আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বরিশালে একবছরে ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ বরিশালে একবছরে ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন
Spread the love

গত অর্থবছরে বরিশাল অঞ্চলের পল্লী এলাকায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪টি প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

বরিশাল অঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় সেতু, কালভাট নির্মান, খাল ও পুকুর খনন, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মান, গ্রোথ সেন্টার ও হাট-বাজার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সাইক্লোন শেল্টার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মান ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সমূহের সংরক্ষনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পল্লী সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংরক্ষন নিশ্চিত হয়েছে। ফলে একসময়ের পিছিয়ে পরা বরিশাল অঞ্চলের দুর্গম এলাকায়ও এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি তরান্বিত হয়েছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুরদর্শী পরিকল্পনায়।

এলজিইডি বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ  বলেন, গত অর্থ বছরে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ৪২টি উপজেলায় ৬৪টি প্রকল্পের বিপরীতে সরকার ও দাতা সংস্থার তহবিল থেকে বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই ব্যয়সহ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছরে বিভাগের ৬৪টি প্রকল্পের বিপরীতে সরকারের বিভিন্ন তহবিল থেকে মোট বরাদ্দের পরিমান ছিল ২ হাজার ১১৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়সহ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সমূহ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজগুলো চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজিকরণের জন্য বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পল্লী এলাকার সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের আওতায়ই শুধু ১৯৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিপুল সংখ্যক পল্লী সড়ক অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডি বরিশাল বিভাগে গত প্রায় ১৫ বছরে ২ হাজার ১৪০ কিলোমিটার পল্লী সড়ক উন্নয়ন ছাড়াও ১ হাজার ৬৬৫ কিলোমিটার সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এসময়ে  বরিশাল অঞ্চলে ১শ’ মিটারের ওপরে প্রায় চার হাজার বৃহৎ সেতু নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। একইসাথে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংরক্ষনকারী দপ্তরটি বরিশাল অঞ্চলে আরো ১৪ হাজার ২৮৯টি সেতু ও কালভার্ট নির্মান করেছে। এলজিইডি বরিশাল অঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় আটটি নতুন  উপজেলা পরিষদ ভবন ছাড়াও ৫৬টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স এবং ৫১টি নতুন হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টারের নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। ৯৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অবকাঠামো নির্মান ছাড়াও ক্ষুদ্র পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সৃষ্টির লক্ষে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মান করেছে। পাশাপাশি ছয়টি স্লুইজ গেট ও রেগুলেটরও নির্মান করা হয়েছে। ৫১২ কিলোমিটার খাল খনন, আর্সেনিকযুক্ত ও লবনাক্ত এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য এলজিইডি বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ৬০টি পুকুর খনন করে দিয়েছে। দুর্যোগ প্রবন বরিশাল অঞ্চলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ১৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান ছাড়াও পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী-৩’এর আওতায় সাড়ে ৩ হাজার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

এছাড়া বরিশালে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষনা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-বারটন’র ভবন নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাথে মুলাদী হয়ে হিজলার সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টির লক্ষে কুতুবপুর নামক এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ৬৯২ মিটার দৈর্ঘের একটি ‘পিসি গার্ডার টাইপ’ ব্রীজ নির্মান কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। প্রায় ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫শ’ মিটার সংযোগ সড়কসহ এ সেতুটির নির্মান কাজ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবার কথা রয়েছে।

এলজিইডির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি ২০৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ১০ হাজার ৯৩১ কিলোমিটার পল্লী সড়ক উন্নয়ন ও আট হাজার ২১ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও যা নির্মান করা হয়েছে-একশ’ কিলোমিটারের বৃহৎ সেতু ৯ হাজার ৩৫২টি। সেতু ও কালভার্ট ৭৫ হাজার ৯৪২টি। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ৩৫টি, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ১৭৯টি, গ্রোথ সেন্টার ২৮৭টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা অবকাঠামোর সংখ্যা ৩ হাজার ৭৬৩টি, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এক লাখ ১১ হাজার ১২৫ হেক্টর, স্লুইজ গেট ও রেগুলেটর সংখ্যা ৪৪টি, খাল খনন এক হাজার ৯৯১ কিলোমিটার, পুকুর খনন করা হয়েছে ৪৫৫টি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মান করা হয়েছে ৩৮টি, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা নিবাস ২৪৫টি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ৭৬টি, সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এক হাজার ৫৯৬, পিটিআই ভবন, হোস্টেল এবং কোয়ার্টার একটি। পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষন কর্মসূচি-৩ ও এলসিএস মহিলা কর্মীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮০৯ জন। সাইক্লোন শেল্টার ৬৩৭টি, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) এর ভবন তিনটি। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘর ২৪টি। ১০ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ছয়তলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সম্প্রসারিত অফিস ভবন (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় একটি এবং ১৮টি ঘাটলা নির্মান করা হয়েছে।