বার্তা ডেস্ক ॥ বিধবা সালেহা খাতুনের মোবাইল ফোনে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটা কল আসে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের স্টাফ পরিচয় দিয়ে তাঁকে জানানো হয়, তথ্য আপডেট না করলে তাঁর বিধবা ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে তথ্য আপডেট করলে আজই তিনি চলতি কিস্তির ৩ মাসের টাকা পাবেন। এজন্য এখনই তাকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আসতে হবে নতুবা বিকল্প পদ্ধতি এসএমএসের মাধ্যমে তথ্য আপডেট করতে হবে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে একটি কোড যাবে এবং সেই কোড নম্বরটি বলতে হবে।
বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের বিধবা সালেহা খাতুন ভাবলেন, এখন নদী পার হয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরবর্তী সমাজসেবা অফিসে যাওয়ার চেয়ে বিকল্প পদ্ধতিটাই উত্তম। তাই তিনি সরল বিশ্বাসে বিকল্প অপশনেই রাজি হলেন এবং তাঁর মোবাইলের মেসেজে আসা কোড নম্বরটি জানিয়ে দিলেন কলারকে। এরপরে তাঁকে জানানো হয় তাঁর তথ্য আপডেট হয়েছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মোবাইলে ভাতার টাকা চলে যাবে। এরপরে সালেহা খাতুন তাঁর ব্যালান্স চেক করতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট শূন্য। ভাতার দেড় হাজার টাকার সঙ্গে তাঁর আগের জমা করা এক হাজার টাকাও উধাও।
বাবুগঞ্জ উপজেলার বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতার ত্রৈমাসিক কিস্তির প্যারোল (টাকা ছাড়করণ) শুরুর খবর জেনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। এভাবেই সমাজসেবা অফিসের নাম ভাঙিয়ে কল করে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা ও মোবাইল অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ভাতাভোগীকে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে নগদ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে টাকাসহ গোপন পিন নম্বর নিয়ে গেছে প্রতারক চক্রটি।
শুক্রবার বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী হেলেনুর বেগমকেও একই নম্বর থেকে ফোন করে একই কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হয় গোপন পিন নম্বর। তবে সৌভাগ্যক্রমে তাঁর নগদ অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না থাকায় তিনি আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যান। এছাড়াও শুক্র এবং শনিবার উপজেলার পাংশা গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী আলী হোসেন, দেহেরগতি গ্রামের মনির হাওলাদার এবং শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতাভোগী ফারজানা আক্তারকে কল করে তাদের পিন নম্বর হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ব্যালান্স শূন্য করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ফোন নম্বরটি বন্ধ পান তারা।
এসব অভিযোগ পাওয়ার পরে শনিবার দুটি নম্বরে কল করা হলে রিসিভ করে পরক্ষণেই লাইন কেটে দিয়ে নম্বরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরে অনেকবার ওই দুটি নম্বরে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে কখনোই কাউকে ফোন করা হয় না। এগুলো প্রতারক চক্রের কারসাজি। তারা নানান কৌশলে আগে ভাতাভোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপরে তাদের ফোন করে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দিয়ে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে গোপন পিন নম্বর সংগ্রহ করে এবং টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক কিস্তির টাকা প্যারোল দেওয়া (ছাড়করণ) শুরু হয়েছে। এই খবর পেয়েই হয়তো সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। তাই পরিচয় যা-ই দিক না কেন; মোবাইল ফোনে কখনোই কাউকে কোনো তথ্য, কোড কিংবা পিন নম্বর দিতে নিষেধ করেন তিনি।
বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম বলেন, গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে কথার ফাঁদে ফেলে মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্ত করে টাকা উদ্ধার করতে হলে একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।