rocket
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114বার্তা ডেস্ক ॥ শীতকালীন সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় পুষ্টিকর সবজি বাঁধাকপি। পাতাকপি নামেও বেশ পরিচিত। শীতকালে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি হয়। এ সবজি খেতে যেমন মজা তেমন এর গুণও রয়েছে প্রচুর। পুষ্টির জন্য আমরা বেশি বেশি করে খেতে পারি এই সবজি। অনেকভাবে বাঁধাকপি খাওয়া যায়। সবজি হিসেবে ভাজি করে তো খাওয়া যায়ই, তাছাড়া বাঁধাকপি স্যুপ, বাঁধাকপি সালাদ ইত্যাদি উপায়ে খেতে পারেন স্বাস্থ্যকর এই সবজিটি। বিশেষজ্ঞরা জানান, ওজন কমানো থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো রোগও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে বাঁধাকপি ।
বাঁধাকপির বৈজ্ঞানিক নাম ব্রেসিকা ওলেরেসিয়া। বাঁধাকপির আদি নিবাস দক্ষিণ ইউরোপে। বাঁধাকপির উৎপাদক দেশ হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। এ ছাড়া অন্যান্য প্রধান উৎপাদক দেশ হলো ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া। বাংলাদেশে ১৯৬০-এর দশকে এর চাষ শুরু হয়। আমাদের দেশে প্রাপ্ত বাঁধাকপির উন্নত জাতগুলো হচ্ছে বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতি), বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত), বারি চীনা কপি, ইপসা বাঁধাকপি-১ প্রভৃতি।
বাঁধাকপিতে উপস্থিত ফোটোনিউট্রিয়েন্টস, যেমন পলিফেনল এবং গ্লকোসিনোলেট শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা করনারি আর্টারি ডিজিজ, অর্থাৎ হার্টের রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি ক্যানসার, অ্যালঝাইমারস এবং ম্যাকিউলার ডিজেনারেশনের মতো রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শীতকালে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতেই থাকে। বাঁধাকপি শীতকালে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও হরেক রকম পুষ্টিগুণ-সমৃদ্ধ বাঁধাকপি আরও নানা শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।
বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম। এই তিনটি পদার্থ হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এ ছাড়াও ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও কে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখেন, বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তাঁদের ক্ষেত্রে কম থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ৯১.৯ গ্রাম পানি, ১.৮ গ্রাম আমিষ, ০.১ গ্রাম চর্বি, ০.৬ গ্রাম খনিজ, ১.০ গ্রাম আঁশ এবং ৪.৬ গ্রাম শ্বেতসার রয়েছে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম ৩৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪৪ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪.১ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৮ মিলিগ্রাম ও সালফার ৬৭ মিলিগ্রাম।
বাঁধাকপি খাওয়া যায় কাঁচা, রান্না করে ও শুকিয়ে। এর পুষ্টিগুণও কোন পদ্ধতিতে খাওয়া হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে। এক কাপ আধা সিদ্ধ বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সির তিন ভাগের এক ভাগ। ফাইবার তো আছেই; সেই সঙ্গে আছে ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, কেসহ আরও অনেক উপাদান।
বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও আছে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা খাদ্যতালিকায় অনায়াসে রাখতে পারেন বাঁধাকপি। বিশেষ করে সালাদে রাখতে পারেন। স্যালাডে বাঁধাকপি থাকলে ক্যালরি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপি অত্যন্ত সহায়ক। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বাঁধাকপির রস আলসারে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করবে।
শীতকালে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের কারণে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। মরসুমি এই রোগের সঙ্গে লড়তে অস্ত্র হতে পারে বাঁধাকপি। ভিটামিন সি ও নানাখনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
