পশ্চিমবঙ্গে আগ্রাসী করোনা, নেপথ্যে বিধানসভা নির্বাচন
আজকের বার্তা | প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২১ ১:৩৩ অপরাহ্ণ
Spread the love
বার্তা ডেস্ক ॥
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ কেন্দ্রে আট দফায় বিধানসভার নির্বাচন শুরু হয় ২৬ মার্চ। শেষ হবে ২৯ এপ্রিল। নির্বাচনী প্রচার যখন পুরোমাত্রায় চলছে, হচ্ছে মিটিং-মিছিল, সেই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোভিড সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের একাংশ থেকে চিকিৎসক কিংবা পর্যবেক্ষকরা আঙুল তুলছেন নির্বাচন কমিশনের দিকে। তাদের বক্তব্য, আগে থেকে সতর্ক হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ২৬ ও ২৯ এপ্রিল শেষ দুই দফার ভোটে ৭১ কেন্দ্রে নির্বাচন হবে। তার আগেই কমিশন মিছিল, পদযাত্রা, বাইক মিছিল, রোড শো-য় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সমাবেশের অনুমতি থাকলেও ৫০০-র বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না। তবে এই সংক্রান্ত কমিশনের নির্দেশিকা জারি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পর। সেদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের বেঞ্চ করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। শুক্রবার কমিশন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায়, তারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় করোনা সংক্রমণ ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। যদিও চিকিৎসকরা বারবার সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সতর্ক করছিলেন। এমনকী মহারাষ্ট্রে দ্বিতীয় ঢেউ দেখা গেলেও, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে লাগাম টানার ক্ষেত্রে কমিশন হাত গুটিয়ে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ডাক্তার কৌশিক চাকি জানান, ‘‘আমরা কমিশনকে পাঁচটা চিঠি দিয়েছি। বলেছি, এভাবে প্রচার চলতে থাকলে সর্বনাশ হবে। রাজনৈতিক দলগুলিকেও চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কান দেয়নি। এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বার বার প্রশ্ন তুলেছে, কেন আট দফায় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন হবে? যত বেশি সময় ধরে ভোটগ্রহণ চলবে, তত বেশি মিছিল-সমাবেশ হবে। তার জেরে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা। এখনকার পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তুলেছেন কমিশনের দিকে। যদিও তারা প্রচার কর্মসূচি সমান তালেই চালিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এত সহিংসতা হয় না যে আট দফায় নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে যখন একটা অতিমারির মধ্যে আমরা রয়েছি। প্রচারে রাশ টানার ব্যাপারেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আদালত হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত।” রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি, সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে প্রচারের সম্পর্ক নেই। দলের শীর্ষ নেতা অমিত শাহ জনসভায় বলেছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হচ্ছে না, সেখানে এত সংক্রমণ কেন?” এর জবাবে ডাক্তার চাকি বলেন, ‘‘সংক্রমণ এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। মহারাষ্ট্রের নাসিকে যেটা দেখা গিয়েছে, সেটা বাংলায় এসেছে আমাদের লাগামছাড়া আচরণের ফলে। গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল।” উদয়নের মতে, ‘‘একটাই দেশ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতারা আসছেন প্রচারে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বেই। মার্চে বাংলা ও উড়িষ্যা সংক্রমণের নিরিখে এক বিন্দুতে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের জন্য আমরা এখন সঙ্কটে। উড়িষ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” শুধু প্রচার নয়, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ভোটাররা, কমিশন বুথে গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখলেও সর্বত্র তা ব্যবহৃত হচ্ছে না। এখন নির্বাচনের শেষের প্রহরে প্রচারে লাগাম টানতে তৎপর কমিশন। কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। কোভিড বিধি ভঙ্গের জন্য ১৩ জন প্রার্থী-নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। শো-কজ করা হয়েছে ৩৩ জন প্র্র্থাী-নেতা-প্রচারকের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।