আজকের বার্তা | প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২১ ৪:৫১ অপরাহ্ণ
Spread the love
শফিক মুন্সি ॥
বরিশাল নগরীর কাকলির মোড় এলাকার ঈশ্বরবসু সড়কের বিপরীত পাশে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন সোহরাব হোসেন। কাগজ কলমে ৬৪ বছর বয়সী এই ভাসমান ব্যবসায়ীর মূল বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। তবে গত এক যুগ আগে ভাগ্য পরিবর্তনে বরিশাল নগরীতে এসে সংকটে পড়েছেন বর্তমান সময়ে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ১৪ টি বেল এবং কয়েক ডজন পাকা কলা নিয়ে বসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন নি কিছুই। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরু হবার পর থেকেই ব্যবসায় মন্দাভাব।লোকজন বাইরে বের হচ্ছে কম বিধায় বিক্রিও কম হচ্ছে। গতবছর লকডাউনে জমানো টাকা ভেঙে চলেছি। আর চলমান লকডাউনে যেমন নেই ক্রেতা তেমন নেই বিক্রি। ফলে বৃদ্ধ বয়সে একদম দিশেহারা অবস্থা। নগরীর পুলিশ লাইনস সড়কের বাংলাবাজার এলাকায় একটা টুল আর চৌকি নিয়ে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করে গৌতম মন্ডল। গত রোববার সকালে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই জায়গাটিতে গিয়ে দেখা যায় সে একাকী বসে আছে। লোকজন তেমন একটা না থাকায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে তাকে। তিনি জানান, সাধারণ সময়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার রিচার্জ করেন তিনি। গত ১৪ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র হাজার খানেক টাকার মতো রিচার্জ করতে পেরেছেন। তিনি আশা করছেন দ্রুত সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পাবেন। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে কাটাতে হবে তাকে। ভাগ্য ফেরাতে অল্প পূঁজি নিয়ে সোহরাব কিংবা গৌতমের মতো ভাসমান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকে। তবে চলমান লকডাউনে ব্যবসা একদম শেষ হয়ে গেছে তাদের। উপার্জন হারাবার স্রোতে একদমই ভেসে যাচ্ছেন নগরী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। তাদের পাশে অন্তত খাদ্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় এধরণের ব্যবসায়ীরা কর্ম হারিয়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যাদের সহায়তা দরকার তাদের পাশে থাকবে প্রশাসন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস জানান, গত এক দশকে শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরণের ভাসমান ব্যবসা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত জনসমাগমের ওপর নির্ভর করে তাদের উপার্জন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে জনসমাগম কমে যাওয়ায় কমে গেছে এসব ব্যবসায়ীর উপার্জন। যার প্রভাব দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুতই পরা শুরু করবে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ অনেকে ভাসমান ব্যবসায় জড়িয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে৷ এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক কর্ম হারিয়ে এ ধরণের ব্যবসাতে প্রবেশ করেছে অনেকে। এখন তারা যদি কর্মহীন হয়ে পরে তবে বেকার সমস্যা প্রকট হবে। আর বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিক ভাবেই চুরি – ডাকাতির মতো অপরাধ বৃদ্ধি পেয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তাই বৃহৎ স্বার্থে ,এ ধরণের ব্যবসায়ীদের তালিকা করে অন্তত জরুরী খাদ্য সহায়তা নিয়ে দ্রুতই সরকারকে পাশে দাঁড়াতে হবে। তবে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, যারা লকডাউনে আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে ভেবেছে সরকার। বরিশাল বিভাগে যাদের জরুরী খাদ্য সহায়তা দরকার তাদের পাশে থাকবে প্রশাসন। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পরা মানুষদের জন্য অতিদ্রুত সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।