বার্তা ডেস্ক: রাক্ষুসী আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওইসব গ্রামের হাজারো মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষার প্রথমদিক থেকে ভাঙন শুরু হলেও ভাদ্রের শেষে ভাঙনের ভয়াবহতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদী তীরের চাষাবাদের জমি, গাছপালা, সড়ক ও বসতঘর নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ মীরগঞ্জ ফেরীঘাট সংলগ্ন দুইটি ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের চলাচলের সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ নদী গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে রহমতপুর ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গত ১০দিন ধরে ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা ছোট ট্রলারে বিলীন হয়ে যাওয়া এলাকা পাড়ি দিলেও বিকল্প চলাচলের কোন ব্যবস্থা হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয়রা জমি দিলে ওই অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী, লোহালিয়া গ্রাম এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রামের অনেকাংশ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছোট মীরগঞ্জ ভাঙনের মুখে পরায় পিছনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর ও ভবানিপুর গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
লোহালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজু মাতুব্বর বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে আমাদের পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে এখানে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার দাবি করে আসছিলাম। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বালুর বস্তা ফেলেই দায় এড়িয়েছে। রাক্ষুসী নদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বস্তাসহ সব ভেঙে নিয়ে গেছে। ফলে এখন আমাদের চলাচলের কোনো উপায় নেই।
রাসেল ফরাজী নামের এক যুবক বলেন, মীরগঞ্জ ফেরীঘাট এলাকা, সিংহেরকাঠি, লোহালিয়া, কালিকাপুর, ভবানীপুর, রফিয়াদি, ছোট মীরগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রতিবছরই নদী ভাঙন দেখা দেয়। আর ভাঙন দেখা দিলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক বস্তা বালু ফেলে চলে যায়। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান করা হোক। নদী ভাঙনের জন্য আমরা কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ এখন পথে বসার অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙনের কারণে পাঁচটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছেন না। এমনকি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়াও কস্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) মীরগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনের স্থানে বিকল্প একটি বাঁধ তৈরি করা হবে। এজন্য জমির প্রয়োজন। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তিনি গ্রামবাসীর সাথে বসে জমির ব্যবস্থা করলেই দ্রুততার সাথে কাজ শুরু করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, মীরগঞ্জের ভাঙনেরস্থানে তাদের স্থায়ী বাঁধের পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জমি চাওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী বাঁধের জন্য জমি দিলে ভাঙনস্থান থেকে তিনশ’ ফুট ভিতর দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
অপরদিকে সন্ধা নদীর উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের চতলবাড়ি এলাকার নদী ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন, ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নদীর ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে।