আজকের বার্তা
আজকের বার্তা

‘সরবরাহ কম’ তাই বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি


আজকের বার্তা | প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৩ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ ‘সরবরাহ কম’ তাই বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি
Spread the love

বার্তা ডেস্ক ॥ বিভাগজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে, আবার কখনো কমছে। তবে শঙ্কা যেটি বাড়িয়েছে তা হলো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা।বছরের প্রথম ৭ মাসে যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১১, সেখানে শুধু আগস্টের ২৩ দিনে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। অর্থাৎ ৭ মাসের দ্বিগুন মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২৩ দিনে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বরিশাল ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সক্ষমতার বেশি রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘স্যালাইন’।

নগরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, শেবাচিমে রোগী ভর্তির পর অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় পার না হলে রোগী স্যালাইন পায় না। নতুন ভর্তি হলে বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। হাসপাতালের আশপাশ ও নগরের কোনো ফার্মেসিতে এখন স্যালাইন ‘নেই’। মূলত সরবরাহ কমের অজুহাতে বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি করতে কয়েকটি সিন্ডিকেট এ কাজ করছে।

সূত্রের তথ্য মোতাবেক মো. মহসিন নামে শেবাচিমের একটি ওয়ার্ড সেবকদের ইনচার্জকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, চাহিদার অর্ধেক পাওয়া গেলেও হাসপাতালে প্রতি রোগীকে একটি করে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বেশি প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কি সিদ্ধান্ত নেয় প্রশ্ন করা হলে মহসিন কোনো উত্তর দেননি।

নিপা বিশ্বাস নামে শেবাচিমের নতুন একটি ভবনের ইউনিট সেবিকা জানিয়েছেন, প্রতিদিন একজন রোগীকে একটি করে নরমাল স্যালাইন দেওয়া যায়। কিন্তু একেকজনের প্রতিদিন তিন-চারটি করে প্রয়োজন হলে সেটা দেওয়া সম্ভব হয় না।

অবশ্য কামরুল আহসান নামে রোগীর এক স্বজন জানিয়েছেন, হাসপাতাল না দিলে বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকেও বাইরে থেকে কিনে আনার কথা বলা হয়। এটি রোগীদের জন্য ভোগান্তির। তারা তো টাকা নেবেই। হাসপাতাল থেকে দিলে কী ক্ষতি হয়? এখন আবার ডেঙ্গু বাড়ছে-রোগী বাড়ছে-সরবরাহ কম থাকায় নাকি বাইরের দোকানে স্যালাইন কম। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফার্মেসিগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য প্রথমে ইনফিউশন (এনএস) স্যালাইন দিতে হয়। সেই স্যালাইন সবার কাছে সরবরাহ নেই। নরমাল স্যালাইন হিসেবে পরিচিত এ স্যালাইনের বর্তমানে কোনো সরবরাহই নেই বলে জানিয়েছেন অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী।

রাহাত মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসির কর্মী বাংলানিউজকে জানান, সরবরাহ নেই বলে সবার কাছে স্যালাইন বিক্রি সম্ভব না। নরমাল স্যালাইন বলতে রোগীদের এনএস, এইচএস, ডিএনএস ও ০.৫ ডিএ প্রয়োজন। কিন্তু এগুলোর সরবরাহ কম। বুধবার (২৩ আগস্ট) মাত্র এক কেস স্যালাইন পেয়েছি। দোকান খোলার সাথে সাথেই সব বিক্রি হয়ে গেছে।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ফার্মেসিতে গিয়ে স্যালাইনের খোঁজ করলে ‘নাই’ বলে জানানো হয়। কিন্তু ফার্মেসিগুলোয় স্যালাইন আছে। গাড়ি করে দিয়ে যায়। কিন্তু ফার্মাসিস্টরা সময়-সুযোগ বুঝে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। যারা পারছে তারা কিনছে। সমস্যা হচ্ছে গরিবদের। তারা তো বেশি টাকায় নরমাল স্যালাইন কিনতে পারছে না।

আরেক স্বজন জানিয়েছেন, শুধু শুধু স্যালাইন কিনতে গেলে পাওয়া যায় না। যারা ওষুধসহ কিনতে যাচ্ছেন তারা পাচ্ছেন। এ কেমন বিচার?

সালাম নামে একজন জানান, নরমাল স্যালাইনের দাম ৯০ টাকা। অনেকে বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন শুনে আমিও এক দোকানিকে বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিতে চেয়েছি। তিনি আমার কাছ থেকে ১৪০ টাকা রেখেছেন। অর্থাৎ গায়ের দামের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি।

সাকিব নামে এক ফার্মেসি মালিক বলেছেন, সরবরাহ কম থাকায় অনেকে বিভিন্নভাবে স্যালাইন এনেছে। কেউ বাড়তি পয়সা খরচ করে কিনে এনেছে। বিক্রি সময় বেশি দামে করবে তা স্বাভাবিক। শুনেছি কিছু ফার্মেসি ঢাকা থেকেও স্যালাইন এনে বিক্রি করে। এতে করে দাম তো বেশি হবেই।

নুবা ড্রাগ হাউজ নামে বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসি মালিক সোহেল বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছেন, গত ২০ দিন ধরে নরমাল স্যালাইন নেই। কোথাও পাওয়া যায় না। হাসপাতালেও সরবরাহ কম। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি। একশ রোগীকে ১০০টি করে দিলে প্রতিদিনের হারে স্যালাইন কমবেই। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

দেশের বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি নরমাল স্যালাইন উৎপাদন করে। তারপরও সরবরাহ কেন কম- সে উত্তর নেই নগরের কোনো ফার্মেসি মালিকের কাছে। চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে জানেন না। তাই তারাও কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নন।

স্যালাইন নাই বা সরবরাহ কমের ব্যাপারে কোনো দায়িত্বশীল বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। রোগীর স্বজনরা বলছেন সিন্ডিকেটের কথা। এ বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি কথা বলেননি।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল অবশ্য ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যাপারে বলেছেন। তার দাবি, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। রোগী ভর্তি হচ্ছে তারা পরিপূর্ণ সেবা পাচ্ছে। এসব হাসপাতালগুলো থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার সংখ্যাটাও কম নয়। অন্যান্য যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।