আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২৩


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৩ ২:৩৯ অপরাহ্ণ ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২৩
Spread the love

শফিক মুন্সি, বিশেষ প্রতিবেদক //

বরিশাল সিটি করপোরেশনে (বসিক) নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ৭ দিন।এরইমধ্যে নগরী জুড়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাকডাক। প্রকৃতিতে যে তাপদাহ চলছে তা নিম্নগামী হতে কোন ঝড়ো হাওয়ার দেখা না মিললেও নির্বাচনী আড্ডায় নিয়মিত ঝড় তুলছে নগরবাসী। মূলত নৌকা (আওয়ামীলীগ), হাতপাখা (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) এবং লাঙ্গল (জাতীয় পার্টি) প্রতীকের মেয়র প্রার্থীদের নিয়েই আলোচনা সর্বত্র। এসব দলের কর্মীবাহিনীর  প্রচারণায় কিছুটা ¤øান হয়ে গেছে অন্য প্রার্থীদের নামডাক।আর এই তিন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।

ইসলামী আন্দোলনের কাছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাদের দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছে।বিএনপি এবং বাসদ (বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল) সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে শক্ত প্রার্থী দিয়েছিল। তবে এবার ভোটের মাঠে তাদের অনুপস্থিতি শক্তিশালী করেছে আওয়ামীলীগের বিরোধী প্রার্থীদের।কারণ এসব দলের ভোট ব্যাংক গিয়ে জড়ো হচ্ছে আওয়ামী বিরোধী শিবিরে।

এদিকে নগরপিতার আসন ধরে রাখতে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দলটির নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক।তাকে বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের এবং ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ট্রাজেডির ভুক্তভোগী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। তার পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় একাধিক হেভিওয়েট নেতা জনসংযোগ করে গেছে ইতোমধ্যে।দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও খোকন সেরনিয়াবাত লাভবান হন নি;এমন বক্তব্য প্রচারিত  হচ্ছে মুখে মুখে।বরঞ্চ নেতাকর্মীরা তাকে সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করছে ভোটারদের কাছে।

তবে আওয়ামীলীগকে নগর শাসনের চাবিকাঠি হাতে রাখতে জোর লড়াই করতে হবে হাতপাখা এবং লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের সঙ্গে। ইসলামী আন্দোলনের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের প্রার্থী ফয়জুল করীম দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর। পদক্রমের হিসাবে তাঁর অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।দলের এত বড় একজন নেতা সিটি করপোরেশনের মতো স্থানীয় নির্বাচনে কোনো কারণে পরাজিত হলে তা দৃষ্টিকটু হবে। তাই মেয়র হিসেবে ফয়জুল করীমকে নির্বাচিত করতে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবে না দলটি।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগেই বসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দল থেকে নগর কমিটির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপসকে চূড়ান্ত করা হয়।সেই থেকেই দল গোছানো এবং নগরবাসীকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করছে তাপস। এরমধ্যে বড় দুই দল নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় আওয়ামীলীগ বিরোধী ভোট ব্যাংকে কদর বেড়েছে জাপা প্রার্থীর। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বরাবারই বলছেন ইকবাল হোসেন তাপস।

এদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নগরবাসীর কাছে কিছুটা অপরিচিত মুখ। শহরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না তিনি।কিন্তু দলের মনোনয়ন পাবার পর থেকে বেশ সরব হয়ে উঠেছে তার পক্ষের লোকজন। বিশেষ করে দলের জন্য তাঁর অবদানকে তুলে ধরে সাবেক ও দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা কর্মীদের ইতোমধ্যে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।ভোটের মাঠেও নিজেকে এগিয়ে রাখতে নগরবাসীর কাছে বারবার আন্তরিকতার সঙ্গে চাইছেন ভোট।

বরিশালের সাধারণ নাগরিক সমাজ (বসানাস) আহবায়ক কাজী মিজানুর রহমান বলেন,‘মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মনে হয় নৌকা,লাঙ্গল এবং হাতপাখার মধ্যেই মূল লড়াই হবে।প্রচার-প্রচারণায় ইতোমধ্যে সেই ছাপ পরতে শুরু করেছে।সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে এবং জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেশ প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ লড়াই দেখা যাবে’।

বিভিন্ন উঠান বৈঠক এবং সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র  প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন,‘নির্বাচন কমিশন যদি একটু চেষ্টা করে তবে বরিশালে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে।নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অন্য প্রার্থীরা বেশ ছাড় পেলেও আমাকে চাপে রাখা হচ্ছে। আমি আশা করবো কমিশন নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে নির্বাচনকে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করতে উদ্যোগী হবে’।

এদিকে নতুন বরিশাল বিনির্মানের অঙ্গীকার করেছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)।তিনি বলেন,‘ আমার বাবা আবদুর রব সেরনিয়াবাত দেশব্যাপী পরিচিত হলেও তার সন্তান হিসেবে আমি বরিশালের মানুষের কাছেই অতটা পরিচিত হতে পারি নি।কিন্তু আমি বরিশালবাসীকে ভালোবাসি। বিগত দিনে তাদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে আমি তা সম্পর্কে অবগত। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশন থেকে সকল অন্যায় – অনিয়ম দূর করবো এবং নগরবাসীকে নতুন বরিশাল উপহার দেবো’।

অন্যদিকে  প্রেস্টিজ ইস্যুর বিষয়টি স্বীকার করে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন,‘ আমার দলের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এমনকি অমুসলিম সংখ্যালঘুরাও আমাকে নিয়ে প্রত্যাশা করে। তারা বিশ্বাস করে দায়িত্বশীল একজন মানুষের সিটি করপোরেশন এর দায়িত্ব নেয়া উচিত।আমি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মাঠে থেকে লড়াই করবো’।

নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী বলেন,‘কিছুটা চাপ আছে একটি পক্ষের দিক থেকে। শুরু থেকে তারা চেয়েছে আমি যেন নির্বাচন না করি। তবে তাদের চাপে মাথা নত করার মতো মানুষ আমি নই। গণমানুষের অধিকার আদায়ে এবং বরিশালকে শান্তির নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আমি বদ্ধপরিকর’।

উল্লেখ্য, আগামী ১২ই জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়াও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন আরো চারজন।  নির্বাচনী কেন্দ্রে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এবং সিসিটিভি স্থাপনের কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। এবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মজিবর রহমান সরোয়ার এবং বাসদ থেকে মনীষা চক্রবর্তী ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিল।