বার্তা ডেস্ক ॥ সাজ সাজ রব পড়েছে বরিশাল নগরীতে। সড়কে সড়কে সন্ধ্যার পর প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে লাল-সবুজের বাতি। নগরীর প্রবেশপথসহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে নির্মান করা হচ্ছে আলোকসজ্জিত তোরণ। ব্যানার ও ফেস্টুনসহ নগরভবনকে সাজানো হচ্ছে নতুন করে।
ফাঁটল ধরা দেয়াল ও পলেস্তারা খসে পরা ছাদেও চলছে নতুন চুনকাম। আর এসব কিছুই হচ্ছে আগামী ১৪ নভেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে। একইসময় নবনির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে খোকন সেরনিয়াবাতের বরণ অনুষ্ঠানে বরিশালে আসবেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রগণ।
খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, সিটি মেয়রের বরণ অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদেরকেও নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা, ১৪ দলের সমন্ময়ক ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু এমপি এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বলরাম পোদ্দার আরও জানিয়েছেন, উদ্বোধনী দিনে নগর ভবনের সামনেই সাজানো হবে উৎসব মঞ্চ। সেখানেই নগরবাসীর সামনে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশালের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি (বলরাম পোদ্দার) বলেন, এর আগে কোন মেয়রের এভাবে খোলা জায়গায় নগরবাসীর সামনে দায়িত্ব গ্রহণের নজির নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ১৪ নভেম্বরকে ঘিরে নগরভবনসহ আশেপাশের সড়কেও একটা সাজ সাজ ভাব শুরু হয়েছে। যদিও নগরভবনে কর্মরত-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কিছু লোকের চোখে মুখে প্রশান্তির ছাঁপ থাকলেও অনেকেই আবার রয়েছেন শঙ্কায়। গোটা নগরভবনের বিভিন্নস্থান সংস্কার ও ভবনের প্রবেশপথসহ করিডোরগুলোতে রংয়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, প্রতিবারই নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার আগে নগরভবনে কিছুটা সাজসজ্জার কাজ করানো হয়। তারই অংশহিসেবে এবারও সাজসজ্জার কাজ করানো হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাসার বলেন, নগরভবনের সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার ক্ষুদ্র কাজগুলো সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করানো হচ্ছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের স্টাফরা ফজলুল হক এভিনিউতে একটি তোরণ করবে। টাউনহল, এনেক্স ভবনেও আলোকসজ্জা করানো হবে। তাছাড়া সদর রোড, জিলা স্কুলের মোড়, কাকলির মোড়, রূপাতলী ও গড়িয়ারপাড়ে তোরণ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বিবির পুকুরে ব্যতিক্রমী আলোকসজ্জা করা হবে। দায়িত্বগ্রহণের রাতে ব্যাপক আতশবাঁজি করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চলছে তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ।
নতুন মেয়রের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ॥ সমস্যার জঞ্জালের পাশাপাশি কঠিন চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সচেতন নগরবাসীর দাবি, নতুন মেয়রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নগর ভবনে চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরীকে ঢেলে সাজানো। সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও নগরীতে সমস্যা সৃষ্টি ছাড়া দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেননি সাদিক আব্দুল্লাহ। তার মেয়াদে ৫৭ বর্গকিলোমিটারের বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার সড়ক বাতি ওজোপাডিকো বন্ধ করে দেয় একাধিকবার। সিটি করপোরেশন বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিলো নগরবাসীকে। পাশাপাশি তার মেয়াদকালের শেষসময়ে অপরিকল্পিতভাবে পাঁচ হাজার ব্যাটারীচালিত অটোরিকশার অনুমোদন আর কাউনিয়ায় অবৈধভাবে প্লট বিতরণ করে বিতর্কের শীর্ষে পৌঁছে যান মেয়র সাদিক। সচেতন বরিশালবাসীর মতে, ১৪ নভেম্বর মেয়রের চেয়ারে বসতে যাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নগর ভবনের চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরীকে ঢেলে সাজানো। তারা আরও জানিয়েছেন, খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো নতুন বরিশাল গড়ার। সেই প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান দেখতে চান বরিশালবাসী। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরবাসীর মধ্যে নানা ধরনের সংশয়-দ্বিধা রয়েছে। নতুন মেয়রকে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সেগুলো দূর করতে হবে। কেননা তার কাছে বরিশালবাসীর বিশাল আশা। সুশাসনের জন্য নাগরিক বরিশালের সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কাজ হবে নগর প্রশাসন ঠিক করা। কেননা বর্তমানে যে অবস্থা করে রাখা হয়েছে তা ঠিক করতে হবে। জনমতের ভিত্তিতে সহনশিলভাবে ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ করার পাশাপাশি প্ল্যান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করা, নগরীর মধ্যকার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে নতুন বরিশাল গড়ার যাত্রা শুরু করতে হবে। পরবর্তীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ সচেতন নগরবিদদের সাথে নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগের মেয়রের সমর্থক কাউন্সিলররা নতুন মেয়রকে নানাভাবে হয়রানী করতে পারেন। সেগুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার নেতৃবৃন্দদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন মেয়রকে উন্নয়ন কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে কেউ হয়রানী করতে চাইলে নগরবাসী তাদেরকেই প্রতিহত করবেন। সার্বিক বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমি জানি শত সমস্যার জঞ্জাল মাথায় নিয়ে আমাকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হচ্ছে। তবে আমি বরিশালবাসীকে সাথে নিয়ে সব জঞ্জাল পরিস্কার করবো ইনশআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, নগরীর উন্নয়ন কর্মকা- সব মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী করবো। দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক হিসাবের দিকে প্রথমে নজর দেবো। অডিট করানো হবে। আর হিসেবে কোনো গড়মিল পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। নতুন মেয়র আরও বলেন, আমার একমাত্র অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসময়ে প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশালের হারানো জৌলুসকে ফিরিয়ে এনে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও নতুন বরিশাল গড়তে আমার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছিলেন। বরিশালবাসী প্রধানমন্ত্রীর আস্থার ওপর সমর্থন জানিয়ে আমাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করেছেন। এখন বরিশালের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ই করবেন। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীর একজন কর্মী হিসেবে তা বাস্তবায়ন করবো। খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে সিটি মেয়রের বিরোধ থাকলে সেখানে কোনধরনের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। যা অতীতে বরিশাল নগরীর বেলায় হয়েছে। তাই আমি এবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শতভাগ আস্থা রাখছি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যকে পূর্নরায় মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা দুইজনে মিলে প্রাচ্যের ভেনিস বরিশালের গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো। নতুন মেয়র বলেন, শুধু বরিশাল নগরী নয়; সারাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণরায় আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচিত করতে হবে।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085