আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি মেটায় ভেষজ আমড়া


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৩ ২:৪১ অপরাহ্ণ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি মেটায় ভেষজ আমড়া
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ সবুজ রঙের গোলাকার টক-মিষ্টি মৌসুমি ফল আমড়া। বাংলাদেশের সর্বত্রই বেশ সুপরিচিত ও সমাদৃত। মৌসুমি ফল আমড়া খেলে শরীরের সাথে সাথে মনও সুস্থ থাকে। আমড়াকে বলা হয় সোনালি আপেল। দামি ফল আপেলের চেয়ে আমড়ায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বেশি।

আমড়ার বৈজ্ঞানিক নাম স্পনডিয়াস পিননাতা। এটি অ্যানাকারডিয়েসি পরিবারভুক্ত। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও আঁশ রয়েছে, যা শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি। কারণ, এসব আপনার মেরুদণ্ডকে সোজা রাখে; হজমে সহায়তা করে। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি রোগ এড়ানো যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ–জাতীয় পদার্থ ও ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। এ ছাড়া আছে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম। আরও আছে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি, ৪-৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট।

বরিশালের আমড়ার নাম-ডাক সুবিদিত। আকৃতি আর গাছে সে অন্য সব জায়গার আমড়াকে রীতিমতো টেক্কা দিয়েছে। বৃটিশ শাসনের ফলে আমরা বড় কিছু হলেই তাকে বিলেতী বলতে অভ্যস্ত। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই বিদেশাগত আমড়ার এই জাতকে সকলে আদর করে নাম দিয়েছে ‘বিলেতী আমড়া।’ প্রকৃতপক্ষে আমড়ার এই জাতটি বিলেত (ইংল্যান্ড) থেকে আসেনি, এসেছে ফিজি দ্বীপপুঞ্জ থেকে। বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় এই গাছটি জন্মে।

 

দেশীয় আমড়া ছাড়া উন্নত জাতের মধ্যে বারি আমড়া-১ (বারমাসী) নামে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উল্লেখযোগ্য। আমড়ার অনেকগুলো সমালংকৃত নাম রয়েছে- আম্রাতক, কপীতন, পীতনক, কপিচূত, অম্লবাটক, শৃঙ্গী, কর্পিরসাঢ্য, তনুক্ষীর, কপিপ্রিয়। হিন্দিতে আমড়া ছাড়াও এর অপর নাম আমত্র, বোম্বেতে আমবদ ও জঙ্গলী আম, তামিল ভাষায় দর-খাটি-মরিয়ম আর তামিলরা একে বলে ‘কত্মর’। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর আমড়ার ভরা মওসুম। আমড়ার শ্বাস সাদা ও পাকলে ফলটি তখন হলদেটে রং ধারণ করে।

 

আমরা গাছগুলো ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়, প্রতিটি যৌগিক পাতায় ৮-৯ জোড়া পত্রক থাকে, পত্রদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা এবং পত্রকগুলো ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঁচা ফল টক বা টক মিষ্টি হয়। তবে পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত। ৫-৭ বছরেই গাছ ফল দেয়। আমড়া কাঁচা ও পাকা অবস্থায় রান্না করে বা আচার বানিয়েও খাওয়া যায়।

 

আমড়ার ভেতরের অংশটি আবার শক্ত কাঁটাযুক্ত। বিশেষ ভাবে কাটা হলে, দেখতে লাগে একদম ফুলের মতো। টক-মিষ্টি স্বাদের এ অদ্ভুত ফলের গুণের কিন্তু কমতি নেই। কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি সুস্বাদু আচার, চাটনি ও জেলি তৈরি করা যায়। অনেকে তরকারি হিসেবে রান্না করে খান। বহুমুখী উপকারিতার কারণে অনেকেই নিয়ম করে আমড়া খাচ্ছেন। প্রতিদিনের দূষণভরা জীবনে সুস্থ থাকার টোটকা এখন আমড়া। জেনে নিন ভেষজ আমড়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা-

 

স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

 

হজমে উপকারী

আমড়ায় অনেক পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এ কারণে এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক কার্যকরী। এ ছাড়া হজমের কারণে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়; যেমন— গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে এটি। আর নিয়মিত খাবারের পর আমড়া খেলে তা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকটাই।

 

হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে

আমড়াতে প্রচূর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে এটি শরীরে হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। আর এর ফলে শরীরে অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া আমড়াতে শরীরের রক্তাস্বল্পতা এবং অন্যান্য রক্তের সমস্যা প্রতিরোধেও অনেক উপকারী।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা

আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্যআঁশ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২৯ ক্যালরি থাকে। তাই ওজন কমতে সাহায্য করে আমড়া। বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে আমড়া।

 

ভিটামিন সির ভালো উৎস

আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এ কারণে এটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন হাড় ও দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতসহ নানান রোগের নিরাময়ে অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া আমড়াতে থাকা ভিটামিন সি মানুষের দেহের প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে ত্বকের উজ্জ্বলতা, দৃঢ়তা বজায় রাখতে এবং ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধেও অনেক ভালো কাজ করে।

 

হাড়কে মজবুত করে

আমড়াতে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত এটি খেলে তা আপনার প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ফলে হাড়ের যে কোনো রোগ দূর করা ছাড়াও হাড়কে শক্তিশালী রাখতেও সাহায্য করে এটি।

 

মূত্রবর্ধক

আমড়ার রসে অনেক ঔষধি গুণাগুণ পাওয়া যায়। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে পর্যাপ্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে তরল বের করে দিতে সহায়তা করে। ফলে শরীর থেকে সোডিয়াম কমে গিয়ে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া এটি সর্দি-কাশি ও জ্বরের সমস্যা দূর করতেও অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।

 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

আমড়াতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। আর এ উপাদানগুলো আপনার শরীরের সিস্টেমের কারণে সহায়তা করে স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।

 

পেশিশক্তি বৃদ্ধি করে

আমড়াতে থিয়ামিন নামের একটি উপাদান পাওয়া যায়, যেটি মানুষের শরীরে পেশি সংকোচন ও স্নায়ু সংকেত সঞ্চালনে সহায়তা করে। তাই আমড়া মানুষের পেশির দুর্বলতা দূর করে তাকে শক্তিশালী করতে উপকারী হিসেবে কাজ করে।

 

রুচি বৃদ্ধি করে

যেকোনো অসুস্থতায় খাবারের রুচি অনেকটাই চলে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীকে আমড়া খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। আমড়া খেলে অরুচি অনেকটাই কেটে যায় এবং খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।

 

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।