আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ শিকারে নারী-শিশুদের ব্যবহার বাড়ছে


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩ ২:৫৮ অপরাহ্ণ নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ শিকারে নারী-শিশুদের ব্যবহার বাড়ছে
Spread the love

বার্তা ডেস্ক: ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১২ অক্টোবর থেকে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। আর এই প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণে মৎস্য বিভাগের নেতৃত্বে জলে-স্থলে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান।

টানা অভিযানে এরইমধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগে সাড়ে ৬০০ জেলেকে কারাদণ্ড এবং প্রায় আট কোটি টাকার অবৈধ জাল নদী থেকে উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে। এরপরও কোনোভাবেই অসাধুদের থামানো যাচ্ছে না এবং নদী থেকে ইলিশ আহরণও বন্ধ করা যাচ্ছে না।

অভিযানিক দল ও কার্ডধারী জেলেদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নিত্যনতুন কৌশলে নদীতে মাছ শিকারে নামছে অসাধুরা। আর এদের মধ্যে মৎস্য বিভাগের কার্ডধারী কিংবা পেশাদের জেলের সংখ্যা নেই বললেই চলে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও জেলে তারেক জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অসাধু জেলেরা মেহেন্দেীগঞ্জের কালাবদর, মাছকাটা, মেঘনা নদীতে অবাধে মাছ শিকার করছে। স্থানীয়ভাবে তারা মৌসুমি জেলে হিসেবে পরিচিত হলেও প্রভাবশালীদের কারণে কেউ বাধা দিতে সাহস পায় না। তাই সবকিছু চোখের সামনে হলেও সবাই মুখ বুঝে থাকে।

তিনি জানান, অন্য পেশার মতো প্রতিনিয়ত মাছ শিকারের এই পেশায়ও (জেলে) নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হয়েছে। সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে তুলনামূলকভাবে আগের থেকে ভালো মানের এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরে ফেললে ইলিশের বিস্তার কমে যাবে এ বিষয়টি মৌসুমি জেলেরা বুঝতে চায় না। এবারে তো ছোট ছোট ছেলেরাই বেশি নদীতে নামছে।

মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, শুধু বরিশাল জেলার দুই লাখ ৮৫ হাজার জেলের মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জেই আছে ২৮ হাজার জেলে। তারা যদি সবাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে মাছ শিকারে নদীতে নামতো তাহলে তো গোটা সিস্টেমটাই ক্ষতিগ্রস্ত হত। তারপরও সুযোগ বুঝে যারা নামছে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিন-রাত অভিযান চলমান।

তিনি বলেন, এবার সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা মাছ শিকার করছে তাদের অহরহ সর্বোচ্চ সাজা ও জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও মুষ্টিমেয় অসাধু জেলেরা নিত্যনতুন কৌশল পাল্টে নদীতে ইলিশ শিকারে নামছে।

তিনি বলেন, প্রথমদিকে ধাওয়া দিয়ে বা গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা যেত। তবে এখন ধরা পড়ার বিষয়টি এড়িয়ে মাছ শিকারের কৌশল রপ্ত করছে তারা। নতুন কৌশল হিসেবে ছোট নদীতে জাল ফেলে দিয়ে তীরে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। আবার সুযোগ বুঝে জাল টেনে নিয়ে আসে। যদিও এটা মেঘনাসহ বড় নদীগুলোয় সম্ভব হয়না, সেখানে ধরা পড়তেই হচ্ছে।

এদিকে নদী কেন্দ্রিক জীবনযাপন হওয়ায়, বেদেরা নদীতেই থাকবে মাছ শিকার করবে এটা এ অঞ্চলের স্বাভাবিক নিয়ম জানিয়ে তিনি বলেন, এবারে দেখছি অনেকেই বেদে পরিবারের বেশ ধারণ করছে। যে ছদ্মবেশ অনেকেই নদীতে জাল ফেলে নারী ও শিশু-কিশোরদের দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছে। কারণ তারা জানে বেদে নারীদের সাধারণত ধরা হয় না। আবার অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মাছ শিকার করা অবস্থায় পাওয়া গেলে, তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই বিষয়টিও অসাধুরা রপ্ত করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি অভিযানে গিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিষয়টি দেখেছেন। ভবিষ্যতে এসব বিষয়গুলোও ভেবে দেখার কথা জানিয়েছেন তারা। তবে সবকিছুর পেছনে সমাজের সবার সচেতন হওয়ার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন।

আর উৎপাদন কমে গেলে ইলিশের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দেবে বলে মনে করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। মৎস্য ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, শুধু আমদানি কম থাকায় গতবছরের থেকে এবারে নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বরিশালে ইলিশের দাম বাড়তি ছিল। এমনকি নিষেধাজ্ঞার সময়েও যারা লুকিয়ে মাছ কিনছেন, যতটুকু জেনেছি জাটকা ইলিশ সাড়ে ৪০০ টাকা এবং বড় সাইজের ইলিশ ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার কমে কিনতে পারেনি। এতে তো ক্রেতাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চললে ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়লে জাতীয় এই মাছের দাম কমবেই।