rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114প্রচলিত ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, আমরা বরিশালের মানুষ যেটাকে বলি “খুশির চোডে পাগল হইয়া গ্যাছে”। আমাদের, তথা সাধারণ মানুষের এখন পাগল হওয়ার মতই অবস্থা। এই পাগল প্রসংগে একটু পরে আসি। আগে মূল বিষয়ে আসি। স্বল্প বা মধ্যম আয়ের জণসাধারণের জীবনে এখন নেমে এসেছে একের পর এক প্রতিবন্ধকতা। করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার পর ফের নতুন ধাক্কা।
চারিদিকে নৈরাজ্য, বাজারে অস্থিরতা, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, সর্বশেষ ডিম ও চালের মূল্য বৃদ্ধি। এর মূলে একটাই কারণ, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের যে ঊর্ধ্বগতি তার প্রভাব সারা বিশ্বের সাথে আমাদের দেশেও পড়েছে ব্যাপকভাবে। ব্যাপকভাবে এ কারণেই বলছি, বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) কেরোসিন ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন-এ ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি না করার সিদ্ধান্তে নতুন দাম সমন্বয় করতে হয়েছিলো। যেখানে আগাম কোনো আলোচনা ছাড়াই ৫ আগস্ট মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এর পরপরই সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা, ক্ষোভ ও নিন্দা। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বিশ্ব বাজারে জ্বালানির ঊর্ধ্বগতির কথা বলা হলেও এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি সাধারণ জনগণ। তারা জানে এই সিদ্ধান্তের ফল তাদেরকেই বহন করতে হবে। ঘটেছেও ঠিক তাই, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরই বাড়ানো হলো গণপরিবহন ভাড়া। বেড়েছে শাক-সবজি, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম। ঠিক যে সময় জ্বালানির তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সে সময় ৭ বছরে বিপিসি’র প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার লাভ করার খবর প্রথম সারির অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে বিপিসি। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা গেলো কোথায়? এমন প্রশ্ন রেখেছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অবশ্য সে সময় বিপিসির চেয়ারম্যানের সাথে সুর মিলিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, বিপিসির লাভের টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা আটকে রাখা ও বিপিসি নামে ব্যাংকে এফডিআর’র খবর মিডিয়ার কল্যাণে জেনেছে অনেকেই।
এর পর দাম কমানো প্রসংগে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের মুখে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে পরবর্তীতে দামে সমন্বয় করা হবে। যদিও তার পরপরই আমরা দেখেছি বিশ্ব বাজারে দফায় দফায় কমেছে তেলের দাম। প্রতিমন্ত্রীর দাম কমানোর ঐ একটি আশ্বাসের কারণেই বা একটি আশা নিয়েই এতদিন পর্যন্ত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলো সাধারণ মানুষ। তবে ততদিনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে মধ্যম বা স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে অবশেষে ২৯ আগস্ট সোমবার বিপিসির সমন্বয়ে জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এতে সকল প্রকার তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মুখে হাসির বদলে পড়েছে হতাশার ছাপ, ভেতরে রাগ ও অন্তরে ক্ষোভ নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। অনেকেই আবার অসহায়ত্বের মত মেনে নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত। তবে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এক রাতে জ্বালানির দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বেড়ে যায়, সেখানে লিটারে দাম কমলো মাত্র ৫ টাকা? এ কেমন হিসাব?। এ তো জনআশায় গুড়েবালির ন্যায়। এটা এক ধরনের আই ওয়াশ বলেও অনেকে মনে করেন।
এতে করে আসলে কত টাকা সাশ্রয় হলো ক্রেতাদের? আদৌ দাম আরও কমবে কিনা এমন হাজারো প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে। আবার এর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেউ কেউ ঠাট্টার ছলেও বলছেন “৫ টাকা দাম কমায় বেজায় খুশি, “খুশির চোডে পাগল হইয়া গ্যাছি”। আসলে এমনটা বলারই কথা, কারণ এই খুশি সেই খুশি না, এটা অতি দু:খের খুশি। এজন্যই প্রথমে বলেছিলাম সেই প্রবাদটির কথা। এর আগে জ্বালানির দাম বাড়ার প্রাক্কালে অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, তেলের দাম বাড়ার পর সব জিনিসের যে দাম বাড়বে বিষয়টি জানার পরেও কি করে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।
তাদের প্রশ্ন- জ্বালানির দাম আবার যখন কমবে তখন কি সব কিছুর দাম কমানো সম্ভব? এ কথার উত্তর বা জবাব কে দেবে? কে করতে পারবে দাম নিয়ন্ত্রণ? হয়ত কেউই না। দিন শেষে কোপটা জনগণের উপরেই পড়বে। পড়বে কি…, ইতিমধ্যে পড়েছেও। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করি। জনবান্ধব সিদ্ধান্তের আশায় রইলাম।
মো: ফিরোজ গাজী
যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক
gazifirozbsl@gmail.com