আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশাল রানওয়েতেও চরে গরু, কিছুই জানেন না এয়ারপোর্ট ম্যানেজার


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৩, ২০২১ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ বরিশাল রানওয়েতেও চরে গরু, কিছুই জানেন না এয়ারপোর্ট ম্যানেজার
Spread the love

সাইদুর রহমান পান্থ, স্টাফ রিপোর্টার:

বরিশাল বিমান বন্দরের ভেতরেও চরে গরু। নির্দ্বিধায় সাবাড় করে রানওয়ের চারপাশে থাকা ঘাস। কখনো কখনো বা সেই গরু উঠে পড়ে রানওয়েতে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফলতির সুযোগে রানওয়েতে এভাবে গরু ঢুকে পড়ছে। গরু চরানোর কারণে আকাশ থেকে নামতে না পেরে বিমানের আকাশেই চক্কর খাওয়ার ঘটনা রয়েছে এই বিমানবন্দরে। কেবল রানওয়েতেই গরু চরানো নয়, বিমান বন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে জন চলাচলের পথ। আর সেটি নির্বিঘেœ ব্যবহার করছে সেখানকার মানুষ। এ সব বিষয় নিয়ে কয়েকবার লেখালেখি হলেও টনক নড়েনি এখানকার ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টদের। সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে মানুষ চলাচলের পথ নির্মান বা রানওয়েতে গরু চরানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান এয়ারপোর্ট ম্যানেজার আবদুর রহিম তালুকদার। তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবে না বলে জানান।

জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল বিমান বন্দরের যাত্রা শুরু হয় এয়ার স্ট্রিপ দিয়ে। ১৯৭৯ সালের দিকে শর্ট টেক-অফ ল্যান্ডিং সংক্ষেপে স্টল সার্ভিসের যাত্রীবাহী বিমান উঠা-নামার জন্য এখানে তৈরী করা হয় ২ হাজার ৮শ’ ফিট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে। কিছুদিন স্টল সার্ভিসের ছোট বিমান এই বন্দর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী আনা নেয়া করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায় তা। পরবর্তি প্রায় ৪০ বছর কখনো চলা আর অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকার মধ্য দিয়েই টিকে রয়েছে এই এয়ারপোর্ট। বর্তমানে পরিস্থিতির বদল হয়ে এখন প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা’র ফ্লাইট চলছে এই বিমানবন্দরে। দিনে দিনে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই বিমানবন্দর।

যদিও এই বন্দরটির রানওয়ে দেশের সব চেয়ে ছোট রানওয়ে। এখানে রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ৬ হাজার ফিট। এতো ছোট রানওয়েতে অভ্যন্তরীন রুটের বিমানেরই যেখানে উড্ডয়ন-অবতরনে কষ্ট হয় সেখানে বড় বিমানের উঠা নামা প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে এই রানওয়েতে চরে গরু। অনেক সময়ই রানওয়েতে গরু চড়তে দেখা যায়। আর এই গরু চরানোর কারণে কয়েকবার বিমান অবতরণে বিলম্ব হয়েছে। আকাশে অবস্থান করে গরু সরিয়ে ফের অবতরণ করেছে বিমান। এই গরুর কারণে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে দাবী সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে তৈরি করা হয়েছে জন চলাচলের পথ। আর এই পথ নির্বিঘেœ ব্যবহার করছে সেখানকার মানুষ। যা পুরো বিমানবন্দরকে অরক্ষিত করে ফেলেছে। বিমানবন্দরের উত্তর পাশে এই সীমানাপ্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মানওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, বিমান বন্দরে গরু চরবে এটা কোন ভাবে কাম্য নয়। এই গরুর কারণে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুরঘটনা। অন্যদিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি দপ্তরটি সব সময় সুরক্ষিত রাখতে হয়। সেখানে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ করে দেয়া কোন ভাবে ঠিক হয়নি।

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে সব সময় নিরাপত্তা দিতে হয়। সেখানে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে মানুষের চলাচলের পথ করে দেয়ায় বিমানবন্দরটিকে অরক্ষিত করে ফেলেছে। অতি সত্তর এই দেয়াল আটকে দেয়া দরকার। পাশাপাশি গরু চরতে না পারে এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল দেয়া দরকার বলে মনে করেন এই নাগরিক। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিমান বন্দরেরই একাধিক কর্মকর্তা বলেন, একটু অসর্তকতায় ঘটতে পরে দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে বিভিন্ন জন বার বার ব্যবস্থাপককে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। মুলত তিনি কারো কথার ধারধারেন না। যার কারণে স্বেচ্চাচারিতার একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়ে এই বিমানবন্দরটি। পরিচয় না প্রকাশের শর্তে সিভিল এ্যাসোসিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগের আরো একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন নীতিমালা অনুযায়ী রানওয়েতে কোন ভাবে গরু ছাগল আসতে পারবে না। কিন্তু এই বিমান বন্দরে প্রায়ই গরু দেখা যায়। আবার দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ায় বন্দরটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। এ বিষয়ে আমরা ঢাকায় আলোচনা করেছি।

বিমান বাংলাদেশের ম্যানেজার সঞ্চয় কুন্ড বলেন, রানওয়ে ও তার সীমানা প্রাচীরের দায়িত্ব সিভিল এ্যাসোসিয়েশন ও এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের। নিয়মানুসারে বিমান বন্দর ও রানওয়েতে সাধারণ মানুষ বা জীবন্ত কোন পশু ঢুকতে পারবে না। কিন্তু এখানে এমনটা হচ্ছে না। আর এই পুরো বিষয়টি দেখভাল এয়ারপোর্ট ম্যানেজার। তিনি এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। এ বিষয়ে বরিশাল বিমান বন্দরের ম্যানেজার আবদুর রহিম তালুকদার বলেন, সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি বা রানওয়েতে গরু চরানো বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ বিষয়ে কথা বলবেন সিভিল এ্যাসোসিয়েশনের জনসংযোগ বিভাগ।