আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

উজিরপুরে সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪ ৬:২০ অপরাহ্ণ উজিরপুরে সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক
Spread the love
বার্তা ডেস্ক ॥ বরিশালের উজিরপুরের বরাকোঠা ইউনিয়নের ধামুরা থেকে শের-ই বাংলা বাজার পর্যন্ত খালের মধ্যে সেতু নির্মাণের পর ৫০০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তিন মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের অনিয়ম ও গাফলতিতে দুই বছরেও শেষ হয়নি কাজ। এতে উপজেলার ধামুরা, বরাকোঠা ও উত্তর বরাকোঠা গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট  সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বরিশালের উজিরপুরের বরাকোঠা ইউনিয়নের ধামুরা থেকে শের-ই বাংলা বাজার পর্যন্ত খালে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

এবং এর সঙ্গে ৫০০ মিটার সড়ক নির্মাণে ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৭ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেসার্স মৌ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই বছর (২০২১)  ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের শুরুতেই অনিয়ম ও গাফলতি শুরু করে।

তিন মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও দুই বছরেও শেষ হয়নি। সেতু নির্মাণের আগে এলাকাবাসী ও পথচারীর যাতায়াতের জন্য একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা না করে পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলে। এতে সেতু নির্মাণকালীন সময়ে প্রায় তিন মাস পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আবার সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার পরে সেতুর গোঁড়ায় দুইপাশে মাটি না দেওয়ায় সেতুটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ফলে তিন গ্রামের সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরাকোঠা ইউনিয়নের ধামুরা থেকে শের-ই বাংলা বাজার পর্যন্ত খালের মধ্যে হাকিম ডাক্তারের বাড়ির সামনে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু সড়ক নির্মাণের কোনো কাজ শুরুই করা হয়নি। সেতু নির্মাণের কাজ শুরুতে পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলা হলেও যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক নেই। সেতুর দুই পাশে চলাচলের জন্য স্থানীয়রা সুপারি গাছের ওপর কাঠ পিটিয়ে সাকো তৈরি করে চলাচল করছে।

উওর বড়াকোঠা গ্রামের মতিয়ার রহমান সরদার (৭০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুই বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। ঠিকাদারের খামখেয়ালী, অনিয়ম ও গাফলতির কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে তিন গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে। ঠিকাদার সড়কের কাজ না করে হঠাৎ পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলে এবং যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেতুর কাজ শুরু করায় আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছি। সেতুর কাজ শেষ করে তাতে সংযোগ সড়ক না করে দুই বছর ফেলে রেখেছে।’

বড়াকোঠা গ্রামের আব্দুর রহমান সিদ্দিকি (৪৫) বলেন, ‘দুই বছর আগে সেতু করে সেতুর গোঁড়ায় মাটি না দিয়ে ফেলে রাখে ঠিকাদার। আমরা যাতায়াতের জন্য সুপারি গাছের ওপর কাঠ দিয়ে সাকো তৈরি করে যাতায়াত করে আসছি। চলতি বর্ষা মৌসুমে সাকো থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে শিশু ও বৃদ্ধাসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।’

উত্তর বরাকোঠা গ্রামের ছাবের আলী (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন তিন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় কাজে উপজেলা সদরে ও ধামুরা বাজারে যাতায়াত করে থাকে। গত দুই বছর ধরে আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই। তাছাড়া ফসল আনা নেওয়া ও গ্রামে মালামাল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। ভিন্ন পথে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে ফসলসহ মালামাল পরিবহনের সময় অপচয় ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

বড়াকোঠা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সেতু নির্মাণ করে ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছে। সেতুর গোঁড়ায় মাটি না দেওয়ায় এবং সড়ক নির্মাণ না করায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আমরা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বার বার তাগিদ দিলেও ঠিকাদার কাজ করছে না।’

অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মৌ এন্টাপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর তন্ময় এ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম বা গাফলতি হয়নি। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী ও পরিবহনসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে এবং কাজের গতি কমে গেছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।’

উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’