আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

বারিশালে নিঃসন্তান দেখিয়ে চাচার সম্পত্তি আত্মসাত


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩ ১:৩৬ অপরাহ্ণ বারিশালে নিঃসন্তান দেখিয়ে চাচার সম্পত্তি আত্মসাত
Spread the love

বার্তা ডেস্ক দুই ছেলে ও পাঁচজন মেয়ে থাকার পরেও আপন চাচাকে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু দেখিয়ে অঢেল সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে অধিকাংশ জমি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জেলার উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কুড়লিয়া গ্রামের।

সোমবার সকালে সরেজমিনে জানা গেছে, চাচাতো ভাইরা কর্মের সুবাদে প্রবাসে থাকায় ও চাচাতো বোনরা তাদের শ্বশুড় বাড়িতে থাকায় আপন চাচাতো ভাই বিজন কুমার হালদার প্রতারনার মাধ্যমে তার চাচা মৃত দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারকে নিঃসন্তান দেখিয়ে তার পুরো সম্পত্তি নিজের (বিজন) নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়। এমনকি বিজন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে নিজের আপন ছোট ভাই বিবেকানন্দ হালদারকেও বঞ্চিত করেছেন। বিএস রেকর্ডে ছোট ভাই বিকেকানন্দর নাম না রেখে শুধু নিজের নামে পুরো সম্পত্তি রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। এনিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে মৃত দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বরিশাল সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জমি বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম ইশমাম।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতারনার মাধ্যমে নিজের ভাই ও চাচাতো ভাইদের সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে ইতোমধ্যে সুচতুর বিজন কুমার হালদার দুই তৃতীয়াংশ জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজ বসত বাড়িসহ বাকি সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা নিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পায়তারা করছেন অভিযুক্ত বিজন। অতিসম্প্রতি তিনি (বিজন) বসত বাড়ি বিক্রির বায়না চুক্তি হিসেবে ২২ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। এদিকে চাচাতো ভাইদের জমি উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি বরিশাল সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভূমির মালিক দ্বিপঙ্কর হালদার বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে ওই সম্পত্তি বেচা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, কুড়লিয়া গ্রামের বাসিন্দা দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদার ও বিশ্বেস্বর হালদার দুই ভাই এসএ রেকর্ডিয় সম্পত্তির মালিক। এদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারের ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে এবং বিশ্বেস্বর হালদারের ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে প্রদীপ হালদার ও দ্বীপঙ্কর হালদার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য আপন চাচা বিশ্বেস্বরের ছেলে বিজন হালদার ও বিকেকানন্দ হালদারকে দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমান। কয়েক বছর আগে বিজেন হালদারের আপন ছোট ভাই বিবেকানন্দ হালদারও প্রবাসে পাড়ি জমান। এ সুযোগে জমির বিএস রেকর্ড শুরু হওয়ার পর বিজন কুমার হালদার তার বড় চাচা দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারকে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু দেখিয়ে চাচাতো ভাইদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে চাচার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। শুধু চাচাতো দুই ভাই প্রদীপ ও দ্বীপঙ্কর হালদারকে বঞ্চিত করেই ক্ষ্যান্ত হননি বিজন। তার আপন ছোট ভাই বিবেকানন্দ হালদার দেশের বাহিরে থাকায় পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন বিজন।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, বিজন হালদারের দুই ছেলে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চাকদাহে বসবাস করছেন। সে সুবাধে ইতোমধ্যে চাচার দুই তৃতীয়াংশ ও নিজের সম্পত্তি মিলিয়ে প্রায় ৩০ বিঘা জমি বিক্রি করে বিজন কয়েক কোটি টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করেছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা টাকায় সেখানে বিশাল অট্টালিকা ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। সবশেষ তার বসত বাড়ি কুড়লিয়া বাজারের ব্যবসায়ী হরলাল সমদ্দারের কাছে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। বায়না চুক্তির পর দুইবছর পূর্বে ওই টাকা পরিশোধ করার পরেও হরলালের কাছে আরও চার লাখ টাকা দাবি করেন বিজন। ওই চার লাখ টাকা পরিশোধ না করায় বিজন জমির দলিল দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে পূর্ণরায় বাড়িটি অন্যত্র বিক্রির পায়তারা শুরু করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে বিজন কুমার হালদারের ব্যবহৃত (০১৭০৬-৬৩৮২৮৮) মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার পর তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করার পরেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে উজিরপুর উপজেলা সাব রেজিস্টার ইমরান খান জানান, বিজন হালদার নামের ওই ব্যক্তি গত কয়েকদিন পূর্বে জমির দলিল দিতে এসেছিলেন। কিন্তু বিজন কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি ওই সম্পত্তি দলিল করেননি।