আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

স্বরূপকাঠিতে ইকথায়োসিস আক্রান্ত ৮ জন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ ২:১০ অপরাহ্ণ স্বরূপকাঠিতে ইকথায়োসিস আক্রান্ত ৮ জন
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ ‘কোনো অনুষ্ঠানে গেলে কেউ আমাদের পাশে বসতে চায় না। কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। আমাদের দেখলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যা দেখে ভীষণ কষ্ট পাই। বাবা নেই। জীবিকার তাগিদে মা ভিক্ষা করেন। টাকার অভাবে মা চিকিৎসাও করাতে পারছে না।’

কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিল ইকথায়োসিস রোগে ১২ বছর বয়সী আক্রান্ত মারিয়া। তার দুই বোনও এই রোগে আক্রান্ত। মারিয়া পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল গ্রামের বাসিন্দা।

একই গ্রামের ইকথায়োসিস আক্রান্ত মামুন ফরাজি এবং তার বোন তুহিন খানমও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। দুই পরিবারের ৫ জনসহ উপজেলায় ইকথায়োসিস রোগে আক্রান্ত মোট ৮ রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন বিশ্বাস।

৬০ বছর বয়সী তুহিন খানম বলেন, আমি জন্ম থেকে এই রোগ আক্রান্ত। আমার চলতে ফিরতে সমস্যা হয়৷ এক জায়গায় বসে থাকলে উঠতে কষ্ট হয়। ৫০০ টাকা দামের একটা ক্রিম লাগাই। তাহলে শরীরটা একটু নরম থাকে। তখন একটু হাঁটতে পারি। শীতকাল আসলে হাত-পা বেশি ফেটে যায়। আমার আপন ভাই মামুন ফরাজিও একই রোগ আক্রান্ত।

মারিয়ার মা মর্জিনা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি থাকি। বড় মেয়ে মারিয়া (১২), মেঝ মেয়ে মুনিয়া (৮) ও ছোট মেয়ে তোহা মনি (৩) জন্ম থেকেই এই রোগে আক্রান্ত।

তিনি আরও বলেন, বড় দুই মেয়ে উপজেলা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। অভাবের সংসারে ভিক্ষা করেই জীবন চালাই। টাকার অভাবে ওদের  কোনো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। মা হয়ে সন্তানদের কান্না আর সহ্য পারছি না।

সাহায্য পেলে ঢাকায় নিয়ে সন্তানদের বড় ডাক্তার দেখাতে চান মর্জিনা বেগম।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, ইকথায়োসিস ত্বকের একটি রোগ। জন্মগত বা বংশগতভাবেও এই রোগও হতে পারে। এই রোগে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ, ফাঁটা আঁশের মতো হয়ে থাকে। সমস্ত শরীর ফেঁটে যায়, শুকিয়ে চামড়া উঠে যায়।

তিনি বলেন, পরিবারের একজনের এ রোগ থাকলে অন্যদেরও হতে পারে। আবার সকলের নাও হতে পারে।

ফিরোজ কিবরিয়া আরও জানান, ২৫ ধরনের ইকথায়োসিস রোগ রয়েছে। তবে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘ইকথায়ওসিস ভালগারিস’ নামে জন্মগত রোগ হিসেবে এটি প্রকাশ পায়। প্রথম বছরই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। এই রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই।

তবে চামড়া শুকিয়ে গেলে ক্রিম, লোশন, ভিটামিন ওষুধ খেলে সাময়িক উপসম পাওয়া যায় বলে ডা. ফিরোজ কিবরিয়া জানান। তিনি আরও জানান, এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও সাময়িক সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে এ রোগ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান ও ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সহয়তায় এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মর্জিনা বেগমের পরিবারকে সামান্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো সকলকে সহায়তা করব।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী বলেন, অনেক ধরনের ইকথায়োসিস রোগ আছে। এর মধ্যে কোনটি বংশগত। তবে বায়োপসি করে তা নির্ণয় করতে হবে। এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। তবে ওষধের মাধ্যমে সাময়িক ভালো থাকা যায়।