বাঁধাকপি পিত্তাশয়কে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পিত্তাশয়কে আরও কার্যকরী করে তোলে বাঁধাকপি। এতে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার ও ফলিক অ্যাসিড। বাঁধাকপি শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বাঁধাকপি বিশেষত লাল প্রজাতির বাঁধাকপি শরীরের বেটা-ক্যারোটিন, লুটিন ও হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়ক অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায় বাঁধাকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, বাঁধাকপি বিশেষ ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। আসলে সালফারসমৃদ্ধ উপাদান গ্লুকোসাইনোলেটস তৈরি হয় বাঁধাকপি থেকে, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। বাধাকপি ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে। বাধাকপিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করে শরীরকে ক্যানসার মুক্ত রাখে।
টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায় বাঁধাকপি। প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাইপার-গ্লাইসেমিক প্রপার্টিজ রয়েছে, যা ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি রয়েছে।
বাধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাধাকপির রস নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দূর হয়। এছাড়া বাধাকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাধাকপি একটি অপরিহার্য সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, তাদের জন্য কাঁচা বাধাকপি খাওয়া উত্তম।
বাঁধাকপি নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমায়। বাঁধাকপির পাতাগুলি ছিঁড়ে নিয়ে একটা কাপড়ে রেখে কপালে বেঁধে দিন। কিছু সময় পরই দেখবেন মাথা যন্ত্রণা একেবারে গায়েব হয়ে গেছে। আর যদি এমনটা করতে না চান, তাহলে আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি আছে, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কী সেই পদ্ধতি? পরিমাণ মতো বাঁধাকপি নিয়ে ২৫-৫০ এম এল জুস বানিয়ে পান করুন। এই ঘরোয়া ওষুধটি ক্রনিক মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজে আসে।
শীতে প্রতিদিন একবার বাঁধাকপির স্যুপ খেলে দ্রুত ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে। কীভাবে এই স্যুপ বানাবেন? এজন্য লাগবে- পরিমাণ মতো বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, ১টি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ, ২টি কাঁচামরিচ, ২ কোয়া রসুন, ১টি ডিম, অলিভ অয়েল, গোলমরিচ, স্বাদমতো লবণ আর ৬ কাপ পানি প্রথমে কড়াইতে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল দিন। এতে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও রসুন কুঁচি দিয়ে হালকা ভেজে, পানি ঢেলে দিন। এবার সব সবজির কুচি দিয়ে সেদ্ধ করুন। সবজি আধা সেদ্ধ হয়ে এলে ডিমের সাধা অংশ ফেটিয়ে দিয়ে দিন। লবণ আর গোলমরিচ দিন। নামানোর আগে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন।
বাঁধাকপি খাওয়ার সময় সাবধান
বাঁধাকপি খাওয়ার সময় পুষ্টির বদলে হিতে বিপরীতও করতে পারে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, বাঁধাকপিতে থাকে সালফোরাফেন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ক্ষতি করতে পারে মস্তিষ্কের। চিকিৎসকরা বলছেন, বাঁধাকপিতে লুকিয়ে থাকা টেপওয়ার্ম মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।
কীভাবে ক্ষতি করে লুকিয়ে থাকা কৃমি? বাঁধাকপি খাওয়ার পর তাতে থাকা কৃমি শরীরে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে চলে যায় মস্তিষ্কে। এই কৃমি মিউকোসা অতিক্রম করে পৌঁছয় রক্ত প্রবাহে। সেই ব্লাড ব্রেন ব্যারিয়ার ভেঙে চলে যায় মস্তিষ্কে। যা মস্তিকে তৈরি করে প্রদাহ। মাথাব্যথা বা ব্রেইন ফগ হতে পারে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, বাঁধাকপি ভাল করে ধুয়ে খেলে টেপওয়ার্ম হয় না। সম্ভব বলে পানিতে ধোয়ার পর ৫ মিনিট রেখে দিন গরম পানিতে। তার পর ধুয়ে রান্না করুন। যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যে কোনও শাক-সবজিতে কৃমি ও জীবাণু থাকে। ফলে বাঁধাকপি খেলেই ক্ষতি হবে এমনটা নয়। সব শাক-সবজিই ভাল করে ধুয়ে খাওয়াই শ্রেয়। দরকারে গরম পানিতেও ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে।