আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

রাত পোহালেই নাসিক নির্বাচন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ ১:৫১ অপরাহ্ণ রাত পোহালেই নাসিক নির্বাচন
Spread the love

অনলাইন ডেস্ক:

রাত পোহালেই তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন)। নানা কারণে সারাদেশে আলোচিত এই সিটি নির্বাচনে ৫ লাখ ১৭ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে ভোটগ্রহণ। এজন্য শনিবার দুপুরে মোট ২৯১২টি মেশিন বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। যা প্রয়োজনের দেড়গুণ বেশি।

এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটারের মধ্যে নারী ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন এবং হিজরা ৪ জন। ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। সে অনুযায়ী নতুন ভোটার ৪২ হাজার ৯৩০ জন।

মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮৯ জন। তাদের মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৩৪ জন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন, বাকি দুইজন স্বতন্ত্র। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা), খেলাফত মজলিশের প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন (বটগাছ), কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি)।

নারায়ণগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৯ জন। তারা হলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, বন্দর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল কাদির, সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইউসুফ উর রহমান, জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতিভা বিশ্বাস, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুলতানা এলিন, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ এবং ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আল-আমিন।

নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫ দিন নির্বাচনী এলাকায় কাজ করবেন তারা। এর মধ্যে ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলম, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শামসাদ বেগম, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমান, ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূর মহসীন, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লা।

এছাড়া ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসেন, ১৫ ও ১৬ নং ওয়ার্ডে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসাইন, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হক, ২১ ও ২২ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমাদুল হাসান খান, ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ড মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ, ২৭ নং ওয়ার্ডে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ সদস্য। পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়াও থাকবে পুলিশের ৬৪টি মোবাইল টিম, প্রতি টিমে সদস্য থাকবে পাঁচজন।

আরও থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য। অতিরিক্ত ৬ প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। অন্যদিকে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ৩টি, চেকপোস্ট থাকবে ৬টি, টহল টিম থাকবে ৭টি ও স্ট্যাটিক টিম থাকবে ২টি।

নাসিক নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে ৯টি সংস্থা। ৯টি সংস্থার ৪২ পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাগুলো হল, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস।

ফিরে দেখা প্রথম নাসিক নির্বাচন:

২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, কদম রসুল পৌরসভা ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠনের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ওই বছর ৩০ অক্টোবরের নাসিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইভী। নির্দলীয় ওই ভোটে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন ছয়জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫০ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। তার প্রতীক ছিল দোয়াত কলম। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত শামীম ওসমানের দেয়াল ঘড়িতে জুটেছিল ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। বিএনপি সমর্থিত তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতীক ছিল আনারস। তিনি পান ৭ হাজার ৬১৬ ভোট। সেবার নারায়ণগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেন নারায়ণগঞ্জবাসী। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়া আইভী ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব নেন।

ফিরে দেখা দ্বিতীয় নাসিক নির্বাচন:

২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ৭৯ হাজার ৫৬৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানতে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। যিনি ৭৯ হাজার ভোট পান। সেবার সব কেন্দ্রেই ভোট হয়েছে সনাতনি ব্যালটে। ৬ জানুয়ারি ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।