বার্তা ডেস্ক ॥ নবীজীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা। তাই প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে, নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করে চলছেন বাগেরহাট পৌর সদরের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ হোসেন ও শেখ মোহাম্মাদ মোতালেব। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা ও করুনা নয়, তারাও নিজেরা উপার্জন করতে পারে। সেই ধারনা থেকেই পেটের দায়ে প্রতিবন্ধী দুই ভাই গ্রাম ঘুরে চোখ জুড়ানো সার্কাস খেলা প্রদর্শন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
প্রায় ঘন্টাব্যাপী সময় ধরে তারা প্রায় বিশটি খেলা প্রদর্শন করেন। আগত দর্শনাথীরা তাদের খেলায় মুগ্ধ হয়ে যে যার সাধ্যমতো অর্থ কড়ি দিয়ে তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। ২৬ অক্টোবর বিকেলে বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার গেরাকুল বেগম আখতারুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে প্রতিবন্ধী দুই ভাই তাদের প্রতিভার সার্কাস প্রদর্শন করেছেন। গত তিন মাস ধরে তারা বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় তাদের প্রতিভার সার্কাস প্রদর্শন করে আসছেন। এরমধ্যে বাওন শেখ মোহাম্মাদ মোতালেব পূর্বে প্রায় ৩৫ বছর দেশের স্বনামধন্য দি রয়েল বেঙ্গল লক্ষণ দাস সার্কাসের জোকার হিসেবে কাজ করেছেন। কালের বির্বতনে সার্কাস শো বন্ধ হওয়ায় এখন জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার গ্রামগুলোতে ঘুরে তারা দুই প্রতিবন্ধী ভাই প্রতিভার সার্কাস প্রদর্শন করছেন।
বাওন শেখ মোহাম্মাদ মোতালেব বলেন, প্রতিভার সার্কাস প্রদর্শন করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই তার পাঁচ সদস্যর পরিবারের ভরন পোষন হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার এক মেয়ে এইচএসসি পাশ করার পর তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর মেয়ে একাদশ ও ছেলে দশম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। শারিরিক প্রতিবন্ধী শেখ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রতিভার সার্কাস খেলা শিখতে গিয়ে তার দুই পাই ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে অর্থভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি। তারপরেও তিনি প্রতিভার সার্কাস খেলা ছেড়ে দেননি। বর্তমানে তিনি একাই প্রায় বিশটি খেলা দেখাতে পারেন। তিনি আরও বলেন, তার একার আয়েই চলে চার সদস্যর সংসার।
প্রতিভার সার্কাস খেলা উপভোগ করে স্থানীয় সংবাদকর্মী হাসান মাহমুদ বলেন, একজন শারিরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মোহাম্মদ হোসেন যে আকর্ষনীয় খেলা প্রদর্শন করতে পারেন, তা যারা নিজ চোখে দেখেননি তাদের কাছে বলে বোঝানো যাবেনা। তবে তারা দুই ভাই প্রতিভার সার্কাস প্রদর্শন করতে যে পরিশ্রম করছেন, সে অনুযায়ী তারা পারিশ্রমিক পাঁচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন একেকটি এলাকায় একটি করে উন্মুক্ত সার্কাস শো পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই শো-উপভোগ করতে আসা দর্শকরা ৫ থেকে ৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধী দুইভাইকে নিজেদের ইচ্ছায় দিয়ে থাকেন। যদি কেউ টাকা নাও দিতে পারেন তার জন্য আক্ষেপ নেই খেলা প্রদর্শন করা দুই ভাইয়ের। এতে করে দেখা যায় প্রতি শো-তে স্থান ভেদে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। এরমধ্যে প্রতিদিন গাড়ি, মাইক ভাড়া ও খাওয়া বাবদ তাদের দুই হাজার টাকা খরচ হয়।