বার্তা ডেস্ক ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। আকাশে ওড়ানো একেকটি ফানুস সন্ধ্যা বেলায় এ যেন ‘তারা’র মেলা। এ দৃশ্য পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রবারণা উৎসবের।
গতকাল রবিবার(২৯ অক্টোবর) সকাল সাতটায় পঞ্চশীল ও অষ্টশীল প্রার্থনা এবং বুদ্ধদেবের পূজার মধ্য দিয়ে দিনটির শুভ সূচনা করা হয়। আর উৎসবকে ঘিরে উপজেলার বৌদ্ধ বিহার গুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। বাড়ি বাড়ি প্রতিযোগীতা মূলক চলছে রাখাইন নারীদের নানা রকম বাহারি পিঠা, পুলি, পায়েশ তৈরি। নতুন পোশাকে নিজেদের আবৃত করেছেন সব বয়সী নারী- পুরুষ ও শিশুরা। শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে রাখাইনপল্লীতে এখন বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ।
কুয়াকাটার পাশাপাশি গোড়া আমখোলাপাড়া, কেরানীপাড়া, কালাচানপাড়া, বৌলতলীপাড়া, হাঁড়িপাড়া, বেতকাটাপাড়া, নাচনাপাড়াসহ উপজেলার ২৮টি রাখাইন পাড়ায় আজ ফানুস উড়িয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন। চমৎকার এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করে শত শত মানুষ। এ ছাড়া আজ প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে মোমবাতি প্রজ্বালন, ঘণ্টা বাজানো, পঞ্চমশীল অনুষ্ঠান, পূজা–অর্চনা ও ধর্মীয় আলোচনা হয়। তবে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ এ ফানুস ওড়ানো।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সূত্রে জানা গেছে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দ্বিতীয়তম ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এদিনে গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন।এ কারণে এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ফানুস উৎসব এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা রাখাইন সম্প্রদায়।
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৈদ্ধ বিহার এর উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রবংশ ভিক্ষু বলেন, ‘আমাদের এ উৎসব কালের বিবর্তনে সর্বজনীনতার রূপ লাভ করেছেন। প্রবারণা উৎসব পালনে সরকারি ভাবে আমাদের সহায়তা দেওয়া হলেও তা পরিমানে কম। তবে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ায় প্রবারণা উৎসবে ফানুস ওড়ানো আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে যে যতটুকু পারছেন, ততটুকু করে উৎসব পালন করার চেষ্টা করছেন।
কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার মাতুব্বর, উয়াং মং উচাচী বলেন, গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। ধ্যানশিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে পরিষ্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করা হয়। প্রবারনা পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ বিহারে প্রথমে অষ্টমশীল গ্রহন করে এবং বিভিন্ন পিঠা দান করা হয়েছে। এছাড়া প্রবারনা সম্পর্কে ধর্ম আলোচনা করা হয়। আর রাতে আকাশে একের পর এক ওড়ানো হয় নানা রঙের ফানুস।
মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু ও গৌতম বুদ্ধ পাঠাগারের গবেষক উত্তম ভিক্ষু বলেন, আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণে এ উৎসব পাল করা হচ্ছে। এছাড়া মন্দিরে বুদ্ধের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিটি রাখাইন পাড়ায় প্রবারণা উৎসব পালন করার জন্য ৫০০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। রাখাইনরা যাতে এ উৎসব ভালোভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলার প্রত্যেকটি পাড়ায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।