আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরগুনায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চালু হয়নি পুর্নাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: অক্টোবর ০৬, ২০২২ ১:০০ অপরাহ্ণ বরগুনায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চালু হয়নি পুর্নাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টারঃ বরগুনা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নবনিমিত ভবন উদ্বোধনের পাঁচ বছরেও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা। ফলে পুরানো ভবনে শয্যা সংকটের কারনে ভর্তি রোর্গীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন এই হাসপাতালে ১৫০ থেকে ২ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যা না থাকার কারণে ভর্তি রোগীদের হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় ,করিডোরে বিছানা করে চিকিৎসা দিতে হয়।

এব্যাপারে ভেকসিন ইউনিট ইপিআই শাখার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মোঃ এনামুল কবির জানান, বরগুনায় ২৫০শয্যার নবনির্মিত এই হাসপাতালটি গত পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন। অধ্যবদি এই হাসপাতালটি পুর্নাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া নতুন এই ভবনে ফার্নিচার, ভবনের অবকাঠামো, জনবল ও ক্লিনার নিয়োগ না থাকায় রুগির সেবা কাজেও দারুণভাবে বেগাত সৃষ্টি হচ্ছে। এখনও এ ভবনের অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় পুরাতন ভবনেই গাদাগাদি করে রুগিদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বরগুনা সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে শয্যাসংকট থাকায় রুগীদের চিকিসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জনের মত রোগী ভর্তি থাকে। শয্যাসংকটের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে,বারান্দায়, হাসপাতালে প্রবেশদ্ধারে রোগীদের শয্যা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শয্যাসংকটে কারণে সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীও স্বজনদের । জায়গা স্বল্পতার কারনে বর্তমানে বরগুনা সদর হাসপাতালে রোগীদের স্থান দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। নতুন ভবনটি চালু হলে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাবে।

এবিষয়ে বরগুনা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড, কামরুল আহসান মহারাজ জানান, গত ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০১০ সালে ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এখানে ছয়তলার একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২০১৮ সালে নতুন এই ভবনটি উদ্বোধন হওয়ার পর বর্তমানে সেখানে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। গৃহায়ন ও গর্ণপূত অধিদপ্তর বরগুনায় কাযালয়ের কর্মকর্তারা গত বছর জুন মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই ভবন হস্তান্তর করেন।

তিনি আরও জানান, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল ভবনটি পূর্নাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য দরকার চিকিৎসক ৫৫ জন, নার্স ১০১ জন, মোট ২৩৩ জন। এরমধ্যে ১০৩ জনই পদশূন্য ।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলা হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার। গত ২০১৩ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আ. খালেক এন্টারপ্রাইজকে এই নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালের পুরানো ভবনে শয্যাসংকটের কারণে হাসপাতাল ভবনের মেঝেতে, করিডোরে বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নতুন ভবনটিতে নিচতলার একটি অংশে করোনার টিকা প্রদান করা হয়, এবং দ্বিতীয়তলায় করোনা আক্রান্তদের জন্য ৫০ শয্যার একটি ইউনিট রয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলাে বাসিন্দা মোঃ রিপন (৪০) তার সন্তানের চিকিৎসা নিতে এসে তিনি জানান, এই হাসপাতলে শয্যাসংকট থাকায় রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশে বড় একটা নতুন বিল্ডিং পইড়া আছে ,ওইটা চালু করা হলে আমাদের আর এই রকম নিচে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হতো না।

বরগুনা পৌরসভার বাসিন্দা নুপুর বেগম জানান, এই হাসপাতালে কোন ‘শয্যা না থাকায় মেঝেতে বিছানা করে আমার বাচ্চার চিকিৎসা করাচ্ছি।হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা। আমরা চিকিৎসা সেবাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবাধয়ক ডাঃ সোহরব হোসেন জানান, হাসপাতালের নতুন ভবন চালু করতে হলে আমাদের জনবল ও অবকাঠামো দরকার। আমাদের এখানে এসব কিছুই নাই। ২৫০ শয্যার এই নতুন ভবনটি চালু হলে শয্যায় আর কোন সমস্যা থাকবে না। ভবন স্বল্পতার কারণে আমরা রোগীদের ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারি না।

এবিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান , বরগুনায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাাতালের নতুন এই ভবনটিতে প্রয়োজনীয় জনবল এবং চিকিৎসাযন্ত্র, বেড, অবকাঠামো না থাকায় এটি চালু করার যাচ্ছে না। আমরা প্রতিমাসে রিপোর্ট দিচ্ছি, তারা আমাদের আশ্বাস্ত করেছেন। খুব শিগ্রই এটি চালু হবে।
-তরিকুল ইসলাম রতন