বার্তা ডেস্ক ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১ আসনের প্রার্থীরা সোমবার প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। ফলে শহর থেকে তৃণমূল সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। মূল সড়ক ও অলিগলিতে শুরু হয়েছে নৌকা, লাঙলসহ অন্যান্য প্রার্থীদের শ্লোগান। চায়ের দোকানের আড্ডার আলোচনায়ও নির্বাচন। সোমবার বিভাগের প্রতিটি সংসদীয় আসনে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক পাওয়ার পরপরই সংসদীয় আসনের প্রার্থীরা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মিছিল ও জনসংযোগে নেমেছেন। দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক জানা থাকায় আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন নেতাকর্মীরা। ফলে তারা দ্রুত দলীয় প্রতীকের ব্যানার, ফেস্টুন, হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন সমর্থকরা। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রচারে নেমেছেন। বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের লড়াইয়ে বরিশাল বিভাগের ২১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ১৭৩ জনের মধ্যে শেষপর্যন্ত ১২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। সোমবার হাইকোর্টে রীট করে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী তার প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় এখন মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১ জন। এরমধ্যে বরিশাল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু ও পিরোজপুর-২ আসনে জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে তিনটি আসন ছেড়ে দেয়া ও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মি আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এখন নৌকার প্রার্থী রইলেন ১৭ টি আসনে। অপরদিকে আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া জাকের পার্টির নয়জন প্রার্থী রোববার তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ বিভাগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন ১৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন প্রায় ২৮ জন। বাকিরা অন্যান্য ছোট ছোট দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। সূত্রমতে, আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটের লড়াইয়ে বরিশাল-১ আসনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ওই আসনে আরো দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। বরিশাল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেননসহ সাতজন, বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি লাঙল প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু, ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুরি মার্কার প্রার্থী সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতান, প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ট্রাক প্রতীকের মোঃ আতিকুর রহমানসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরদার খালেদ হোসেন স্বপন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। ওই আসনে এখন তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় সদর বা বরিশাল-৫ আসনের বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-নৌকা, জাতীয় পার্টির মোঃ ইকবাল হোসেন তাপস-লাঙল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রচার যুদ্ধে নেমেছেন। এ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ হাইকোর্টে রিট করে সোমবার তার বাতিল হওয়া প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে ওই আসনে প্রার্থী রয়েছেন সাতজন। বরিশাল-৬ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচারযুদ্ধে নেমেছেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, জাতীয় পার্টির লাঙল মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান এমপি রতœা আমীন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ট্রাক প্রতীকের আলোচিত প্রার্থী শামসুল আলম চুন্নু। ওই আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন মোট ১০ জন প্রার্থী। এ ছাড়া পটুয়াখালীর চারটি আসনে ২২ জন, ভোলার চারটি আসনে ১৬ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এরমধ্যে ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রভাবশালী প্রার্থী তোফায়েল আহমেদও রয়েছেন। পিরোজপুরের তিনটি আসনে ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এরমধ্যে পিরোজপুর-২ আসনটি জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর পিরোজপুর-৩ আসনের আট বারের এমপি ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজীকে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বরগুনার দুইটি আসনে মোট ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। যারমধ্যে বরগুনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিকে বাদ দিয়ে নাদিরা সুলতানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নিজে চোখের জল ফেলে উপস্থিত সবাইকে হাসতে বললেন ॥ ছিলেন টানা দুই বারের একজন পরিচ্ছন্ন সংসদ সদস্য। একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন তালিকায় ছিলো তার নাম। কিন্তু দুইবারই তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এ রাজনৈতিক নেতা হলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো। তারপরেও ১৪ দলের জোটের কারণে এবারও তিনি ভাগ্যবঞ্চিত হয়েছেন। ওই আসনে জোটের প্রার্থী করা হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে। দলের সিদ্ধান্তে রোববার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার মোঃ ইউনুস তার মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তার নির্বাচনী এলাকা উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেননকে নিয়ে হাজির হন। দলের কার্যালয়ে উপস্থিত শতশত নেতাকর্মীদের সামনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেননকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তালুকদার মোঃ ইউনুস নিজে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের হাসতে অনুরোধ করেন। মনোনয়ন বঞ্চিত তালুকদার মোঃ ইউনুস তার বক্তব্যে বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে আজ মাঠে নেমেছি। এবারের যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে রাশেদ খান মেননকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে হবে। তালুকদার মোঃ ইউনুস আরও বলেন, রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-২ আসন থেকে নির্বাচিত করে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করতেই তিনি সবকিছু ত্যাগ করেছেন।