পন্ন করবেন।
নগরীর এ,কাদের চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও দেখা যায় এই চিত্র। ১৯৬৩ সনে এই বিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩২৫ জন ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে অধ্যায়ন করে। জানাযায় প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে স্কুলটি বন্ধ রেখে ছুটি পালন করা হয়।
এবিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা নাসরিন জানান, স্কুলে শহীদ মিনারের জন্য কোন বরাদ্দ না থাকায় এতো দিন শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে শহীদ মিনার তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে তৈরি হবে বলেও জানালেন তিনি।
বরিশাল নগরীর কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন শহীদ মিনার, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জায়গা না থাকায় এতদিন শহীদ মিনার করতে পারিনি, এর জন্য জায়গা নির্ধারিত হয়েছে খুব শিগ্রই আমরা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করব। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীদের র্যালি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যাব, কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনা সভা করব।
৮ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী শারিন সাদমান জানায়, আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে ভালো লাগে না। স্কুলে শহীদ মিনার থাকলে অনেক মজা হত বিভিন্ন রকম আয়োজন হত স্কুলে। এসময় সকল শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি শহীদ মিনার আবেদন করেন এই শিক্ষার্থী।
বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মোজাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে জড়িত একটি বিষয়। বরিশালে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই এই কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এখানে আসার পরে অনেক গুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি হয়েছে পর্যাক্রমে বরিশালের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নতুন প্রজন্মের দাবি ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।