আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বঙ্গোপসাগরে ভাসমান বাজার, মাছের বিনিময়ে বেচাকেনা


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ ২:৫৬ অপরাহ্ণ বঙ্গোপসাগরে ভাসমান বাজার, মাছের বিনিময়ে বেচাকেনা

বার্তা ডেস্ক ॥ দূর থেকে দেখে মনে হয় ট্রলারগুলো নোঙর করে চলছে যাত্রাবিরতি। কাছে আসলেই চোখে পড়ে ভিন্নতা। সারি সারি জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারের পাশেই রয়েছে ট্রলার। ট্রলারের ভেতরে চোখ যেতেই দেখা যায় নিত্য প্রয়োজনীয় রসদ। রসদ বোঝাই ট্রলারের কাছে এসে জেলে ট্রলারের মাঝিরা টাকা কিংবা মাছের বিনিময় কিনছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, শুকনা খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য। আছে জরুরি ওষুধও।

এমন ছয়টি ট্রলার নিয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর ও কলাগাছিয়া চরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে ভাসমান বাজার। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এ সব ভাসমান বাজারের প্রতি রয়েছে ক্ষোভ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে নৌপথে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সোনারচর ও কলাগাছিয়া চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগর মোহনায় রয়েছে অসংখ্য জেলে ট্রলার। তাদের সঙ্গেই বেচা-কেনা করছে ছয়টি ভাসমান রসদ বোঝাই ট্রলারের ব্যবসায়ীরা। রসদ বোঝাই ট্রলারগুলোতে রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ। এসব দোকান থেকে কেউ কিনছে নগদ টাকায় আবার কেউবা কিনছে সমুদ্র থেকে ধরা মাছের বিনিময়।

স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরের মোহনায় গড়ে ওঠা এই ট্রলারে ভেসে ভেসেই ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনা করেন। দিন গড়িয়ে রাত নামলেই বাজার জমে ওঠে। এখানে সকল ক্রেতাই সাগরে মাছ ধরা জেলে। ট্রলারে মজুদ রাখা খাবার বা জ্বালানি ফুরালেই ভিড় জমান তারা। পণ্যের দাম বাজার দামের তুলনায় একটু বেশি। তারপরও হাতের নাগালে পাওয়ায় এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করেন জেলেরা। কারণ স্থলের বাজার অনেক দূরে। সেখান থেকে মালামাল কিনতে জ্বালানি খরচ হয় বেশি। আবার সময়ও অপচয় হয় অনেক। যার কারণে এই ভাসমান বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে সঠিক সময়ে মাছ ধরতে পারছে জেলেরা।

অপরদিকে স্থল ভাগের ব্যবসায়ীদের জানান, প্রতিটি মাছ ধরার ট্রলারে সমুদ্রে যাওয়ার সময় যে সকল রসদ নিয়ে যায় সেসব টাকা মাছ বেচা-কেনা করে পরিশোধের শর্তে নিয়ে থাকে। কিন্তু জেলে ট্রলারগুলো তীরে না এসে সমুদ্রের মোহনায় মাছ বিক্রি করে ওখান থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নগদ টাকায় কিনে আবার চলে যায় মাছ ধরতে। যার কারণে বাকিতে বিক্রির টাকাতো পাচ্ছেই না অন্যদিকে প্রতিদিনের বেচাকেনাও হচ্ছে না। সাগর মোহনায় যে সব দোকান রয়েছে তারা শুধু মৌসুম সময়টুকু ব্যবসা করে চলে যায়। কিন্তু স্থানীয় জেলেরা সুসময়ে তাদের কাছে না আসলেও বেকার সময়গুলোতে বাকিতে মালামাল নিয়ে থাকে। এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তীরের ব্যবসায়ীদের।

রহমান নামে এক জেলে বলেন, ট্রলারের রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ভাসমান দোকানে আইছি। সাগরে মাছ ধরার সময় মালামাল কেনা লাগে। সাগরে থাকতেও কেনা লাগে। মাঝে মাঝে তেল ফুরাইয়া যায়। কূলে আসা সময়ের ব্যাপার। এখানে কয়েকটি দোকান আছে। যার কারণে আমাদের কুলে যাওয়া লাগে না। এখানকার দোকানগুলোতে মালামালের দাম একটু বেশি। তারপরেও সাগরে বিপদের সময় এই দোকানই আমাদের প্রয়োজনে আসে।

সাগর মোহনায় ভাসমান দোকান ব্যবসায়ী মো. মনির বলেন, সাগরে গিয়ে অনেক সময় জেলে ট্রলারে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ফুরিয়ে যায়। তেল শেষ হয়ে যায়। তখন বিপদে পড়েন জেলেরা। তখনই আমাদের থেকে বেচা-কেনা করে। আবার জেলেরা নগদ টাকার পাশাপাশি মাছের বিনিময়েও মালামাল কিনে থাকেন। তাদের কথা ভেবে এই দোকান। আমাদের এই ভাসমান দোকানগুলো না থাকলে অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে রসদ সংগ্রহ করতে হতো তাদের। তবে আমরা কোনো মালামালের দাম বেশি নেই না। আমাদের এ সেবায় জেলেরা অনেক খুশি।

বন বিভাগের সোনারচর বিট কর্মকর্তা মো. রাজ্জাক বলেন, সাগরের মোহনায় মৌসুমভিত্তিক গড়ে ওঠা ভাসমান বাজারে কোনো ভয় নেই। গভীর সমুদ্রে ভয় থাকে, যার কারণে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এখানে কয়েক’শ জেলে ট্রলার নোঙর করে থাকে। পাশাপাশি জেলেরা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করেন। এখন পর্যন্ত সাগর মোহনায় গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-includes/functions.php on line 5349

Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/dailyajkerbarta/public_html/wp-content/plugins/really-simple-ssl/class-mixed-content-fixer.php on line 107