আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলনে ও হাসি নেই চাষিদের মুখে


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৩ ৩:০৪ অপরাহ্ণ কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলনে ও হাসি নেই চাষিদের মুখে
Spread the love

পুষ্টিকর ফল আমড়ার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। মৌসুমে বাজার ছাড়াও পথে পথে প্রচুর বিক্রি হয় এই আমড়া। এটি একটি অর্থকরী ফল হিসেবেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে আমড়ার চাষ ও উৎপাদন।

পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় চলতি মৌসুমে গত দু’বছরের তুলনায় আমড়ার ফলন ভাল কিন্তু আমড়া চাষিদের মুখে সেই হাসির রেখাটি বিস্তৃত নয়। কৃষি অধিদফতরও বলছে, এবার কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফল হয়েছে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল আমড়ার ইংরেজি নাম গোল্ডেন অ্যাপেল। বিভিন্ন লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাসে আর রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের সর্বত্রই প্রতিনিয়ত হকারদের ডাক শোনা যায় লাগবে বরিশালের আমড়া। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এর ফলন বেশি বিধায় বরিশালের আমড়া বলেই পরিচিতি বেশি। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলাসহ স্বরুপকাঠী ও নাজিরপুরে আমড়া আবাদ হয় বেশি। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে আমড়ার চাষ হয়।

ওই এলাকায় এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে কম করে হলেও একটি আমড়া গাছ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ির উঠোনে একটি আমড়া গাছ লাগানো যেন প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ পতিত জমি কেটে আইল তৈরি করে, আবার কেউ কেউ ফসলী জমিতে আমড়ার বড় বড় বাগান সৃষ্টি করেছেন। কোন কোন চাষীর বাগান  থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় হয়।

শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পরিপক্ক আমড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় আমড়া কেনা-বেচার বেপারি রয়েছে। তারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কুড়ি দেখেই আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে ফেলেন। আবার অনেক চাষি ভরা মৌসুমে নিজেরাই বাজারে আমড়া বিক্রি করেন। আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গাছ থেকে আমড়া পেড়ে বাজারে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়। কাউখালী উপজেলার লঞ্চঘাট,দক্ষিণ বাজার,বেকুটিয়া, নতুনবাজারসহ বিভিন্ন বড় বাজারে রয়েছে আমড়ার আড়ৎ।

ওই সব আড়তে বেপারীদের কাছ থেকে আমড়া কিনে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, এলাকায় চালান করা হয়। সেখানে আড়তদাররা বিভিন্ন মোকামের খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের কাছে আমড়া বিক্রি করে।

কাউখালীর বাশুরী গ্রামের ইমাম হোসেন বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া উৎপাদনকারী গৃহস্থরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও আমড়া বেচা-কেনার মুনাফার পুরোটা ঢুকে না চাষিদের পকেটে। সে কারণেই আমড়া চাষিরা বাম্পার ফলনে খুশি হয়েও যেন খুশি নন।

বেপারীরা গৃহস্থদের কাছ থেকে এক বস্তা আমড়া ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় কিনে কাউখালী মোকামে বিক্রি করে থাকেন ১২ থেকে ১৪০০ টাকায়। কাউখালী থেকে ঢাকায় বিক্রি হয় ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

কাউখালীর আড়তদাররা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও ভাদ্র মাসের প্রথম থেকেই আমড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলন বেশি হওয়ায় প্রতিদিন দেড়শ থেকে ২ শত মণ আমড়া বস্তা ভরে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।

আড়তদাররা আরও জানান, কাউখালীতে আমড়ার আড়ৎ খুলে সেখান থেকে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ট্রাক, পিকআপে লঞ্চেও ঢাকা,চাদপুর নিয়ে যায়। সেখান থেকে কাঁচা আমড়া বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

কাউখালী উপজেলা কৃষি উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোমা রানী দাস বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমড়া চাষিদের সব রকমের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর ভাল ফলন পেয়েছে চাষিরা। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছরই আমড়ার ফলন বাড়ছে।