বার্তা ডেস্ক ॥ পটুয়াখালী ২ আসনে (বাউফল) নির্বাচন করছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসিব আলম তালুকদার। আজ ১৭ আগস্ট বেলা ১ টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী জেলার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম এর অফিসকক্ষে উপস্থিত হয়ে হাসিব আলম তালুকদার তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি, তাই নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবোনা”। এর আগে শুক্রবার তার নিজস্ব (ফেসবুক আইডি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। এ ঘটনায় আনন্দিত বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে নেতা কর্মীরা। বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইব্রাহিম ফারুক বলেন, হাসিব আলম তালুকদার সাহেব দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো – আস্সালামু আলাইকুম আমার প্রাণ প্রিয় ভাইরা, আমি নৌকার পক্ষের এক সামান্য কর্মী। আমার বাবা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর আদর্শে বিশ্বাসী একজন মানুষ আমি। আমি মনে করি আমরা এখানে যারা আছি তাদের বেশিরভাগ ভাইরাও একই দল করেন। গত ১৮ মাস যাবত আমি বাউফলের হাজার হাজার আওয়ামী নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এতদূর এসেছি, আপনাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার সাথে বাউফল আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ আমার এই যাত্রায় সাথী ছিলেন, সাহায্য করেছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমার পরিবারের মতো আমিও চেষ্টা করেছি বাউফলের সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকবার, হয়তো সকলেরটা পূর্ণ করতে পারি নাই, কিন্তু চেষ্টা করেছি। আপনারা বেশিরভাগ সকলেই রাজনৈতিক ভাবে আমার চেয়ে সিনিয়র যা আমি অকপটে স্মিকার করি। বাস্তবতা মাঝে মাঝে এক কঠিন অবস্থার জন্ম দেয়। আমি দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু দলের নীতি নির্ধারকরা আমাকে তার যোগ্য মনে করেন নাই। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী নিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার প্রেক্ষিতে আমিও প্রার্থী হয়েছিলাম। ২৯ তারিখ আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আপনি বললে আমি নির্বাচন করবো, আর না বললে করবো না। উনি আমাকে হা বা না কিছুই বলেন নাই। এদিকে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা মিডিয়াতে সতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে কেউ ইতিবাচক কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করা শুরু করলেন। ধূ¤্রজাল কাটছেই না। শেষ বারের মতো আবারো প্রধানমন্ত্রী থেকে একটা ধারণা নেবার চেষ্টা করলাম – উত্তর পেলাম ১। তোমাদেরকে তো নৌকার বাইরে বেমানান দেখায়। ২। রাজনীতিতে থাকলে আমিই তো আছি ও আমি সেটা দেখবো ৩। তোমাদের এলাকায় নতুন মুখ আসতে তো বেশী সময় লাগবে না। ওঁর এই উত্তর পেয়ে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হলো যে উনি কি আশা করেন আমাদের থেকে। যেহেতু আমি দলের একজন সামান্য কর্মী, দলের সিদ্ধান্তই আমি চূড়ান্ত বলে মনে করি। এই পরিস্থিতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে নৌকার বিজয় আমার কারণে বিন্দু পরিমাণ খর্ব হোক তা আমার দ্বারা সম্ভব না। আমি জানি এলাকায় নির্বাচনী মাঠে আমার এখনকার অবস্থান এবং বাউফলের আপামর জনসাধারণ কি চাচ্ছেন। আমার এই অবস্থান জানা সত্ত্বেও আমি নৌকার প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে রাখতে পারলাম না। নিজ স্বার্থ আমার কাছে কখনোই বড় ছিল না। আমি এলাকায় এসেছিলাম একটি সুন্দর, দুর্নীতিমুক্ত, আগামী প্রজন্মের বাউফল গড়ার অংশীদার হতে। এলাকার প্রতিটি মানুষের জন্য আমি সব সময় সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাবো। বাউফলের মাটিতে আমার পরিবার ও আমার কতটুকু অবদান তা সকলে জানেন। আমি ও আমার পরিবার আগে যেমন আপনাদের পাশে ছিলাম তেমনি ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে থাকবো। আবারও আপনারা প্রত্যেক ভাই ও বোন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, অনেক ঘাম ঝরিয়ে আমাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন আপনাদের সকলের প্রতি রইলো আমার কৃতজ্ঞতা। আমি স্বার্থপর মানুষ না, কোনোদিনই ছিলাম না। আপনাদের সকলের জন্য আমার দরজা সব সময় আগের মতোই খোলা থাকবে। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না – এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে রাজনীতির মাঠে এসেছিলাম। আমি আশা করি আমাদের অগ্রজ ও অনুজ যারা বাউফলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি করবেন ও নীতি নির্ধারকের আসনে বসবেন তারাও এই দিকে খেয়াল রাখবেন। সকলে আমার ভালোবাসা নিবেন – ভালো থাকবেন। আপনাদের অনেকের মনে অনেক কষ্ট – আমি আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তবে এও বলছি, রাজনীতি এক দিনের জন্য নয় – ছিলাম, আছি ও থাকব – এতটুকু বলে শেষ করছি আজ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। হাসীব আলম তালুকদার হাসিব আলম তালুকদার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করায় এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার মাঝি সাতবারের সাংসদ আ স ম ফিরোজ এর বিজয় একেবারেই নিশ্চিত প্রায়। তার সাথে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ মহসিন, তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী অধ্যক্ষ মাহবুব ও বিএন এফ’ র ডাক্তার জোবায়ের রাসেল।