আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

মৃদু শীতে চায়ের দোকানে নির্বাচনী জম্পেস আড্ডা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৩ ৬:১০ অপরাহ্ণ মৃদু শীতে চায়ের দোকানে নির্বাচনী জম্পেস আড্ডা
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। প্রতিদিন মৃদ্যু শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রামের প্রতিটি পাড়া ও মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে জম্পেস আড্ডায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা। পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষে শুরু হয়েছে আনন্দ মিছিল। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী (২৮ নভেম্বর) বরিশাল-১ আসনে দুইজন, বরিশাল-২ আসনে সাতজন, বরিশাল-৩ আসনে ছয়জন, বরিশাল-৪ আসনে দুইজন, বরিশাল-৫ আসনে ছয়জন এবং বরিশাল-৬ আসনে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হবে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে প্রতিটি আসনে শেষপর্যন্ত অন্যান্য দলের কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন, যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের অতীত কর্মকা- পর্যালোচনা, মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের কারা কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তারা নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কতোটুকু অবদান রাখতে পারবেন, শেষপর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসলে আগামীতে তাদের দলের নিবন্ধন থাকবে কিনা, আর বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে এখন যাদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের হয়ে (সদ্য যোগদান করা) আনন্দ মিছিল কিংবা সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে, তাদের কতোজনকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এসব খুঁটি নাটি বিষয় নিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত অবর্ধি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে চায়ের দোকানগুলো। এখানে এ যাবত আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পাটি, জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টি, এনপিপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মনোনীত ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর পরই বরিশাল-৩ আসনের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে আড্ডারত স্থানীয় প্রবীণ ও নবীন ভোটারদের মাঝে উপস্থিত হয়ে শোনা গেছে তাদের নির্বাচনী খোস গল্প। যুব ভোটার উপেন চন্দ্র মন্ডল বলছিলেন, ১৯৭২ সালের পর এবারই প্রথম তাদের আসনে সরাসরি তৃণমূল থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। এর আগে বরাবরই এ আসনটি মহজোটের শরিক দল হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার আগে এ আসনে বিএনপি দলীয় সাংসদ ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবির মুখে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারই প্রথম সরাসরি নৌকার প্রার্থী হিসেবে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখন তারা দলের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।
উপেন চন্দ্র মন্ডলের কথা সায় দিয়ে যাচ্ছেন ওই চায়ের দোকানে উপস্থিত অন্যান্য প্রবীণ ও নবীন ভোটাররা। তারাও বলেন, এবার আর ভুল করা যাবেনা। এতোদিন এখানে আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় এলাকায় কোনধরনের উন্নয়নই হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শরিক দলের প্রার্থীরা উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই কোণঠাসা করে রেখেছেন। তাই এবার এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করার মাধ্যমে বরিশাল-৩ আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হবে। তারা আরও বলেন, এবার যদি কোনক্রমেই নৌকার প্রার্থী এখানে বিজয়ী হতে না পারেন, তাহলে আর কোনদিন এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাবেনা।
একইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বাবুগঞ্জ বাজারের একটি চায়ের দোকানের নির্বাচনী আড্ডায় শোনা গেছে, বরিশাল-৩ আসনটি বরাবরেই শরিক দলের আসন। এখানে পর পর দুইবার জাতীয় পার্টির হেভিওয়েটের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এবারও তাকে জাপা মনোনয়ন দিয়েছেন। এর আগে এখানে এমপি ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মোঃ টিপু সুলতান। তার আগে এখানে বিএনপির এমপি ছিলেন।
ওয়াহিদুল আলম বিপলু নামের এক প্রবীণ ভোটার বলেন, একসময়ের সর্বহারা অধ্যুষিত এলাকা ছিলো বাবুগঞ্জ। আর যাই হোক গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- যেমন দূর করেছেন, তেমনি নিরাপদে মানুষ বসবাস করার সুযোগ পাঁচ্ছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে হলেও পূর্ণরায় গোলাম কিবরিয়া টিপুকেই এলাকাবাসীর এমপি নির্বাচিত করা উচিত। ওই প্রবীণ ভোটারের কথায় সায় দিয়ে হাসানাত খান তরুন, আরিফ হাওলাদারসহ উপস্থিত অন্যান্য ভোটারও প্রায় একই কথা বলেন।
দেহেরগতি বাজারের একটি চায়ের দোকানের আড্ডায় ভোটাররা বলছিলেন, বরিশাল-৩ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগ চরম ভুল করেছে। যার খেসারত দিতে হতে পারে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে। কারণ এখানে অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্বেও যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দরাই তার সাথে নেই। তাই আগামী নির্বাচনে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষানুরাগী আতিকুর রহমানের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে মৃদ্যু শীতের আগমনী বার্তার সাথে বরিশাল জেলার ছয়টি আসনেই এখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এরমধ্যে বিশেষ করে গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে জম্পেস আড্ডায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা।