তরিকুল ইসলাম রতন, স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের সামনেই বক্তব্যে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশীদ মিয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্যে বিষোদগার শুরু করেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এসময় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য বন্ধ করে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন সাবেক কমান্ডার আবদুর রশীদ। এক পর্যায়ে তিনি সবার সামনেই ওই মুক্তিযোদ্ধার উপর ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানের শেষ দিন বরগুনার সার্কিট হাউস মাঠে ১২ শ’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান করে জেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এনবিআর সদস্য বরগুনার কেওড়াবুনিয়া এলাকার এনায়েত হোসেন হোসেন বক্তব্যে বরগুনার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ পড়া ও ভূয়া ব্যক্তিদের তালিকাভুক্তকরণ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। এনায়েত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, ক্যাম্পে দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছে অথচ, তাদের নাম তালিকায় আসেনি, যারা তখন কিছুই করেনি তাদের নামও তালিকায় এসেছে।” সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রশীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা কে কোথায় কি করেছেন আমার জানা আছে। অথচ, আমি কে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশীদের সমালোচনা শুরু করেন। এনায়েত হোসেন বলেন, ” আমি শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনই করিনি, আমার হাতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করেছি। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে চাকরি করেছি, দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হয়েছি।
এসময় মঞ্চে উপস্থিত সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রশীদ উত্তেজিত হয়ে অতিথিদের সামনেই এনায়েত হোসেনকে বক্তৃতা বন্ধ করতে বলেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রট এনায়েত হোসেনের কাছে এসে বক্তৃতা বন্ধ করতে এবং বলেন। ওই দুজন ম্যজিষ্ট্রেটকে বলতে শোনা যায়, এটা জেলা প্রশাসনের প্রোগাম, আপনি বিশৃঙ্খলা করছেন, আপনি যান এখান থেকে। জবাবে এনায়েত বলেন, মন্ত্রী মহোদয় বললে আমি নেমে যাবো। পরে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। এনায়েত হোসেন বলেন, ” অনেক কথা বলার ছিল, আপনারা বলতে দিলেন না”।
এসময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর, বরগুনা পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি এ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ ও বেতাগী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মেয়র আলহাজ্ব এবিএম গোলাম কবির সহ প্রমুখ।
এবিষয়ে এনায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে অনুষ্ঠানে ইনভাইট পাইনি। এমনকি আমার নামে ক্রেস্ট ও করা হয়নি। আমি যখন এটা জানতে চেয়েছি তখন আবদুর রশীদ আমাকে প্রশ্ন করে আমি কে! আমি কে সেটাই মন্ত্রীর সামনে সবাইকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্ত আমাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেছে। এটা স্রেফ ধৃষ্টতা প্রদর্শন। আবদুর রশীদ দির্ঘবছর ধরে এখানের কমান্ডার। সে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে অনৈতিকভাবে ভূয়াদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। তার এসব কর্মকান্ড মন্ত্রী মহোদয়কে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্ত আমাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রশীদ বলেন, উনি (এনায়েত) এলাকায় থাকেন না। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের প্রোগ্রামের অনেক জন্য কষ্ট করেছি। মঞ্চে হঠাত এসে অতিথিদের সামনে বিব্রতকর বক্তব্য দেয়ার কোনো মানে হয়না। ওনার ক্ষোভ থাকলে সেটা আমাকে বলতে পারতেন বা মন্ত্রী মহোদয়কে জানাতে পারতেন।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে এ ধরণের বক্তব্যে অতিথিরা বিব্রত ছিলেন। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেনকে নিবৃত করতে চেষ্টা করেছি। আমরা এ পরিস্থিতির জন্য লজ্জিত ও দুঃখিত।