সন্তান হিজড়া, তাই পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দিলেন সমাজপতিরা
আজকের বার্তা | প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২১ ৩:০৮ অপরাহ্ণ
Spread the love
বার্তা ডেস্ক ॥
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর এলাকার চরঘাটিনা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম (২৭) ও তাঁর পরিবারকে এক মাসের মধ্যে জমি–বাড়ি বেচে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন সমাজপতিরা। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মনিরুল সম্প্রতি হিজড়াদের দলে যোগ দেওয়ায় সালিস বসিয়ে তাঁদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ গ্রামের দুজন ‘মুরুব্বিকে’ গ্রেপ্তার করেছে। চরঘাটিনা মহল্লায় মো. হাফেজ মিস্ত্রির ছেলে মনিরুল ইসলাম ‘পুরুষ’ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও ১৫ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে তাঁর আচরণ ও দৈহিক কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। মনিরুলের এমন পরিবর্তন গ্রামের কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজন ওই পরিবারের সঙ্গে ভালো ব্যবহার পর্যন্ত করত না। এমন অবস্থায় সম্প্রতি মনিরুল ইসলাম উপজেলার হিজড়াদের দলে যোগ দেন। এতে গ্রামের কথিত ‘মুরব্বিরা’ ১৩ এপ্রিল এক সালিস বৈঠকে মনিরুলের পরিবারকে এক মাসের মধ্যে ভিটেমাটি বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন। যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি সবার মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজব্যবস্থা তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। তাই তিনি বাধ্য হয়ে উপজেলার অন্য হিজড়াদের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলে মনিরুল বলেন, হিজড়াদের দলে যোগ দেওয়ায় তাঁর পুরো পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন মুরব্বিরা। বাড়িতে তাঁরা চার ভাই থাকেন, এর মধ্যে দুই ভাইয়ের পরিবার আছে। বৃদ্ধ বাবা–মাও থাকেন। প্রতিনিয়ত টিপ্পনী শুনতে হয় পরিবারের সদস্যদের। এ নিয়ে পরিবারের সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। এ বিষয়ে গ্রাম্য মুরব্বি মো. শাহেদ হাজি এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই পরিবারকে আমরা চাপে রাখার জন্য সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে বসতভিটা বিক্রি করে গ্রাম ছাড়তে বলেছি, যাতে তাঁর ছেলে হিজড়া পেশা বাদ দেয়।’ উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, পরিবারটি সহায়তা চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ মঞ্জুর আলম (৫২) ও মেছের আলী (৫৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।