সেবায় এগিয়ে থাকলেও বাজেটে পিছিয়ে বরিশাল জেলার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো
আজকের বার্তা | প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২১ ৫:০৫ অপরাহ্ণ
Spread the love
শফিক মুন্সি ॥
বরিশাল জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ চরআইচা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবুল হাসান ও তাছলিমা বেগম দম্পতি । মূল শহরের চেয়ে বেশ প্রত্যন্ত অঞ্চলেই তাদের বাস। করোনা মহামারি তুঙ্গে থাকাকালীন গতবছর (২০২০) এপ্রিলে তাদের সংসার আলো করে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। যে কিনা ভূমিষ্ঠ হয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। আবুল হাসান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বেশ চিন্তায় পরে যান। সেসময় লকডাউন (অবরুদ্ধ) অবস্থা চলায় শহরের নামকরা চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে যাওয়া ছিল এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার। পরবর্তীতে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের পরামর্শে স্ত্রীকে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী চরবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। সেখানেই স্বাভাবিক প্রসব হয় তাঁর স্ত্রীর। এছাড়া বিনামূল্যে প্রসব পরবর্তী চিকিৎসাও পাচ্ছেন সেখান থেকে। বরিশাল জেলার মোট ৫৩টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে চরবাড়িয়ার এই কেন্দ্রটিও একটি। যেখানে পরিবার পরিকল্পনা সেবা,নবজাতক এবং কিশোর – কিশোরী স্বাস্থ্য সেবা সহ গর্ভবতী নারীদের প্রসব ও প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়৷ আর এসব সেবার অধিকাংশই বিনামূল্যে। এমনকি করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতি মাসে তিন থেকে চারটি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে চরবাড়িয়ার এই কেন্দ্রটিতে। এমন তথ্যই দিলেন সেখানকার সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা মলিনা রাণী মল্লিক। তবে জনসাধারণের কাছে দিনকে দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এসব সেবা কেন্দ্রের জন্য বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ছে না তুলনামূলক ভাবে৷জেলার ৫৩ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টি সেবাকেন্দ্রের জন্য গত তিনবছর (২০১৮ থেকে ২০২০) যাবৎ বার্ষিক এক লক্ষ টাকার কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।এমনকি ২০১৮ সালের আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ খাতে আলাদা বাজেট পর্যন্ত রাখা হতো না। এ অঞ্চলে বেশ কয়েক বছর যাবৎ পরিবার পরিকল্পনা খাতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’৷ সংস্থাটির প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বার্ষিক বাজেটে আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে একসঙ্গে বরাদ্দ দিত ইউনিয়ন পরিষদগুলো। এতে অনেক সময় পরিবার কল্যাণ খাতের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ খরচ হয়ে যেত স্বাস্থ্য খাতে। তারা স্থানীয় সরকার এবং অধিদপ্তর সহ জনপ্রতিনিধিদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে পরিবার কল্যাণ খাতটিকে আলাদা করে বাজেটে মূল্যায়ন করা উচিত। উক্ত সংস্থাটির জোর তদারকিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার কল্যাণ বিষয়ে আলাদা খাত সৃষ্টি হলেও সরকার থেকে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায় নি বলে জানিয়েছেন জেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ এবং শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আরিফুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, একটি এলাকার প্রায় সকলের পরিবার পরিকল্পনা মূলত এসব ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র গুলোর কার্যকরতার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এসব কেন্দ্রের কার্যক্রম যথাযথভাবে চলমান রাখতে সরকার থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ দরকার তা তারা পাচ্ছেন না। এদিকে করোনাকালীন সময় জুড়ে প্রাণঘাতি জীবাণুর সাথে সাথে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অভাবের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে সেবা কেন্দ্র গুলোর কর্মীদের । এ ব্যাপারে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ ফাবিহা হক বলেন,করোনা পরিস্থিতি চলমান থাকলেও আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি যথাযথ ভাবে। এমনকি যেসব সেবা গ্রহীতারা কেন্দ্রে আসতে পারের নি তারা মোবাইল ফোনে পরামর্শ নিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যতটুকু জীবণু প্রতিরোধ সামগ্রী (মাস্ক, গ্লভস, জীবাণুনাশক ইত্যাদি) পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।একইসঙ্গে চাহিদামতো সেবা সংক্রান্ত জিনিসপত্রের যোগান বৃদ্ধি করা জরুরী। তবে প্রথম দিকে করোনা জীবাণু প্রতিরোধী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক ডাঃ জসিম উদ্দিন।তিনি বলেন, যতদিন করোনা পরিস্থিতি চলমান থাকবে ততদিন এসব সামগ্রী প্রদান অব্যহত থাকবে । এছাড়া করোনার টিকা প্রাপ্তিতে সরকার মাঠ পর্যায়ের এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে আসন্ন বাজেটে ইউনিয়ন পর্যায়ে যেন সরকার থেকে পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয় সে ব্যাপারে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।