ভোলার লালমোহনে সেচের নামে বোরো চাষীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছে সেচ প্রকল্পের ম্যানেজাররা। উপজেলার প্রায় ৮০টি প্রকল্প এলাকায় এমন নৈরাজ্য চললেও দেখার যেন কেউ নেই। ধান কাটার আগেই গন্ডা প্রতি (৮ শতাংশ) পাঁচশত টাকা করে আদায় করে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠছে। গ্রামের হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকরা না পারছে কইতে, না পারছে সইতে। ম্যানেজারদের চাহিদা মত টাকা না দিতে পারলেই কৃষকদের উপর বিভিন্ন কায়দায় নিপিড়ন চলে। সেচ প্রকল্পের ম্যানেজারদের এমন রাম রাজত্ব বন্ধে সরকারের উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ দাবী করছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি কমিটিরি সভাপতি লালমোহন উপজেলা অফিসার আল-নোমান বলেন, এ ধরনের টাকা নেয়ার কোনো বৈধতা নেই। যারা এমন কাজ করবে তাদেরকে আইনের আওতায় নেয়া হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় ৭৩২৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। চাড়া বোরো রোপনের সময় জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ৩৩ টি ভুগর্ভস্থ সেচনালা স্থাপন করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশ (বিএডিসি)।এই সেচ নালা থেকে সুসম পানি বন্টনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জুলুমের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব কৃষি অফিসের নয়। বিএডিসি’র ভোলা জেলা কর্মকর্তা ফরিদুজ্জামান জানিয়েছেন, শুধুমাত্র অংশীদারিত্বমূলক ভাবে ২ কিউসেক পানি সরবরাহের জন্য মটর পাম্প ভাড়া বাবদ দশ হাজার টাকা এবং ৫ কিউসেক পানি সরবরাহের জন্য বিশ হাজার টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হয় কৃষকদের। এর বাইরে বিদ্যুত সরবরাহ সংক্রান্ত কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এর ব্যয় মেটানো এবং সেচনালা দেখবাল করার জন্য দু’একজন তত্বাবধায়কের পারিশ্রমিক দেয়া ছাড়া আর কোনো খরচ নেই সেচ প্রকল্পে। অথচ সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার নামধারী চক্রের সদস্যরা সাধারণ কৃষকদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হাতিয়ে নেয়া এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা উপর মহলেও চলে যায় বলে জানাগেছে । উপজেলার কালমা, জনতাবাজার, রায়রাবাদ ও চরটিটিয়া মৌজায় সরেজমিন ঘুরে কথা হয় অনেক কৃষকের সাথে। এলাকার কৃষক আব্দুর রব মুন্সি, শফিজল, সাদ্দাম খা, বাবুল খা, হরলাল দাস এবং নীখিল দাসসহ অনেক কৃষক জানান, আমাদের কাছ থেকে সেচ বাবদ গন্ডা প্রতি ৫ শত টাকা করে আদায় করছে স্কীম ম্যানেজাররা। তবে টাকা কে উত্তোলন করছে তা ভয়ে জানাতে চাইছেন না তারা। এমন অবস্থা উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সেচ প্রকল্পে। এদিকে সেচ প্রকল্পে এমন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে উপজেলার জনতাবাজার এলাকার কৃষক আলাউদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং কৃষি অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ঐ অভিযোগে স্থানীয় রায়রাবাদ মৌজার সেচ ম্যানেজার জসিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।